ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের ভোট উৎসব নিজেরাই নির্বাচিত করলো নিজেদের নেতৃত্ব

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৭, ১:২২ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক



রঙ-পেন্সিল দিয়ে পোস্টার তৈরি করে টানানো হয়েছে বিদ্যালয় চত্বরে। লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছে কিছু শিক্ষার্থী। শিশুদের মধ্যে থেকেই কেউ কেউ অবতীর্ণ হয়েছে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের ভূমিকায়। ছিল নির্বাচন কমিশনার, প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারও। শুধু তাই না, দেশি-বিদেশি সাংবাদিকও সেজেছিলো তারা। এভাবে নিজেরাই নিজেদের নেতুত্ব নির্বাচিত করলো ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা।
রাজশাহীর পবা উপজেলার ভালাম ভবানিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছিল এমন দৃশ্য। শুধু এই বিদ্যালয়েই নয়, রাজশাহীর প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছিল এই ভোট উৎসব। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজশাহীর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে অনুষ্ঠিত হয় স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন। সকাল থেকে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে ভোট দেয় ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। নির্বাচনে ছাত্র-ছাত্রীরাই প্রার্থী হয় এবং ভোট দেয়। শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিষয়ে তত্ত্বাবধান করেন স্ব-স্ব স্কুলের শিক্ষকরা।
ভালাম ভবানীপুর সরকারি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বরকতুল্লা জানান, এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকদিন থেকেই শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দেয়। সাধারণ নির্বাচনের মতোই প্রার্থীরা বিজয়ী হতে ভোটারদের কাছে ভোট চেয়েছে। এই বিদ্যালয়ে মোট ভোটার ছিলো ২৬০ জন। ১৪ জন প্রার্থী এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলো।
জেলার বাঘা উপজেলার আড়ানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সূচনা সরকার বলে, ‘আব্বু-আম্মুকে ভোট দিতে দেখেছি, কিন্তু আমরা ভোট দিতে পারি না। এবার আমরাও ভোট দিলাম।’
রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলার এক হাজার ৪৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে প্রতিটি বিদ্যালয়ে সাতজন করে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। আগামীকাল শনিবার বিজয়ীদের শপথ অনুষ্ঠিত হবে। ওইদিনই তাদের মাঝে দফতর বণ্টন হবে। বিদ্যালয়ের সাতটি প্রধান কার্যক্রম তদারকি করবে সাত সদস্যের এই কাউন্সিল। এসব কার্যক্রম হচ্ছে- পুস্তক ও শিখন সামগ্রী, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, পানি সম্পদ, দুপুরের খাবার এবং অভ্যর্থনা ও আপ্যায়ন। প্রধান শিক্ষক এসব দায়িত্ব বণ্টন করে দেবেন। নির্বাচিত স্টুডেন্ট কাউন্সিল প্রতি মাসে অন্তত একটি করে সভা করবে। তবে প্রতি ছয় মাস অন্তর সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতিতে সাধারণ কাউন্সিল সভা করতে হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর আখতার জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, সকাল ৯টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত জেলা প্রতিটি বিদ্যালয়ে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর শিক্ষার্থীরাই ভোট গণণা করে ফলাফল ঘোষণা করে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতন্ত্র চর্চার সংস্কৃতি তৈরিতে এ ধরনের আয়োজন ভূমিকা রাখবে।
উপশহর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় : রাজশাহী উপশহর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে সাতটি পদে মোট ১৫জন শিক্ষার্থী ভোটে অংশগ্রহণ করে। এ পদগুলি হলো, পরিবেশ, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, অভ্যর্থনা, পানি সম্পদ, মিডডেমিল, পুস্তক ও শিখন।
তেরখাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় : এ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত। এর উদ্বোধন করেন, বোয়লিয়া থানার সহকারি শিক্ষা অফিসার মোসা, জোবাইদা খানম। এতে তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে মোট ভোটার ১৯৯ জন। পরিচালনা করেন, মো. লিয়াকত। এসময় নির্বাচন কমিশনার, প্রিজাডিং অফিসার, সহকারি প্রিজাডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, আনসার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।