রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ৯ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
কৃষি জমি সুরক্ষার বিষয়টি আইন করেই বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে সেখানে নানা ধরনের স্থাপনা, শিল্প-কারখানা এবং পুকুর খনন করে মাছ চাষ করা হচ্ছে। রাজশাহীতে কৃষি জমির শ্রেণিবদলের ঘটনা এখন ব্যাপকভাবেই হচ্ছে। এ নিয়ে অনুচ্চ স্বরে প্রতিবাদ হচ্ছে বটে তবে তা সংশ্লিষ্টদের গোচরে আসছে না কিংবা তারা বিষয়টি গোচরে নিচ্ছেন না। অর্থাৎ এই বেআইনি কাজটি বন্ধের তেমন উদ্যোগ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে না। ফলে এই প্রবণতা আরো বেশি করে উৎসাহিত হচ্ছে। রাজশাহী অঞ্চলে কৃষি জমি খনন করে পুকুর সৃষ্টির প্রবণতা আশংকাজনক হারে বাড়[ছে- যা মৎস্যচাষে ব্যবহার হচ্ছে।
দৈনিক সোনার দেশে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন জুড়ে অবস্থিত বিলপাতিকুলা ও বামলাহাল এলাকায় ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ধানি জমিতে পুকুর খনন করায় ইতোমধ্যেই ৫০০ বিঘা জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে। স্থানীয় কৃষকদের বাধা সত্ত্বেও এখনো পুকুর খনন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী এক বছরের মধ্যেই ওই এলাকার প্রায় সাত হাজার বিঘা জমি অনাবাদি হয়ে পড়বে। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে কৃষকরা অভিযোগ করেন, স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একাধিকবার ৫০০ কৃষক পুকুর খনন বন্ধের দাবিতে আবেদন করলেও তাতে কর্ণপাত করে নি প্রশাসন।
এই পরিস্থিতি শুধু যে গোদাগাড়ী উপলোতেই তা নয়Ñ রাজশাহী জুড়েই এই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মৎস্যচাষে অধিক লাভ হওয়ায় কৃষি জমি লিজ কিংবা কিনে নিয়ে পুকুর তৈরি করা হচ্ছে। ওই সব পুকুরের জীবন্ত মাছ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়। অনেক ব্যবসায়ীই এদিকে ঝুঁকছে। কিন্তু এদিকে ঝুঁকতে গিয়ে কৃষি জমির সর্বনাশ হচ্ছে- যা এই অঞ্চল তথা দেশের খাদ্য নিরাপত্তর জন্যই এক ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে।
পবা উজেলা এলাকায় কৃষিজমি পুকুরে রূপান্তরিত করে মাছ চাষের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার বিক্ষোভও হয়েছে কিন্তু প্রতিকার পাওয়া যায়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পরও পরিস্থিতির কোনো হেরফের হয়নি। আইনের প্রয়োগ ছাড়া যে বিষয়টি সুরাহা হবে না তা বেশ স্পষ্ট। মৎস্যব্যবসায়ীরা যে ভাবেই হোক সবদিক ম্যানেজ করে নিতে পারছে। যদিও কৃষি জমির শ্রেণি বদলে রাজনৈতিক প্রভাবও রয়েছে। স্থানীয়ভাবে জনপতিনিধিরা বিশেষ করে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরাও এ ব্যাপারে উদাসীনতা দেখিয়ে চলেছে। এ ক্ষেত্রে তাদের উদ্যোগ থাকা খুবই বাঞ্ছনীয় ছিল কিন্তু রহস্যজনক কারণে জনপ্রতিনিধিরা আইনবিরোধী তৎপরতা বন্ধে এগিয়ে আসছেন না। বরং তারাই জনমত গঠন করে প্রশাসনকে চাপ সৃষ্টি কিংবা সহায়তা করতে পারতেন। কিন্তু কোনো পক্ষই এই আত্মঘাতী প্রবণতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন না। যারা হচ্ছেন তারা সমাজের প্রভাবশালী অংশ নয়Ñ স্বাভাবিকভাবেই তাদের প্রতিবাদ হারিয়ে যাচ্ছে।
কৃষিজমির শ্রেণি বদলের ক্ষতি আপাতভাবে কৃষকের মনে হলেও এর প্রভাব আমাদের সকলকেই ভোগ করতে হবে। এ ব্যাপারে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, পরিবেশকর্মীসহ নাগরিক সংগঠনগুলোসহ সকলেরই উচ্চকিত হওয়ার সময় এসেছে।