কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

আপডেট: জুলাই ১০, ২০২৪, ৮:৪০ অপরাহ্ণ

কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

কোটা সংস্কারের দাবিতে রাবি শিক্ষার্থীরা। ছবি: সোহাগ আলী

রাবি প্রতিবেদক:


কোটা সংস্কারের দাবিতে প্রায় ৪ ঘন্টা ধরে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেছেন রাবি ও রুয়েটের শিক্ষার্থীরা। এদিন (১০ জুলাই) প্রথমে দুপুর ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের সামনে এবং পরে চৌদ্দপাই এলাকার বাইপাস মোড় অবরোধ করেন তারা। অবরোধে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি না হলেও ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ নাগরিকরা।

আন্দোলনকারীদের দাবি হলো- সরকারি চাকরির সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য কোটাকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে নূন্যতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংস্কার করতে হবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী বেলা এগারোটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে জড়ো হতে থাকেন রাবি শিক্ষার্থীরা। প্রথম দিকে উপস্থিতি কম হলেও সাড়ে এগারোটা থেকে দলে দলে শিক্ষার্থীরা আসতে থাকেন। এসময় কোটাবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন হাজারো শিক্ষার্থী। কারো কারো মাথায় স্লোগান লেখা ফিতা ও জাতীয় পতাকা বাধা, কারো হাতে পতাকা। ছাত্র-ছাত্রী নির্বিশেষে সবাই একসাথে স্লোগান দিতে থাকেন।

দুপুর বারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের মহাসড়ক অবরোধ করেন রাবি শিক্ষার্থীরা। সোয়া বারোটার দিকে মিছিলসহ এসে রাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন রুয়েটের অর্ধ-শতাধিক শিক্ষার্থী। এরপর সাড়ে বারোটায় মহাসড়ক অবরোধ করা অবস্থাতেই প্রধান ফটক থেকে বাইপাস মোড়ের দিকে রওনা হন তারা। তীব্র রোদের মধ্যেও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে দেখা যায় তাদের। বিকেল পৌনে চারটা পর্যন্ত বাইপাস মোড় অবরোধ করে রাখেন তারা। এরপর মিছিলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এসে কর্মসূচি শেষ করেন।

এ সময় ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দেশটা নয় পাকিস্তান, কোটার হোক অবসান’, ‘কোটা বৈষম্য নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘আপোষ না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘১৮ এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠায় নাই’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’সহ বিভিন্ন স্লোগানে প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।

সার্বিক বিষয়ে ‘কোটা পদ্ধতি সংস্কার আন্দোলন, রাবি’র অন্যতম সমন্বয়ক আমানুল্লাহ খান বলেন, আমাদের দাবি বিচার বিভাগের কাছে না, নির্বাহী বিভাগের কাছে। ওনারা নতুন করে আরেকটা পরিপত্র জারি করে কোটা সংস্কারের ব্যবস্থা করুক। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না।

এদিকে অবরোধে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি না হলেও ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। সরেজমিনে দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্স ও রোগীবাহী গাড়ি ছাড়া কোনো গাড়িকে চলাচল করতে দেয়নি আন্দোলনকারীরা। ফলে, পূর্ব থেকে না জানা থাকায় অসংখ্য যাত্রীকে গন্তব্যে যাওয়ার সময় অবরোধ স্থান থেকে ফিরে গিয়ে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। তবে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে যৌক্তিক বলে জানান অধিকাংশ যাত্রী।
নগরীর ৮ নাম্বার ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অবশ্যই যৌক্তিক। চাকরিই যদি না হয়, তাহলে পড়াশোনা করে কি করবে শিক্ষার্থীরা?’

মহাসড়ক দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন নগরীর হাদীর মোড় এলাকার এক বাসিন্দা। গাড়ি না পেয়ে হেটে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘তোমরা আন্দোলন চালিয়ে যাও বাবারা। একটু ভোগান্তি হলে হোক, সমস্যা নেই। নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে।’

তবে, পরিচয় দিতে না চাওয়া এক যাত্রী বলেন, ‘আমাদের সমস্যার মধ্যে ফেলে লাভ কি? সরকারের কাছে বলো!’
উল্লেখ্য, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মত কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ৬ জুন থেকে আন্দোলন করে আসছেন রাবি শিক্ষার্থীরা। শুরুর দিকে মানববন্ধন, সমাবেশের মত কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। এরপর ৪ ও ৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের মহাসড়ক অবরোধ এবং ৮ জুলাই কৃষি অনুষদ সংলগ্ন রেলপথ অবরোধ করেছিলেন তারা।

আরও পড়ুন: কোটা সংস্কারের দাবিতে 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ