কোটিপতি বনে যাওয়ার বিস্ময়কর গল্প!

আপডেট: ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬, ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক



তরুণ পেনি স্টক (প্রচলিত বাজারের বাইরে এক বিশেষ ধরণের বাজার। যেখানে দরকার হয় প্রচুর ধৈর্য্য, রয়েছে বিশাল লোকসানের আশঙ্কা এবং ব্যবসায়ে টিকে গেলে প্রচুর মুনাফার সুযোগ) ট্রেডার এবং ইন্টারনেট ব্যবসায়ী টিমোথি সাইক্স। তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আর ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইলে গেলে দেখা যাবে বিশ্বের জাঁকজমকপূর্ণ ভ্রমণকেন্দ্রে দামি দামি সব গাড়ি নিয়ে, জমকালো পোশাক পরে ঘুরে বেড়ানো এবং সুস্বাদু আর বিশ্বখ্যাত সব খাবার-দাবারের ছবি। তরুণ বয়সেই ধনী বনে যাওয়া লোকজন সাধারণত জীবনকে একটু জাঁকজমকপূর্ণভাবেই উপভোগ করতে চান।
টিমোথি সাইক্স, নিজের র্বা মিটজবাহ অনুষ্ঠানে (ইহুদী ধর্মাবলম্বীদের এক বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠান যেখানে ১৩ বছর বয়সী পুত্র শিশুদের জন্মদিন পালনের সাথে সাথে ধর্মীয় কর্তব্য সম্পর্কে বিশদ ধারণা দেয়া হয়) পাওয়া ১২,৪১৫ মার্কিন ডলারের পুরোটাই মূলধন হিসেবে নিয়ে ৪.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছিলেন পেনি স্টকিং ব্যবসার মাধ্যমে! শুধু নিজ দেশ আমেরিকাতেই নয়, বিশ্বের একশ’টিরও বেশি দেশে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন এই ব্যবসার জন্য। উপভোগ করেছেন অপার আনন্দ, দুই হাতে আয় করেছেন টাকা আর খায়েশ মেটাতে ব্যয় করেছেন ইচ্ছেমত। এসবই তিনি করেছেন ছাত্রাবস্থায়!
টিউলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থাতে তিনি নিজের ব্যবসার জন্য ক্লাস ফাঁকি দিতেন। সম্ভবত এই ‘ত্যাগ’-এর জন্যই মাত্র ২১ বছর বয়সেই তিনি ১.৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করতে সক্ষম হন। প্রত্যেক সফল মানুষেরই আলাদা একটা গল্প থাকে। থাকে ভিন্ন ধরণের কিছু উদ্দেশ্য। তেমনই টিমোথিরও ভিন্নধর্মী একটা ইচ্ছা আছে। তিনি তার কষ্টলব্ধ জ্ঞান আর অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চান ছাত্রদের মধ্যে এবং সেটা একেবারেই বিনামূল্যে। যাতে তারা এগুলো কাজে লাগিয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারে। টিমোথি ‘সিলান্ট্রো ফান্ড ম্যানেজমেন্ট’ নামে একটি ঋণদান সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন এবং ফলশ্রুতিতে আমেরিকার বিখ্যাত ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ মাসিক ম্যাগাজিন ‘থার্টি আন্ডার থার্টি’-র বিচারে সেরা উদ্যমী তরুণ উদ্যেক্তার পুরষ্কার জিতে নেন।
ব্যবসায়িক সুখ্যাতির পাশাপাশি টিমোথি সাইক্স এর রয়েছে নানা পাগলাটে কাহিনী। থার্টি আন্ডার থার্টি’র পুরস্কার জেতার পর তিনি রাতারাতি রীতিমত বিখ্যাতই হয়ে ওঠেন। সিএনবিসি আয়োজিত এক সাক্ষাৎকারে গিয়ে তিনি এতটাই নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন যে, ক্যামেরার সামনে মাথা তুলেই তাকাননি! আরেকবার এই মানুষটাই রিয়েলিটি টিভি শো ‘ওয়ার্ল্ড স্ট্রিট ওয়ারিয়রস’ -এ গিয়ে ক্যামেরার সামনেই স্টুডিওতে উন্মাদের মতো লাফালাফি, যাচ্ছেতাই বলা এমনকি আসবাবপত্রও ভাঙচুর করেন! পরবর্তীতে কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওহ! তখন আমি প্রচ- মাতাল ছিলাম!’
২০০৭ সালে তিনি ‘আমেরিকান হেজ ফান্ড’ নামে বই লেখেন। একজন বিখ্যাত প্রকাশক বইটির জন্য তাকে ৩৫,০০০ ডলার অগ্রীম দিতে চাইলে তিনি তা প্রত্যাখান করেন এবং নিজেই সেটা প্রকাশ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন, ‘ধুর ছাই! আমি নিজের প্রকাশনী থেকেই এটা প্রকাশ করব। কারণ নিজের প্রকাশনী থেকে বই বের করলে প্রচারটাও বেশ হবে আর মুনাফাও ভালো হবে’ (ফোর্বস)। বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর প্রথম দিকে তিনি নিজের হাতে লেখা চিঠির মাধ্যমে প্রচারণা চালাতেন। কিন্তু খুব বেশি সাফল্য পেলেন না। প্রচারণার জন্যই পরে তিনি ব্লগিং শুরু করেন এবং বেশ সফল হন। ছয় বছরে বিশ হাজারেরও বেশি কপি বিক্রি হয় বইটির। আর এই প্রচারণা চলতে চলতেই তার ব্লগ পৌঁছে যায় এক নতুন মাইলফলকে। তিনি নিজের ব্লগের মাধ্যমে পেনি স্টক ট্রেডিং শিখতে আগ্রহীদের বিনামূল্যে উপদেশ দেয়ার ঘোষণা দেন। এটা ছিল আসলেই এক ব্যতিক্রমধর্মী এবং মহৎ উদ্যোগ। কারণ সাধারণত এর জন্য অন্যান্য ট্রেনাররা নতুনদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে থাকেন। কিন্তু এর মধ্যেই ব্যক্তিগত ওয়েবইনার ব্লগ থেকে তিনি প্রচুর আয় করেন।
টিমোথি দাবি করেন, তিনি তার ছাত্রদেরকে বটবৃক্ষের মত আগলে রাখেন এবং ব্যবসা পরিচালনা শেখান নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে। দাবিটা যৌক্তিক। তার উল্লেখযোগ্য একজন ছাত্রের নাম টিম গ্রিট্যানি। গ্রিট্যানি প্রথম দিকে ইন্স্যুরেন্স এজেন্ট ছিলেন। পরবর্তীতে টিমোথির ছাত্রত্ব গ্রহণ করেন এবং তিন বছরের মাথায়ই মাত্র ১,৫০০ মার্কিন ডলারের মূলধন থেকে এক মিলিয়ন ডলারের মালিক হয়ে যান। আরেকজন ছাত্র মাইকেল গুডি’র গল্পটা আরও মজার। কাঠমিস্ত্রী গুডি টিমোথির পদাঙ্ক অনুসরণ করে অচিরেই মিলিয়নিয়ার বনে যান!
টিমোথি সাইক্স ব্যক্তিজীবনে একটু পাগলাটে স্বভাবের হতে পারেন। হতে পারেন ভোগবিলাসী। কিন্তু মানবসেবায়ও তিনি যথেষ্ট অবদান রেখে চলেছেন। দরিদ্র শিশুদের জন্য স্কুল নির্মাণ, তাদের পড়াশোনায় সাহায্য এবং বিভিন্ন এনজিও’র সাথে নিয়মিত কাজ করেন তিনি। স্বাবলম্বী এই পাগলাটে তরুণ হতে পারেন একজন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। রাইজিংবিডি

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ