কোলাহলে পরিপূর্ণ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা || প্রতিদিন বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে অর্ধলাখ দর্শনার্থীর ভিড়

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭, ১২:২১ পূর্বাহ্ণ

তানজিমুল হক



প্রতিদিন অর্ধ লাখ মানুষের কোলাহলে পরিপূর্ণ থাকছে রাজশাহীর বিনোকেন্দ্রগুলো। এর মধ্যে শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা অন্যতম। দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে বনভোজনে আসছেন বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ। রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোসহ দর্শনীয় স্থান একনজর দেখার জন্য বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাগম ঘটছে বিনোদন কেন্দ্রটিতে। এর ফলে বিনোদন কেন্দ্রটির আয় বাড়ার পাশাপাশি প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।
উদ্যানের সুপারভাইজার রেজাউল হক মিলন বলেন, সারাদেশ থেকে প্রতিদিন অন্তত দেড় থেকে দুইশ বাস বনভোজনের উদ্দেশ্যে এ বিনোদন কেন্দ্রে আসে। বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গের খুলনা, যশোর, মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর এবং কুষ্টিয়া থেকে বিনোদনপিপাসু মানুষ এ বিনোদন কেন্দ্রটিতে আসছেন। আর রাজশাহী বিভাগের আট জেলা থেকেই ঘটছে মানুষের সমাগম। আমাদের মোট পিকনিক স্পট আছে ৫০টি। এর মধ্যে ভিআইপি স্পটে এক হাজার পাঁচশ এবং সাধারণ স্পটে এক হাজার টাকা ভাড়া নেয়া হয়। এ ৫০টি স্পটে বনভোজন করতে আসা দর্শনার্থীদের স্থান সঙ্কুলান না হলে ফাঁকা জায়গা ভাড়া দেয়া হয়। এক্ষেত্রে ভাড়ার হার চারশ টাকা। এছাড়া উদ্যানে প্রবেশের জন্য টিকিটের দাম ২৫ টাকা করে নেয়া হয়।
তিনি বলেন, প্রতিদিন পিকন্কি স্পট থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ভাড়া হিসেবে আসছে। এছাড়া বনভোজনে আগতরা টিকিট কেটে উদ্যানে প্রবেশ করছেন। এর ফলে উদ্যানের আয় বেড়েছে। অন্য সময়ের চেয়ে শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বনভোজন করতে মানুষ বেশি আসেন। বিশেষ করে সপ্তাহের বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার মানুষের সমাগম সবচেয়ে বেশি। আমরা চেষ্টা করি, বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে। আশা করছি, অচিরেই এ উদ্যানটি দেশের সর্ববৃহৎ বিনোদনকেন্দ্রগুলোর একটিতে পরিণত হবে।
গত শুক্র ও শনিবার বিনোদনকেন্দ্রটিতে সরেজমিনে দেখা গেছে বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাগম। শুক্রবার বিকেলে কথা হয় যশোর সদর উপজেলার দেওড়া ইউনিয়ন থেকে পিকনিক করতে আসা বাসের চালক হাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি ৫৫ জন যাত্রী নিয়ে এসেছি। ভোর পাঁচটায় রওনা দিয়ে দুপুর একটায় রাজশাহী পেঁছেছি।
তিনি বলেন, পার্কটির পরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর। অনেক জায়গা। পরিচ্ছন্নতারও কমতি নেই। বিশেষ করে রান্নার জায়গাটি অনেক পরিচ্ছন্ন আর সুন্দর। আমাদের কোন সমস্যা হই নি। আমাদের এলাকার মানুষ গত সপ্তাহে এ পার্ক থেকে পিকনিক করে গেছেন। তাদের কাছে পার্কের কথা শুনে আমরাও এসেছি।
ওই দলের সঙ্গেই এসেছেন যশোর এমএম সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ কায়কোবাদ। তিনি বলেন, আমি এর আগে রাজশাহী আসি নি। রাজশাহী শিক্ষানগরী হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস দেখার ইচ্ছে আমার অনেক দিনের। তাই এ উদ্যানে পিকনিক শেষের পর আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাব। আর পথিমধ্যে উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজশাহী কলেজ ক্যাম্পাস দেখারও ইচ্ছে আছে।
রাজশাহীর পুঠিয়া থেকে পরিবারের সদস্য এবং ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে বনভোজনে এসেছিলেন এনজিও কর্মকর্তা গোলাম মোর্শেদ। তিনি বলেন, বিনোদন কেন্দ্রটিতে ঘোরার জন্য পর্যাপ্ত রয়েছে। ছোট ও বড়দের জন্য রয়েছে বিভিন্ন রাইড। যেগুলোতে চড়ে শিশুরা মজা করছে। তবে খাঁচাগুলোতে পশু-পাখি থাকলে আরো ভালো লাগতো। কারণ অধিকাংশ খাঁচা শূন্য। এছাড়া পাশেই রয়েছে দর্শনীয় আই বাঁধ। আর পদ্মার চরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। আমরা আজ সারাদিন অনেক আনন্দ করেছি।
পাবনা সদর থেকে বনভোজনে এসেছিলেন ওষুধ কোম্পানিতে কর্মরত সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, বনভোজনের পাশাপাশি রাজশাহীর ঐতিহাসিক স্থান এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলো দেখার ইচ্ছে ছিলো। সেগুলো দেখেছি। টি বাঁধ দেখার পাশাপাশি ঐতিহাসিক বড়কুঠি দেখেছি। এরপর মহান মুক্তিযদ্ধের সাক্ষ্য বহনকারী ভদ্রা এলাকায় স্মৃতি অম্লান দেখবো।
তিনি বলেন, বিনোদন কেন্দ্রটিতে পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। ব্যবস্থাপনাও ভালো। কিন্তু পানির সমস্যা রয়েছে। এ সমস্যাটির সমাধান করতে পারলে পিকনিক স্পটটিতে আসা মানুষ আরো বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন।
এদিকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা গাড়ি পাকিং নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বিনোদন কেন্দ্রের পশ্চিমে যে গ্যারেজ রয়েছে তাতে সঙ্কুলান হচ্ছে না স্থানের। এ গ্যরেজের ইজারা গ্রহণকারী আতাউর রহমান বলেন, গ্যারেজে সর্বোচ্চ ২২টি গাড়ি রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু গাড়ি আসে প্রতিদিন দেড় থেকে দুইশ। এর ফলে মূল রাস্তা ও পাশের হেলেনাবাদ কলোনি মাঠে আমরা গাড়ি রাখতে বাধ্য হচ্ছি। রাস্তায় গাড়ি রাখার ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হচ্ছে।
তিনি বলেন, গ্যারেজের পাশেই বিনোদন কেন্দ্রের পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। শুধুমাত্র বাউন্ডারি প্রাচীর ভেঙে দিলেই গাড়ি রাাখার পর্যাপ্ত জায়গার ব্যবস্থা করা সম্ভব। পাশাপাশি গাড়িগুলো নিরাপদেও থাকে। তিনি বিষয়টি ভেবে দেখার জন্য বিনোদন কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানান। তিনি আরো বলেন, প্রতি গাড়ি থেকে আমরা দুইশ টাকা গ্রহণ করি। এর ফলে গ্যারেজকে কেন্দ্র করে ২০ জন বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।
এদিকে বনভোজন করতে আসা মানুষ এবং দর্শনার্থীদের সমাগমে জমে উঠেছে উদ্যানের বাইরে ও অভ্যন্তরে অবস্থানরতদের ব্যবসা। উদ্যানের বাইরে ফুটপাথে গড়ে উঠেছে কমপক্ষে অর্ধশত দোকান। এর ফলে কমপক্ষে তিনশ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। এসব দোকানে বিক্রি হচ্ছে, ছোটদের জন্য বেলুন, পুতুল, মাটির খেলনা. ঝিনুকের তৈরি বিভিন্ন ধরনের গহনাসহ কসমেটিক পণ্য।
ফুটপাথে ব্যবসা করছেন মো. রনজু। তিনি বলেন, আমার মতো অর্ধশতাধিক ছোট ব্যবসায়ী রয়েছেন। শীত মৌসুমে আমাদের ব্যবসা ভালো হয়। বিশেষ করে বিভিন্ন এলাকা থেকে বনভোজন করতে আসা মানুষ আমাদের ক্রেতা। এদের মধ্যে নারী ও শিশু ক্রেতার সংখ্যা বেশি। এ ব্যবসার ওপরই নির্ভর করছে আমার পরিবারের ছয় সদস্যের চলাফেরা। ব্যবসা ভালো হচ্ছে। আমরা ভালো আছি। একই ধরনের কথা বললেন ফুটপাথের অন্য ব্যবসায়ীরা। এছাড়া উদ্যানে শিশু থেকে মধ্য বয়সি অর্ধশতাধিক মানুষ বিক্রি করছেন শশা ও বাদামসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্য পণ্য। আর উদ্যান সংলগ্ন টিবাঁধকে কেন্দ্র করেও ছোট ব্যবসায়ী ও পদ্মার নৌকার প্রায় শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্যানের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল হাই বলেন, ৩৩ একর জায়গা রয়েছে উদ্যানের। রয়েছে লেকসহ বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় রাইড। আর তাছাড়া রাজশাহী ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ হবার কারণে এ অঞ্চলের প্রতি মানুষের আকর্ষণ রয়েছে। এছাড়া উদ্যানে বনভোজন করতে আসা মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়। একারণে প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ উদ্যানে মানুষ বনভোজন করতে আসছেন। এর ফলে উদ্যানের আয় বাড়ছে। পাশাপাশি উদ্যানকে কেন্দ্র করে পাঁচ শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
অপরদিকে রাজমাহীর শহিদ জিয়া শিশু পার্ক, ভদ্রা পার্ক, নগরীর টিবাধ, আই বাঁধ, বড়কুঠি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে অর্ধলাখ দর্শনার্থীর সমাগম ঘটছে।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ