ক্রিকেটে টাইগারদের সাফল্য ধারাহিকতার মধ্যদিয়ে পরিমাণটা আরও বৃদ্ধি পাবে

আপডেট: মার্চ ৩১, ২০২৩, ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ

ক্রিকেটের অভিজাত আঙিনায় প্রবেশের পর তিক্ত সব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই যেতে হয়েছে বাংলাদেশকে। একসময় বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস কেড়ে নেয়ার শত শত প্রস্তাব বাতাসে উড়েছে। সেই সময় আজ ইতিহাস হয়ে গেছে। সব সমালোচনা আর গালিগালাজকে ইতিহাস বানিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট আজ আইসিসির কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। আর এ রোল মেডেল মেনে পাপুয়া নিউগিনি, নেপাল, বার্বাডোজসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ উন্নতি করতে পারে। তা নিয়ে গবেষণা করছে আইসিসি। গত কয়েক বছরে বিপুল বিক্রমে উন্নতি করছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। জাতীয় দলের সাম্প্রতিক সাফল্যে রয়েছে অনেক। রেকর্ড ভাঙা গড়ার মঞ্চ হয়ে দাঁড়িয়েছে আয়ারল্যান্ড সিরিজ। অনেক প্রথমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টানা ৫ টি-টোয়েন্টি জয়ের নজির। এর আগে এই ফরম্যাটে এতটা ধারাবাহিক কখনও ছিল না বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়েই এই ফরম্যাটে সাকিব আল হাসানের দল আমূল বদলে গেছে। খুব বেশি পরিবর্তন না হলেও দলের ইনটেন্ট বদলানোর বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপর থেকেই প্রতিপক্ষকে আগ্রাসী ক্রিকেটে প্রতিনিয়ত নাস্তানাবুদ করছেন তারা।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দিয়েই শুরু হয়েছে বাংলাদেশের অবাক করে দেওয়ার মিশন। দাপুটে ভঙ্গিতে ইংলিশদের ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করেছে। যার ধারাবাহিকতা টেনে এনেছে আইরিশদের বিপক্ষেও। এভাবে ধারাবাহিকভাবে সফল হওয়ার রহস্য জানিয়েছেন ওপেনার রনি তালুকদার। বৃহস্পতিবার দুপুরে টিম হোটেলে গণমাধ্যমে হাজির হয়ে জানিয়েছেন, ‘সাকিব ভাই কিংবদন্তি খেলোয়াড় সেটা আপনারাও জানেন। তার সঙ্গে যখন আবাহনীতে খেলেছি, আজ থেকে ১২ বছর আগে, তখনও একই অভিপ্রায় ও মনমানসিকতা তার ভেতর ছিল। সাকিব ভাই সবসময় ইতিবাচক থাকতে আর ডমিনেট করার চেষ্টা করেন। নিজের এই ডমিনেটিং চিন্তাভাবনাই দলের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তার কথা, আমরা খেলবো বাঘের মতো।’
বাংলাদেশ ১৯৮৬ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সদস্য, কিন্তু ২০০০ এর দশকের শেষের দিকে জাতীয় দল আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার চিহ্ন তৈরি করতে শুরু করেনি। ২০০৭ সালে, বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকাকে পরাজিত করার সময় শীর্ষস্থানীয় দলের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ জয়ের রেকর্ড করে। এটি ২০০৭ বিশ্বকাপ এবং ২০১০ এশিয়া কাপ সহ প্রধান টুর্নামেন্টে শক্তিশালী পারফরম্যান্সের একটি সিরিজ অনুসরণ করে। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছে। ২০১৬ সালে, জাতীয় দল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছিল এবং ২০১৭ সালে, তারা অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একটি ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছিল। দলটি ২০১৯ বিশ্বকাপেও ভাল পারফর্ম করেছে, যেখানে তারা দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং আফগানিস্তানকে পরাজিত করেছিল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের উত্থানের পেছনে বেশ কিছু কারণ ভূমিকা রেখেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি শক্তিশালী ঘরোয়া ক্রিকেট ব্যবস্থার বিকাশ। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) একটি পেশাদার লিগ প্রতিষ্ঠা এবং সারা দেশে ক্রিকেট মাঠের সংখ্যা সম্প্রসারণের মাধ্যমে ঘরোয়া খেলায় প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। আরেকটি কারণ হল নতুন প্রজন্মের প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের উত্থান। তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিম, মুস্তাফিজের মতো খেলোয়াড়রা তাদের নিজ নিজ অবস্থানে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের উত্থান জাতীয় দল, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এবং সামগ্রিকভাবে দেশের ক্রিকেট সম্প্রদায়ের কঠোর পরিশ্রম এবং উৎসর্গের প্রমাণ। একটি শক্তিশালী ঘরোয়া ব্যবস্থা এবং প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের দল থাকায় বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যত উজ্জ্বল। দলটি কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যাবে এবং ভবিষ্যতে আরও সাফল্য অর্জনের জন্য সচেষ্ট থাকবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ