রবিবার, ২৬ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১২ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
প্রাণিদেহের উপর পরীক্ষা চালিয়ে ক্যান্সারের ভয়াবহ বিস্তার তিন-চতুর্থাংশ রোধ করা গেছে বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।
চিকিৎসা বিষয়ক সাময়িকী ‘নেচারে’ প্রকাশিত ইঁদুরের ওপর পরিচালিত এক গবেষণার বরাত দিয়ে খবরটি দিয়েছে বিবিসি। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই পরীক্ষায় রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা পাল্টে দিয়ে ত্বক থেকে ফুসফুসে ক্যান্সারের বিস্তার থামানো গেছে।
ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে বলছে, ক্যান্সারে মৃত্যুর ৯০ শতাংশের জন্য দায়ী টিউমারের শুরু দেহের যে কোনো জায়গায় হতে পারে।আর সেই টিউমার ছড়ানোর বিষয়ে নতুন তথ্য বের করেছে প্রাথমিক এই গবেষণা, যা নতুন চিকিৎসায় অবদান রাখতে পারে। মেটাস্ট্যাসিস নামে পরিচিত ক্যান্সার ছড়ানোর প্রক্রিয়াটি আসলে দ্রুত রূপান্তরিত ক্যান্সারের সঙ্গে শরীরের বাকি অংশের লড়াই। কোন উপাদান শরীরে টিউমারের বিস্তারের ওপর প্রভাব ফেলে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলেন গবেষণা পরিচালানকারী কেমব্রিজের স্যাংগার ইন্সটিটিউটের গবেষক দল। ডিএনএর কোন শাখাগুলো একটি ক্যান্সারের বিস্তার প্রতিরোধে শরীরে সম্পৃক্ত থাকে তা খুঁজে বের করতে গবেষকরা পরীক্ষাগারে তৈরি জেনেটিক্যালি মডিফায়েড ইঁদুরের ৮১০ সেট তৈরি করেন।
তার পর ওই প্রাণিগুলোর শরীরে মেলানোমা (ত্বকের ক্যান্সার) ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।এর ফলে কতগুলো ইঁদুরের ফুসফুসে টিউমার তৈরি হয়েছিল তার হিসাব রাখে গবেষক দল।
তারা ডিএনএ বা জিনের ২৩টি শাখা খুঁজে পেয়েছেন, যেগুলো ক্যান্সারের বিস্তারকে সহজতর বা কঠিনতর করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।যেগুলোর অনেকগুলোকেই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সম্পৃক্ত দেখা গেছে।
‘এসপিএনএস২’ (ঝঢ়হং২) নামে বিশেষ একটি জিনকে কেন্দ্র করে পরীক্ষায় দেখা গেছে, তা ফুসফুসে টিউমারের বিস্তার তিন-চতুর্থাংশ রোধ করেছে।
‘চমকপ্রদ জীববিজ্ঞান’
গবেষক দলের অন্যতম ড. ডেভিড অ্যাডামস বলেন, “ফুসফুসের ভেতরের প্রতিরোধী কোষগুলোর ভারসাম্যকে এটা নিয়ন্ত্রিত করেছিল।
“এটা কোষগুলোর ভারসাম্যকে বদলে দিয়ে টিউমার কোষগুলোর পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ধ্বংসকারী কোষগুলো নিধনে ভূমিকা রাখে।” রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে ক্যান্সার প্রতিরোধ (ইমিউনোথেরাপি) কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে নাটকীয় ফল দিয়েছে।
চূড়ান্ত পর্যায়ের গুটিকয়েক রোগির দেখা গেছে, তাদের শরীর থেকে ক্যান্সারের সব চিহ্ন দূর হয়েছে। তারপরও ওষুধগুলো অনেক রোগির ক্ষেত্রে কাজে আসেনি।
ড. অ্যাডামস বলেন, “আমরা জীববিজ্ঞানের কিছু চমকপ্রদ দিক সম্পর্কে জানতে পেরেছি, যেগুলো আমরা হয়তো ব্যবহার করতে সক্ষম হবো। টিউমারের বিস্তারে কোন জিন সম্পৃক্ত তা এখন বলা যাবে।”
এসপিএনএস২-কে লক্ষ্য কর ওষুধ প্রয়োগেও একই ধরনের ক্যান্সার গতিরোধক প্রভাব হয়তো তৈরি করা যাবে। তবে তা দূরবর্তী সম্ভাবনার বিষয়।
ক্যান্সার রিসার্চ ইউকের গবেষক ড. জাস্টিন আলফ্রেড বলেন, “ইঁদুরকে নিয়ে এই গবেষণা জিন বিষয়ে নতুন অন্তর্দৃষ্টি এনেছে, যা ক্যান্সার বিস্তারের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে এবং ভবিষ্যতে ক্যান্সারের চিকিৎসায় সম্ভাব্য পথ দেখাতে পারে।
“ছড়িয়ে যাওয়া ক্যান্সারের চিকিৎসা কঠিন। তাই, ক্যান্সার বিস্তারের প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের পথ খুঁজে পেতে এধরনের গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”- বিডিনিউজ