কোটা: হঠাৎ সরকারের পাঁচ মন্ত্রীর রুদ্ধদ্বার বৈঠক

আপডেট: জুলাই ৮, ২০২৪, ৯:১৬ অপরাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক:


কোটাবিরোধীদের আন্দোলন চলমান এর মধ্যে সরকারের ৫ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হঠাৎ রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন।
আকস্মিক এ বৈঠকের পর তাদের স্পষ্ট কোনো বক্তব্য না পাওয়া গেলেও কোটা আন্দোলনই যে মূল আলোচ্য বিষয় ছিল, তা জানিয়েছেন বৈঠকে উপস্থিত একজন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে চীনের পথে রওনা হন সোমবার সকালে। সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানান।

এরপর বেলা সাড়ে ১২টায় পূর্ব ঘোষিত সময় অনুযায়ী সংবাদ সম্মেলন করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের৷ ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এ সময় চলমান কোটা আন্দোলন ও শিক্ষক আন্দোলন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে উঠে আসে কোটা আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির সম্পৃক্ততার কথা।

সংবাদ সম্মেলন শেষে দুপুর সোয়া ১টায় দপ্তর কক্ষে যান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। সেখানে আগে থেকে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না।

দপ্তর কক্ষে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাদের দুজনকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। বেলা ১ টা ৩২ মিনিটে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আসেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। একই সময়ে আসেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন্নাহার চাপা। তারা দুজনও যোগ দেন বৈঠকে৷ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াও উপস্থিত ছিলেন।
এক ঘণ্টা বৈঠক শেষে দুপুর সোয়া ২টার দিকে দপ্তর কক্ষ ত্যাগ করেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা। প্রথমেই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বের হন। তবে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।

কাদেরের পর বেরিয়ে আসেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনিও গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি পার্টি অফিসে এমনিতেই কম আসি, আজকে ঘুরতে এলাম, কথা হয়েছে কয়েকজনের সাথে।”

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন বৈঠকে অংশ নেওয়া শিক্ষামন্ত্রী ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী। তবে তারাও স্পষ্ট কিছু বলতে রাজি হননি।
তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “সামগ্রিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। রাজনৈতিক, সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছি৷ এটা রুটিন একটা বিষয়।”

কোটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচলা হয়েছে। নির্দিষ্ট একটা বা দুইটা বিষয় নিয়ে নয়। সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷ আজকের বসার বিষয়টা আপনারা জেনেছেন, এই বসাটা নিয়মিত। একটা আমরা নিয়মিত বসি। বিভিন্ন জায়গায় বসা হয়৷” শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। যে বিষয়গুলো আলোচনা করেছি, আসলে সেগুলো নিয়ে এই মুহুর্তে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলোচনার করার মত বিষয় না।”

কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আদালতে যে বিষয়টি বিচারাধীন আছে, আমরা এ বিষয়ে এই মুহুর্তে কোনো মন্তব্য করব না। সেটা আদালতের বিষয়। আদালত থেকে যেভাবে সিদ্ধান্ত আসবেৃ। আমাদের অবস্থান হচ্ছে, যেহেতু বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন আছে, সে বিষয়ে আমরা মন্তব্য করব না। অপেক্ষা করতে হবে। সরকার তো আপিল করেছে। সুতরাং আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করব না।”
বৈঠকে উপস্থিত একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কোটা আন্দোলনের বিষয়টা ছিল আমাদের আলোচনায়।”

কেন এই আন্দোলন
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা ওই পরিপত্রে বলা হয়, নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হল। এখন থেকে মেধারভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে।

তবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল হলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে কোটা ব্যবস্থা আগের মতই বহাল থাকবে বলে ওই পরিপত্রে বলা হয়। ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন।
গত ৫ জুন কোটা পুনর্বহাল করে রায় দেয় হাই কোর্ট। ওই দিনই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিক্ষোভ করে চাকরিপ্রত্যাশী তরুণরা। ১ জুলাই থেকে তারা টানা বিক্ষোভ করছেন।

এরই মধ্যে সরকার হাই কোর্টের আদেশ স্থগিতের আবেদন করলেও আপিল বিভাগ তাতে সাড়া দেয়নি। ফলে হাই কোর্টের আদেশই আপাতত বহাল থাকে। ৪ জুলাই ওই সিদ্ধান্তের পর কোটা বাতিলের আন্দোলন আরো জোরালো হয়।

‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের চলমান আন্দোলনের মধ্যে রোববার ঢাকার শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়, নীলক্ষেত, বাংলামটর, কারওয়ানবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ সাতটি মোড় প্রায় পাঁচঘণ্টা অবরোধ করে পূর্বঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড’ পালন করেন আন্দোলনকারীরা।

দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তা আটকে রেখে কর্মসূচি পালনের ফলে বিভিন্ন রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কোথাও কোথাও ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। অফিস এবং কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফিরতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয় নগরবাসীকে।
সোমবার বিকালেও একই কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় নামার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে আন্দোলনকারীরা।
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ