শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
‘রাজশাহীতে একাডেমি অনেক কাজ করছে, কিš’ আমি খুশি না। আমাদের অর্গানাইজাররা আদিম যুগের। আমি তাদের অসম্মান করছি না। কিন্তু প্রযুক্তির সাথে তাল মেলাতে হবে। যতই মেধাবী হন, এখন ডায়নামিক হতে হবে। ২০-৩০ বছর আগের কনসেপ্ট দিয়ে কাজ করলে তো হবে না। কম মাঠ নিয়ে কিভাবে খেলা চালাবো, এরকম নতুন উদ্ভাবন আনতে হবে। লিগ হবে না, এটা খুবই দুঃখজনক। এটা তো আমাদের প্লেয়ারদের দায়িত্ব না। এটা অর্গাইনাজারদের দায়িত্ব। আর অর্গানাইজেশন চালানো পেশা হতে পারে না। তার অন্য চাকরি থাকবে, ব্যবসা থাকবে। এটা করবে সামাজিক দায়িত্ব থেকে। আমাদের বেশিরভাগ জেলা বা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা হয়ে পড়েছে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। এখানে প্রধান ভূমিকা নিতে হবে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে।’
সোনার দেশ ডেস্ক
দীর্ঘ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে কতো কিছুই না দেখেছেন খালেদ মাসুদ পাইলট। নিজের সময়ে এশিয়ার সেরা উইকেটকিপারের অঘোষিত মুকুটটাও অনেকটা সময় ধরে ছিল তার। কিপিংয়ে যেমন ছিলেন সদা তৎপর, ব্যাট হাতে দলের অনেক ধসে দেয়াল হয়ে দাঁড়ানোর কীর্তিও আছে। ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়েছে ৪৪টি টেস্ট ও ১২৬টি ওয়ানডে খেলে। ঘরোয়া ক্রিকেট ছেড়েছেন বছর তিনেক হলো। তারপর কোচিংয়ের সাথে আছেন। বিভিন্ন সময়ে আরো নানা ভূমিকায় দেখা মেলে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়কের। বিপিএলে যেমন দুই মৌসুমে ছিলেন একটি দলের ম্যানেজার। এখন কিংবদন্তি এই ক্রিকেটার মাস্টার্স ক্রিকেট কার্নিভাল নামের ফান ক্রিকেট খেলতে কক্সবাজারে। ব”হস্পতিবার সেখানেই পরিবর্তন প্রতিবেদক রামিন তালুকদার এর সাথে দীর্ঘ আলাপ হলো খালেদ মাসুদের। একটু ভিন্ন রকমের আলোচনা। সেই আলাপ তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।
ক্রিকেট ছাড়ার পরও এর সঙ্গেই জড়িয়ে আছেন, একটু যদি বলতেন ঠিক কোথায় কোথায় জড়িত আছেন?
পাইলট : আমি মাঠটাকে পছন্দ করি, মাঠের মায়ায় আছি। ৭টা একাডেমি আছে, সেগুলো চালাই। ইনডোর ইভেন্টস করার চেষ্টা করি। কোচিংয়ের জায়গায়, সবসময় তো খেলা হয় না। প্রিমিয়ার লিগে প্রাইম ব্যাংকে কোচিং করিয়েছি, বিপিএলে কুমিল্লায় ছিলাম। বাকি সময়গুলো কেমন স্পোর্টসের হয়ে কাজ করি, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দিকগুলো আমাকে টানে। সুস্থ দেহে বাঁচতে হলে তো স্পোর্টস তো দরকার। সবাই তো সাকিব-তামিম না। ধরেন, কর্পোরেট, স্কুল কলেজে অনেক ছেলে আছে। আমি তাদের জন্য সুযোগ তৈরী করে দিতে চাই, সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে। বড় ভাই হিসেবে। এই মাস্টার্স ক্রিকেট কার্নিভাল যেমন দ্বিতীয়বারের মতো হচ্ছে, রাজশাহীতে পাইলট প্রজেক্টটা কিন্তু আমরাই করেছিলাম। সেখানে প্রায় ২০০ ক্রিকেটার ছিল। তখন মনে হলো, সব ক্রিকেটারকে নিয়ে কেন করবো না। অনেক ক্রিকেটার যারা জেলা পর্যায়েই আছে। তাদের স্বপ্নগুলো চাপা ছিল। এরকম অকেশন হয়তো আমাদের জন্য ফান, কিন্তু অনেকের জন্যই অনেক বড় ব্যাপার।
বর্তমানে রাজশাহী থেকে অনেক ভালো ভালো খেলোয়াড় উঠে আসছে। আগে আমরা এটা দেখতাম চট্টগ্রাম থেকে অনেক খেলোয়াড় উঠে আসতো। আসলে ক্রিকেটার তৈরির ক্ষেত্রে একাডেমি কতটা গুরুত্বপূর্ণ? আপনি কি ওইভাবে জড়িয়ে আছেন?
পাইলট : শুধু আমাদের একাডেমি না, সব একাডেমির অবদান। বাংলাদেশ ক্রিকেট এই পর্যায়ে আসছে, তাদের জন্যই। কাউকে না কাউকে তো দায়িত্ব নিতেই হবে। ধরেন কোনো বড় ভাইয়ের মাধ্যমে ক্রিকেটার উঠে আসে। আজকে খুব ভাল জায়গায় আসছে। ধরেন, ফার্মের মুরগি খা”েছন, ডিম কোথা থেকে আসছে। সাকিব মুস্তাফিজ তামিম, সবাই কারও অধীনে ছিল। হাতেখড়ি খুব গুরুত্বপূর্ণ। একাডেমি গুরুত্বপূর্ণ তাই। যারা ক্রিকেট ভালবাসে, তাদের অনেক অবদান। এসব জায়গায় কাজ করতে হবে। আমার মনে হয়, তণৃমূলে কাজ করার অনেক সুযোগ। তাদের তেমন নামডাক নেই, বড় কর্পোরেট হাউজের সুবিধা নেই। ওইখানেই সময় দেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। একটা ছেলে, ধরেন বিষণ্ণতায় ভুগছে, তার কাছে থেকে ভাল কিছু বের করে নিয়ে আসাটা গুরুত্বপূর্ণ।
আধুনিক ক্রিকেট অনেক বদলেছে আপনার কি মনে হয় একাডেমিগুলো ঠিক ওইভাবে কাজ করছে?
পাইলট : রাজশাহীতে একাডেমি অনেক কাজ করছে, কিš’ আমি খুশি না। আমাদের অর্গানাইজাররা আদিম যুগের। আমি তাদের অসম্মান করছি না। কিন্তু প্রযুক্তির সাথে তাল মেলাতে হবে। যতই মেধাবী হন, এখন ডায়নামিক হতে হবে। ২০-৩০ বছর আগের কনসেপ্ট দিয়ে কাজ করলে তো হবে না। কম মাঠ নিয়ে কিভাবে খেলা চালাবো, এরকম নতুন উদ্ভাবন আনতে হবে। লিগ হবে না, এটা খুবই দুঃখজনক। এটা তো আমাদের প্লেয়ারদের দায়িত্ব না। এটা অর্গাইনাজারদের দায়িত্ব। আর অর্গানাইজেশন চালানো পেশা হতে পারে না। তার অন্য চাকরি থাকবে, ব্যবসা থাকবে। এটা করবে সামাজিক দায়িত্ব থেকে। আমাদের বেশিরভাগ জেলা বা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা হয়ে পড়েছে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। এখানে প্রধান ভূমিকা নিতে হবে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে।
এটা থেকে বেরিয়ে আসতে কি করা উচিৎ বলে আপনি মনে করেন?
পাইলট : আমরা শুধু ফলটা পা”িছ। কিš’ ভেতরে অবস্থাতো খুবই খারাপ। আগে যেমন ছিল,অনেক সংগঠক নিজের বাসার টাকা এনে দিতেন। বিনিয়োগ করতেন। নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। এখন এগুলো ব্যবসায়িক কেন্দ্র হয়ে গেছে। বেশীরভাগ জেলা সংস্থাগুলোতে দেখবেন জুয়া চলছে। বিশাল টাকা ইনকাম হচ্ছে, কিন্তু লিগ হয় না। প্লেয়াররা বসে থাকে, একটা লিগ হতে কতো টাকা লাগে? ধরেন একটা ছেলে লিগ খেলে কিছু টাকা পেয়েছে, সে তো তখন আরও বেশি চেষ্টা করবে, আরও ভাল করতে। কারণ তখন বেশি পারিশ্রমিক পাবে। কিন্তু টাকা না পেলে তো খেলা ছেড়ে দেবে। পারিশ্রমিক না পেলে কিন্তু মেসিও খেলা ছেড়ে দেবে।
এখানে আসলে বোর্ডের দায় কতটুকু?
পাইলট : বোর্ডের দায় বলতে বলবো, আমাদের বোর্ডে অনেক কাজ করার জায়গা আছে। বোর্ড অভিভাবক। স্পোর্টসে তো ক্রিকেট বোর্ডই অভিভাবক, টাকা পয়সার দিক দিয়ে বলেন। পরিবারের হয়তো পাঁচটা ভাই থাকতে পারে, কিন্তু সবাই তো সমান না। একজন অনেক আয় করে। ধরা যাক ক্রিকেট বোর্ড। তার দায়িত্ব বাকি পাঁচ ভাইকে এগিয়ে নিয়ে আসা। তাদের অন্য স্পোর্টসের দিকেও তাকাতে হবে, ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, ব্যাডমিন্টনে কিভাবে উন্নতি হবে। ভারতে দেখেন, আইপিএল তৈরি করেছে, সেখান থেকে টাকা আয় করে অনেক পরিমাণে। যারা স্থানীয় খেলোয়াড় ছিলেন, খেলা ছেড়ে দিয়েছেন, তাদেরকে সুযোগ করে দিচ্ছে। পেনশনের ব্যবস্থা করেছে। তারা এই কনসেপ্টটা কাজে লাগাচ্ছে অন্য ক্ষেত্রে। আমার মনে হয় আগামী পাঁচ বছরে ভারত অনেক এগিয়ে যাবে, স্পোর্টস ইন্ডাস্ট্রিতে। ক্রিকেট কিন্তু সে পথ দেখিয়ে দিয়েছে।
আইসিসি ট্রফিতে শেষ ওভারের প্রথম বলে দারুণ একটি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। মূলত ওই ছক্কাটাতে ম্যাচ আমাদের হাতে চলে আসে। তখন আসলে কেমন অনুভূতি ছিল?
পাইলট : আমি না থাকলে অন্য কেউ থাকতো। ব্যাটিংয়ের সময় তো অন্য কিছু মনে থাকে না। বিশ্বাস ছিল, জিততে পারবো। যারা খেলা দেখে, তাদের বেশি টেনশন হয়। আজ যেমন আমি দেখছি, খুব টেনশন হচ্ছে। টেনশন ছিল, দোয়া করছি, আল্লাহর কাছে চাচ্ছি, একটা জয়। দেশের জন্য খেলছি, তখন তো আসলে দোয়া ছাড়া কিছুই নাই। তখন তো কতোকিছুই হয়, কেউ এক বলে ছয় নিয়ে জিতে যায়, কেউ এক বলে এক লাগলেও হেরে যায়। ভাগ্যের ব্যাপার।
টেস্ট ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আপনার একটা সেঞ্চুরি আছে।
পাইলট : সেন্ট লুসিয়াতে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন অনেক ভাল দল। আমরা প্রথম ইনিংসে ভাল করেছি, সুমন রফিক সেঞ্চুরি করলো। আমরা একটা লিড পেলাম। তারপর ওরা আক্রমণাত্মক খেললো। দ্বিতীয় ইনিংসে আমাদের দ্রুত উইকেট চলে গেছে, দিনও বাকি আছে। তখন ধরেও খেলতে হবে, আবার রানও করতে হবে। কখনও কখনও তো ড্রও জয়ের সমান। যদি নিয়াজ মোর্শেদের সঙ্গে দাবায় ড্র করেন, সেটাই আপনার জয়। কারণ তখনও তো আপনি সেই লড়াই করার জায়গায় যান নাই। সেই ড্রটা আমাদের জন্য জয়ের সমান ছিল। প্রথম বাইরে গিয়ে ড্র করেছিলাম আমরা। আমি ভাগ্যবান, সম্ভবত তারেক আজিজ ও তাপস বৈশ্য ছিল টেইলএন্ডার। আরও ১০-১৫ ওভার খেলতে হবে, নাহলে ধরা খেয়ে যাব। আমি ওদেরকে বলেছিলাম, ‘তুই থাক বাবা।’ তারাও আমাকে কনফিডেন্স দি”িছল, ‘পাইলট ভাই আপনি খেলেন, কোনো সমস্যা নাই আমরা আছি।’ কখনও কখনও এমন হয়, কি হবে সেটা জানার উপায় নেই। শুধু নিজের কাজটা করে যেতে হয়।
ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা কোনো স্মরণীয় ইনিংসের কথা যদি একটু বলতেন? যেটা এখনও আপনার হৃদয়ে দাগ কাটে।
পাইলট : ঢাকা লিগে তো খুব বেশি মনে থাকবে না কোনও ইনিংসের কথা, প্রায় ২৩ বছর খেলেছি। প্রচুর ম্যাচ খেলেছি। তখন তো ইন্টারন্যাশনাল কম খেলতাম, ঢাকা লিগই বেশি খেলতাম। কিš’ একটা ইনিংসের কথা বললে বলবো, খুব সম্প্রতি এক বলের একটা ইনিংস। আবাহনী-মোহামেডান খেলা। তো, দুইটা দলই অনেক টাকা খরচ করেছে। মোহামেডানের প্রেস্টিজের ব্যাপার। আবাহনীর সঙ্গে খেলা। ১২ বলে ৩৬ রান প্রয়োজন, আমরা তো হেরে গেছি। মোহামেডান আবার চ্যাম্পিয়নও হয় না। এখন পর্যন্ত সেটাই শেষবার তাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়া, এরপর আর চ্যাম্পিয়নও হয় নাই। ভাগ্যক্রমে আমাদের রানা নাভেদ-উল-হাসান ছিল, পাকিস্তানি, একটা ওভারেই ২৮ না কতো নিয়ে নিয়েছে। সাকিবকে, স্পিনারকে পেয়ে তো ধিমধাম মার। পরের ওভার রফিক বল করছে, ও আবার বোকার মতো মারতে গিয়ে আউট হয়ে গেছে। শেষ বলে লাগবে চার রান, তিন হলে টাই। আমি ব্যাটিংয়ে নামছি। জীবনে আমি রফিকের সাথে নেটে জিততাম না। ধরেন ও বল করছে, আমি ব্যাটিং। আমি যেখানেই মারি, ও বলবে, ‘ওখানে ফিল্ডার আছে!’ থাকে না, সবসময় এমন, হারবে না কখনও। চার কখনও দেবে না। সুইপ করলাম, ও বলবে ফিল্ডার আছে, এক রান। নন-স্ট্রাইকারকে বললাম, আমি যাই মারি না কেন, তুই শুধু চোখ বন্ধ করে দৌড়াবি। দৌড়েই তিন রান নিব। কি যেন নাম ভাই, একের মতো, আরে হিন্দী সিনেমাটা। হ্যাঁ, লাগানের মতো। তুই শুধু দৌড়াবি, বাদ বাকি আমি দেখবো। ওরা আবার সব ফিল্ডার ৩০ গজের বাইরে তো নিয়েছেই, উইকেটকিপার পর্যন্ত, রফিক বল করছে, তবুও ৩০ গজের ওখানে দাঁড়িয়েছে। গালি যে আছে সে পেছনে। থার্ডম্যান নাই। তো আমি প্ল্যান করেছি, রফিক যেটাই করবে, আমি সুইপ মারবো। বলও করেছে, আমি সুইপও মেরেছি, কপাল দেখেন। টপ-এজ লেগে ওই যে কিপার আছে, গালি আছে, ওর মাঝখান দিয়ে যা”েছ। আমি ভাবছি, আল্লাহ, কোথায় যে যাচ্ছে। জাস্ট দৌড়। আমি দৌড়াচ্ছি নন-স্ট্রাইকার থেকে যখন ঘুরছি, দেখি বল ওদিকে গেছে। পেছনে নাদিফ চৌধুরী দৌড়াচ্ছে। ওকে দেখি, পাঁচ-সাত গজ দূরে থাকতে স্লাইড মারলো, সেখানেই পড়ে আছে। এটার মজা আলাদা। যতই একশ-দুইশ মারেন, এটা আলাদা ব্যাপার।
ক্যারিয়ারের দীর্ঘদিন জাতীয় দলে খেলেছেন, অধিনায়কও ছিলেন। উইকেটের পেছনেই থাকতেন। তাই প্রায় সব বোলারকে আপনি কাছ থেকে দেখেছেন। আপনার দৃষ্টিতে ওই সময়ের সেরা পেসার ও স্পিনার কে ছিলো?
পাইলট : আসলে অনেকেই আছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্নজন। প্রথমে আমি দেখেছি শান্তকে (হাসিবুল হোসেন)। ও অনেক জোরে বোলার ছিল। তখন দলে ১১ জন নির্ধারণ করার সময় সবার আগে আসতো ওর নাম। যেটা কয়দিন আগে মাশরাফির ছিল। শান্তর পর আসবে মাশরাফির নাম। শান্ত অনেক অ্যাগ্রেসিভ ছিল। বল তো করবে ভালো জায়গায় পাশাপাশি ব্যাটসম্যানকে মারবো এমন একটা ভাব ছিল। এছাড়াও আরও অনেকেই ছিল। মঞ্জু (মঞ্জুরুল ইসলাম) নতুন বল ভালো কন্ট্রোল করতে পারতো।
আর স্পিনার?
পাইলট : স্পিনার রফিক এবং মনি ভাই (এনামুল হক) আমার দেখা সেরা। হয়তো এখন আমরা ওইভাবে সন্মান দেইনা তবে ওই মুহূর্তে তাদের দলে কন্ট্রিবিউশন অনেক ছিল। হয়তো ওইভাবে উইকেট পেতো না তবে টেস্ট ম্যাচে এক প্রান্তে ৩০/৩৫ ওভার করে গেছে। তখন টেস্টে ড্র করাই অনেক কিছু ছিল। এখন রফিকের জন্ম হলে টি-টোয়েন্টির সেরা খেলোয়াড় হতো। ও যেভাবে ব্যাটিং করতো আর বল করতো। এখনও রফিক বল করলে খেলতে পারিনা। জন্মটা একটু আগায় পিছায় গেছে!
আপনি যখন খেলেছেন তার পর বর্তমান দলটা অনেক এগিয়েছে। এখনকার বাংলাদেশ দল সম্পর্কে মতামত কি? আর আগামি ১০ বছর পর বাংলাদেশ কোথায় পৌঁছাতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
পাইলট : জাতীয় দল এ মুহূর্তে মানসিক দিক থেকে অনেক এগিয়ে আছে। আগে আমরা এদিকে অনেক পিছিয়ে ছিলাম। এশিয়া কাপে ২ বছরে ৩টা ম্যাচ খেলার সুযোগ পেতাম। ২ বছর পর টেন্ডুলকার, আজহারউদ্দিন, গাঙ্গলির বিপক্ষে খেলতে পেতাম। ওরা সমুদ্রে সাঁতার কাটলে আমরা পুকুরে সাঁতার কাটতাম। আসলে মানসিকভাবে অনেক পিছিয়ে থাকতাম। আমরা খেলতাম একটা সন্মানজনক রানে যাওয়ার জন্য। ব্যক্তিগত কিছু ভালো রান হতো। এমন না যে টেকনিক্যালি পিছিয়ে ছিলাম। তখনও আকরাম ভাই, নান্নু ভাই বুলবুল ভাইরা ছিলেন। বিদ্যুৎ, অপি ছিল। ওরা সলিড টেকনিকাল খেলোয়াড়।এখনও ওরা নামলে রান করে। এখনকার খেলোয়াড়রা মানসিকভাবে অনেক এগিয়ে গেছে। আর এটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমার কাছে মনে হয় ৭০/৮০ ভাগ মানসিক শক্তিই এগিয়ে দেয়। ধরেন আপনি টেকনিক্যালি ভালো কিš’ ব্রেট লিকে খেলতে ভয় পান। কোনো লাভ নাই। তবে আপনার কলিজা অনেক বড় হলে অনেক কিছুই করতে পারবেন। আর আমাদের খেলোয়াড়রা অনেক অল্প বয়সে জাতীয় দলে খেলছে। এতে তাদের আত্মবিশ্বাসটাও অনেক বাড়ছে।
আপনি দেখা যায় বিভিন্ন সময় খণ্ডকালীন কাজ করে থাকেন। বিপিএল কিংবা ঢাকা লিগে। নিয়মিত কোচিং করানোর ইচ্ছে আছে কি?
পাইলট : দেশের জন্য সবাই কাজ করতে চায় দিনশেষে আর্থিক দিকটাও দেখতে হবে। আজকে সাকিব, তামিম, মুশফিকরা দেশ চড়ে বেড়াচ্ছে, অন্য দেশকে ডমিনেট করছে তাতে ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব কত তাড়াতাড়ি ওকে কাজে লাগানো যায়। ওরাও কিন্তু ক্রিকেটের স্বার্থে থাকবে না কারণ ধরেন ও এখন ৭ লাখ টাকা আয় করে মাসিক। আর আপনি যদি ওকে দিতে চান ১ লাখ টাকা তাহলে ও থাকবে না। বলবে এর চেয়ে ব্যবসা করাই ভালো।
তাহলে আমাদের দেশের মেধাবীদের কিভাবে কাজে লাগানো যায়?
পাইলট : আমরা এখনও বিদেশি লোকদের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এভাবে আর কতোদিন? আমাদের গ্রেট যেসব প্লেয়ার আছেন, ধরেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ভাই, বাইরে কাজ করছে। হাবিবুল বাশার সুমন, হয়তো সে নির্বাচক। তিনি, নান্নু ভাই, নির্বাচকের চেয়ে বড় ব্যাটিং টেকনিক্যাল উপদেষ্টা। সুমন, ১৫ বছর ধরে খেলেছে, লারা-শচীনের সাথে খেলেছে, তার কি ধারণা, সে যদি এটা এইচপি বা বয়সভিত্তিক দলকে দিতে না পারে, তাহলে তার ধারণাটার আমরা অপব্যবহার করছি। দল নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু’ ১৮ জন থেকে ১৫ জন তো খুব সহজ ব্যাপার। মাশরাফি-তামিম-সাকিব-মুশফিক, এদের তো নির্বাচনের ব্যাপার নেই। নির্বাচক করতে হয় ২-১টি। এর জন্য কোচ অধিনায়ক যথেষ্ট। হ্যাঁ, এটা হতে পারে, সুমন-নান্নুকে নির্বাচকের সঙ্গে উপদেষ্টাও বানিয়ে দিলাম। যদি তাদের ব্রেইনটা নিতে না পারি, তাহলে অর্থের অপচয়। আমি তাহলে এতোদিন কিসের জন্য তৈরি করেছি তাদের? এমন হলে কিন্তু সাকিব-তামিমও আসবে না। সাকিব-তামিমের মাসিক আয় ধরেন সাত লাখ টাকা, ধরলাম দশ লাখ টাকা। এখন যদি তাকে বলি, ভাই এক লাখ টাকা দিব, তাহলে কি সে থাকবে ভাই? ও তো বিদেশ চলে যাবে। রফিকের কথা ধরেন। কেনই বা সুজন ভাই নিজে কোচিংয়ে আসছেন না। যেমন মনি ভাই, বাঁহাতি স্পিনার, রফিকও তাই, ভাল কোচ হতে পারতো। টেকনিক্যাল লোক হতে পারতো। এদেরকে দিয়ে যদি কোচিংয়ে গবেষণা করাতে পারতেন, তাহলে কাজে দিতো। হয়তো জাতীয় দলের জন্য না, স্থানীয় ক্রিকেটে তো কাজে লাগানো যেতো। কতো টাকা লাগবে? হয়তো পঞ্চাশ লাখ টাকা লাগবে। কিš’ ফিডব্যাকটা তো ভাল পেতেন। সেটা বিদেশী কোনও অথর্বকে দিচ্ছেন। হ্যাঁ, কিছু অসাধারণ বিদেশি আসেন। কিন্তু বাকিগুলো সাইনবোর্ড। অস্ট্রেলিয়ায় ফার্স্ট কাস খেলছে, হাই প্রোফাইল। দিনশেষে ক্রিকেট তো একই খেলা, সহজ। সে যা বলবে, ইনিও তাই বলবে। বরং দেশীরা তো আরও অনেক সময় দিতো। বিদেশিরা তো নির্দিষ্ট সময়ের পর আর কাজ করবে না। কিন্তু দেশীরা তো কাজ করবে, হয়তো সাকিবের সঙ্গে কথা বলার পর ওর মায়ের সঙ্গেও কথা বলবে, মানসিকভাবে তৈরি করবে।
ভারতের দিকে দেখেন, তাদের সাপোর্টিং স্টাফ সব দেশি। এতোদিন হায়ার করেছে, ওদের আইডিয়া নিয়েছে, মিশেছে। এখন তো দেয়ার সময়। আমরা এদিক দিয়ে পিছিয়ে আছি। যারা এখন আমাদের কোচ আছেন, তারা কতোখানি কি করেন, আমার সন্দেহ। কোচিং তো এতো সহজ না, দুই রকমের আছে। একটা ত”ণমূলের কোচিং, ঠিক আছে, সারাদিন খাটিয়ে মারো। হাই লেভেলে শুধু আইডিয়া শেয়ার করবে। আমার মনে হয়, ক্রিয়েটিভ লোকের সংখ্যা খুবই কম। ব্যাট বল দিয়ে মারা তো কোচিং না। হাই ক্যাচিং তো একটা ছেলেও পারবে। আমার কাছে মনে হয়, এটা মেন্টালি করতে হবে। ম্যান টু ম্যান কোচিং। দলগত কোচিংয়ে তো ফল নাই।
১৯৯৭ এর আইসিসি ট্রফিতে দেখেছি আপনি বেশ হাত খুলেই খেলেছেন। কিন্তু এরপর আপনি অনেকটা ধীর গতিতে ব্যাটিং করেছেন। এর কারণ কি? হঠাত এতটা বদলে যাওয়া?
পাইলট : আমার শুরু সময়ে আমি অনেক শট খেলতাম। রাজশাহীতে যখন খেলতাম, ওপেনিং ওয়ান ডাউনে খেলেছি। পুল-কাট। দুজন শ্রীলঙ্কান এ দেখেই আমাকে নিয়ে আসলো। টেস্টের শুরুর দিকে হয়তো উইকেটে চলে গেছে দ্রুত, সবার কথা, পাইলট উইকেটে থাকো। আমি আবার বল ছাড়তে পারতাম ভাল। সম্মানজনক একটা জায়গায় যেভাবে যাওয়া যায়, সেভাবে খেলতে খেলতে স্লো হয়ে গেছি। যদি তখন কোনো সিনিয়র বা ম্যানেজমেন্ট আমাকে বলতো, না ছাড়ার দরকার নাই, মারার বলটা মারো। অনেকক্ষণ ছাড়তে ছাড়তে, একটা ভাল ডেলিভারি হয়ে গেল, আউট হয়ে গেলাম। কি হলো, ১০০ বলে ২০ করলাম, ৪০ বলে ৫ করলাম। সেজন্য এখনকার ধারণাটা ভাল, মারার বল হলে মারো। ভাল বল রেস্পেক্ট করো। এখন তো টেস্ট ওয়ানডের মতো হয়ে গেছে।
হঠাৎ করেই দল থেকে বাদ পড়েছেন। এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ম্যাচে আপনাকে বিদায় দেয়া হয় কিš’ খেলতে পারেন নি। এটাতে কোনো কষ্ট আছে বা কোনো আক্ষেপ?
পাইলট : কোনো আক্ষেপ নাই। আল্লাহ যে এখানে নিয়ে এসেছে, এটাই অনেক। হয়তো জাতীয় দলে খেলেছি, কিš’ সবচেয়ে বড় কথা, আল্লাহ আমাকে দুইটি সুস্থ হাত পা দিয়েছেন, করে খাওয়ার মতো। এর বেশি আর কি চাইবো! আমাকে তো অ্যাটলিস্ট ভিক্ষা করে খেতে হয়নি, কাজ করার সামর্থ্য দিয়েছে। হয়তো হারতেছি, খারাপ খেলা হচ্ছে, ভাল খেলা হচ্ছে, কিন্তু দিনশেষে অনুভব করছি, এটাই আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া। যখন এটা চিন্তা করতেছি, তখন আর কিছু মনে থাকে না। কিন্তু আপনার কথার সঙ্গে এটা যোগ করবো, যারা সিনিয়র প্লেয়ার আছে, ধরেন, মাশরাফি, সাকিব, তামিম রাজ্জাক। যারা ম্যানেজমেন্ট আছে, সরাসরি উপর মহল না, যারা প্লেয়ারদের আশেপাশে থাকে, তাদের একটা গাইডেন্স থাকা উচিৎ। আপনি সিনিয়র বাদ দেবেন, একটা জুনিয়রকে তৈরি করবেন, আপনি সিনিয়রকে সরাসরি বলে দেন, তোমার কাছে এরকম চাচ্ছি, নাহলে ওই জুনিয়রটাকে নেব। আর সিনিয়রকে একটু সময় দিতে হবে, সুযোগ দিতে হবে। তিন মাস, ছয় মাস আগে রিটায়ার করলে সমস্যা নাই, কিন্তু রিটায়ার না করেই চলে যাবে, এটা ঠিক না। রাজ্জাক যেমন, বাদ পড়ে গেল। এটা দুঃখজনক। চাকরি করলেও তো আপনি আশা করবেন, আপনার মালিক আপনাকে ভালভাবে বিদায় দেবেন। যে নতুন একটা লোক পেয়েছি, তুমি এখন যাও।
আপনারা যখন খেলেছেন ঘরোয়া ক্রিকেট এক সময় অনেক জনপ্রিয় ছিল। এখন মাঠ প্রায় দর্শকশুন্য। আপনার কাছে এর কারণ কি মনে হয়? আর এর থেকে উত্তরণের উপায়ই বা কি?
পাইলট : আমরা ইন্টারন্যাশনাল দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হচ্ছি, আপনি ঘরোয়া দেখবেন না। এখানে তো পলিসি আছে, প্রচারেই প্রসার। আগে তো মানুষ আন্তর্জাতিক সেভাবে দেখতো না। এখন সে অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে। এখন প্রচার করতে হবে। আমার কাছে মনে হয়, ক্রিকেট বোরিং খেলা। আগে, যখন মোবাইল ফেসবুক ছিল না, তখন ভিন্ন কথা। মানুষ তো এখন ব্যস্ত হয়ে গেছে। এখন মানুষ ভাবে, কি দেখবো মাঠে বসে থেকে। যদি, টিভিতে দেখানো হতো, দেখতো। আমিই তো অনেক সময় মিরপুরে গিয়ে খেলা দেখি না, টিভিতে দেখি, তাহলে খেলাও দেখতে পারি, কাজও করতে পারি। প্রমোশনটা গুরুত্বপূর্ণ। ডমেস্টিকগুলা লাইভ টেলিকাস্টে দেখানো উচিৎ। ঘুরে ফিরে তো এখন টিভিতে একই জিনিস। ক্রিকেট দেখালে মানুষ দেখবে। আমিইতো গত এক মাস টিভি দেখি না, কাল হঠাৎ করে দেখেছি। আমি তো ফেসবুকে সব নিউজ পেয়ে যাই। গুলিস্তানে পানি, চিটাগংয়ে পানি। খেলা দেখানো মানে একটা ভিন্ন অ্যাঙ্গেল তৈরি করা। জ্যাম-পানি-শীত, আপনি খেলা দেখবেন কখন। এতো তো সময় নাই। বাজার না করে নিয়ে গেলে তো বউ মারবে!