কৃষি পণ্যে সিন্ডিকেটের ব্যাপারে সজাগ থাকার আহ্বান কৃষিমন্ত্রী

আপডেট: মে ১৭, ২০২৪, ১১:৩৫ অপরাহ্ণ

কৃষি পণ্যে সিন্ডিকেটের ব্যাপারে সজাগ থাকার আহ্বান কৃষিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক:


কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুস শহীদ বলেছেন, কৃষি পণ্য নিয়ে সিন্ডিকেট যেন না হয় সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কৃষক আম নিয়ে যেন সঠিক মূল্য পান এবং ভোক্তা যেন নায্য মূল্য আমসহ কৃষি পণ্য পান সেদিকে সকলকে নজর রাখতে হবে।
শুক্রবার (১৭ মে) দুপুরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কুমরপুর গ্রামে আম বাগান পরিদর্শন ও কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুস শহীদ বলেন, ভারত, চীন, রাশিয়া ও বেলারুশ রাজশাহীর আম নিতে আগ্রহী। দ্রুতই চীনের একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহীর আম দেখতে আসবে। আমরা বেশি পরিমাণ আম রফতানির চেষ্টা করছি। তাই এই দলটির সঙ্গে ঠিকমত কথা বলে আমের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। এক্ষেত্রে কিছু কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আম রফতানির জন্য ২৫০-৩০০ কৃষককে সহায়তা করা হয়েছে। রপ্তানির জন্য রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম গ্রেডিং শেড এবং ট্রিটমেন্ট প্লান্ট করা হচ্ছে।

এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মাইকেল জন ওয়েবস্টের ও কোকাকোলা বাংলাদেশ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জু-উন নাহার চৌধুরী।
এর আগে, মন্ত্রী সোনাদীঘি গ্রামের কৃষক রাতুলে ফার্মে মাটিবিহীন চারা উৎপাদন, ই-ফারমিং, ভার্মি কম্পোস্ট, বাসতবাড়ি বাগান ও কৃষি ক্ষেত পরিদর্শন করেন। বাগানটিতে বিশ্ব ব্যাংক, বেসরকারি সংস্থার ডাসকো, কোকাকোলা বাংলাদেশ লিমিটেড ও সিনজেনটার সহযোগিতায় উন্নত প্রযুক্তিতে আম চাষ করা হচ্ছে।

এছাড়া, মন্ত্রী গোদাগাড়ীর বিজয়নগর এলাকায় পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তিতে ধান চাষও পরিদর্শন করেন। এরপর সোনাদীঘি এলাকায় তিনি নার্সারিতে উন্নত প্রযুক্তিতে চারা উৎপাদন পদ্ধতি পরিদর্শন করেন। এ সময় মন্ত্রীর সাথে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুস শহীদ, এমপি বলেছেন, বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। এ দেশের কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। ভূমি খালি রেখে দেশ রক্ষা সম্ভব নয়, তার জন্য কৃষকদের যা সহযোগিতা লাগবেÑ সার, পানি ও হারভেস্ট তা সময় মতো ব্যবস্থা করার কোনো বিকল্প নেই।
এর আগে বাগান পরিদর্শনকালে কৃষিমন্ত্রী আবদুস শহীদ বলেন, এবার আমের উৎপাদন কম হয়েছে। তাই আম নিয়ে সিণ্ডিকেট হতে পারে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কৃষক যেন সঠিক মূল্য পান, সেটাই লক্ষ্য। সিন্ডিকেট আমরা হতে দেব না। কিন্তু সিন্ডিকেট যারা করে, সব সমাজেই তাদের সম্পর্ক আছে।

তিনি সাংবাদিকদের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বেশি বেশি লেখার আহবান জানিয়ে বলেন, আপনারা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে লেখেন বেশি করে৷ কথা বলেন বেশি করে।
সংরক্ষণের অভাবে প্রচুর আম নষ্ট হওয়ার ব্যাপারে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আম পচনশীল পণ্য। একটা পার্সেন্টেজ আম নষ্ট হবেই। আমরাও চাই আম কিছু সময়ের জন্য সংরক্ষণ করতে। অন্যান্য কৃষিজাত পণ্যও সংরক্ষণ করতে চাই। সেজন্য দেশের ৮ বিভাগে ৮টি কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ করতে চাই৷ তবে এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, অনেক টাকার দরকার। আমরা দেশি-বিদেশি সহযোগিতায় এটা করতে চাই।
এর আগে মন্ত্রী গোদাগাড়ীর বিজয়নগর এলাকায় পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তিতে ধান চাষ পরিদর্শন করেন। এরপর সোনাদীঘি এলাকায় তিনি নার্সারিতে উন্নত প্রযুক্তিতে চারা উৎপাদন পদ্ধতি পরিদর্শন করেন। এ সময় মন্ত্রীর সাথে কৃকৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কৃষক বাঁচলে, দেশ বাঁচবে :
কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুস শহীদ, এমপি বলেছেন, বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। এ দেশের কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। ভূমি খালি রেখে দেশ রক্ষা সম্ভব নয়, তার জন্য কৃষকদের যা সহযোগিতা লাগবে- সার, পানি ও হারভেস্ট তা সময় মতো ব্যবস্থা করার কোনো বিকল্প নেই।

শুক্রবার (১৭ মে) বিকালে রাজশাহী সার্কিট হাউজ সম্মেলনকক্ষে `Water-Efficient Futures: Scaling Agricultural Interventions in the Water-Scarce Barind Region’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত সকল সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের এক হয়ে কাজ করতে হবে। কৃষদের ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করতে হবে। প্রত্যেক এলাকার মাটি পরীক্ষা করে কোন ফসল ফলালে উৎপাদন বেশি হবে সে বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই যেন কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে।
আব্দুস শহীদ বলেন, বাংলাদেশে কোনো খাদ্য ঘাটতি নেই। দেশের মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে অবশিষ্ট খাদ্য সংরক্ষণের জন্য সরকার দেশের ৮টি বিভাগে কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে।
তিনি বলেন, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদেরউৎসাহিত করতেওয়ার্ল্ড ব্যাংক আমাদের সহযোগিতা করছে। সেই সুযোগ সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে।

তিনি আরও বলেন,জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান শতকরা ১২ শতাংশ। এটা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। ভবিষ্যতে রাজশাহী থেকে ১ লক্ষ মেট্রিক টন উদ্বৃত্তচালউৎপাদনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন দেশের মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে এবং ক্ষুধামুক্ত দেশ গড়তে। তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই লক্ষ্য নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। হেনরি কিসিঞ্জারের সেই তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ আজ পৃথিবীর মধ্যে একটি রোল মডেল।

অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো: ইমতিয়াজ হোসেন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মাইকেল জন ওয়েবস্টার, কোকা-কোলা বাংলাদেশ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) এমএস. জু-আন নাহার চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, এনজিও প্রতিনিধি এবং কৃষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।