রবিবার, ৪ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
আগামী ১৯ মার্চ শেষ হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বর্তমান উপাচার্য ও উপউপচার্যের মেয়াদকাল। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এই দুই পদ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন। কে হচ্ছেন রাবির পরবর্তী উপাচার্য-উপউপাচার্য- বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে রয়েছে কৌতুহল।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-১৯৭৩ অনুযায়ী দেশের শীর্ষ চার বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয়। এ অধ্যাদেশের ১১(২) ধারা অনুযায়ী, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য (রাষ্ট্রপতি) সিনেট মনোনীত তিনজনের একটি প্যানেল থেকে একজনকে উপাচার্য হিসেবে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেন।’
কিন্তু ভিন্ন কথা বলছেন সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। বিগত দুই দশক ধরে সরকারদলীয় আশির্বাদপুষ্ট শিক্ষকরাই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব পান। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক রং দেখেই উপাচার্য ও উপউপাচার্য নিয়োগ দিয়ে আসছে সরকারগুলো। আর রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সুপারিশও বড় ভূমিকা রাখে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। বর্তমান সময়ে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী তার সুপারিশ আচার্যের কাছে প্রেরণ করেন। সেই সুপারিশ অনুযায়ী উপাচার্য নিয়োগ দেন আচার্য। তাই গুরুত্বপূর্ণ এ দুই পদে আসার জন্য সরকার দলীয় সমর্থক একাধিক শিক্ষক শুরু করেছেন দৌড়ঝাঁপ ও লবিং।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান প্রশাসনের বাইরে উপাচার্য বা উপউপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমেই আলোচনায় রয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি ড. মো. আবুল কাশেমের নাম। আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষক হওয়ায় তার সম্ভাবনা বেশি। উপাচার্যের পদে আসার জন্য তিনি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে লবিং করছেন বলেও জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক রকীব আহমেদ প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদটি পেতে অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ করেছেন। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি ক্রয় নিয়ে যে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে, তার প্রতিবাদে এই শিক্ষককে বেশ সোচ্চার হতে দেখা যায়।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. আনন্দ কুমার সাহাও আসতে পারেন পরবর্তী প্রশাসনের দায়িত্বে। তিনি ১৯৯৪ সালে রাবি শিক্ষক সমিতির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও ২০১০ সালে সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে ২০১৫ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ২০১১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ নামক সংগঠনের স্টিয়ারিং কমিটির নির্বাচিত আহ্বায়ক ছিলেন তিনি।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের আরেক অধ্যাপক ও বিভাগের বর্তমান সভাপতি ড. সেলিনা পারভীনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না সূত্রগুলো। দায়িত্বে আসলে তিনিই হবেন রাবির প্রথম নারী উপাচার্য বা উপউপাচার্য।
পরবর্তী প্রশাসনে দায়িত্ব পেতে সরকারের উচ্চ মহলে যোগাযোগে পিছিয়ে নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ছাদেকুল আরেফিন। তিনি বর্তমানে সমাজকর্ম বিভাগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত রয়েছেন।
ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের আরেক অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারও চেষ্টা করছেন প্রশাসনের দায়িত্ব পেতে। এর আগে তিনি ২০০৯-১৩ সাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই বিভাগের অধ্যাপক মুশফিক আহমেদও পরবর্তী প্রশাসনে দায়িত্ব পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান প্রশাসনে তিনি ‘ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স’ সেলের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। আলোচিত এসব শিক্ষকদের কয়েকজন উপাচার্য হিসেবে না হলেও উপউপাচার্যের দায়িত্ব পেতে আগ্রহী বলে তাদের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে।
রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আখতার ফারুকও বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করছেন প্রশাসনের দায়িত্ব পেতে। এর আগে তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলেও প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।
গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, বর্তমান প্রশাসনকে আবার দুই-এক বছরের জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হতে পারে বা তাদেরকে পুনরায় দায়িত্বে বহাল করাও হতে পারে।
এদিকে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সঙ্গে যাদের সুসম্পর্ক থাকবে তারাই প্রশাসনের দায়িত্বে আসুক বলে দাবি ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীদের। আর প্রগতিশীল ছাত্রনেতারা বলছেন, যারা শিক্ষার্থীবান্ধব হবেন, শিক্ষা ও গবেষণায় মান ও নেতৃত্বদানের ক্ষমতা থাকবে এবং নিয়োগ ও শিক্ষা বাণিজ্য বন্ধ করবেন তারাই হোক রাবির উপাচার্য ও উপউপাচার্য।