মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির শিশুরাও আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে নিজের মাতৃভাষায় লেখা প্রাক-প্রাথমিক বই পাবে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির ২৪ হাজার শিশুর হাতে তাদের নিজেদের ভাষায় লেখা বই তুলে দেয়া হবে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ রোববার ঢাকার মাতুয়াইলে বিনামূল্যে বিতরণের বই ছাপানো হচ্ছে এমন দুটি ছাপখানা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
শিক্ষামন্তীর ভাষায়, ‘‘আদিবাসী নৃ-গোষ্ঠীর সকল ভাষায় লিপি নেই, সাহিত্য নেই, লেখা নেই। যেটা আছে আমরা চাই সেটাতেই তারা শিখুক। মায়ের কোল থেকে নেমেই সে প্রথমে স্কুলে যায়, বাংলা ভাষায় কথা সে বুঝতে পারে না। “ঠিক সময়ে তাদের হাতে এসব বই পৌঁছে দেব। আমরা প্রাথমিক স্তরে সেই ধরনের শিক্ষকও তৈরি করতে চাই।”
এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দৈনিক সোনার দেশসহ দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের আদিবাসীরা দীর্ঘ দিন ধরে আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম চালুর দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের দাবি অনুযায়ী অন্তত প্রাথমিক পর্যন্ত মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে হবে। অবশ্য মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম চালুর বিষয়টি খুব সহজ ছিল না, এই কারণে যে, আদিবাসীদের সব গোষ্ঠির পৃথক পৃথক ভাষা থাকলেও ওইসব ভাষার কোনো লিপি ছিল না। বর্তমান মহাজোট সরকার সেই উদ্যোগটি গ্রহণ করে। বাংলা লিপিতেই আদিবাসীদের কয়েকটি ভাষার সংস্করণ তৈরি করা হয়েছে। যদিও দুএকটি আদিবাসী জনগোষ্ঠির এ নিয়ে ভিন্নমত আছে। সেটা কিছুটা জটিলতাও তৈরি করেছে। ভিন্ন মতাবলম্বীদের মতে তাদের ভাষার লিপির সংস্করণ করতে হবে রোমান হরফে। অবশ্য এ নিয়ে তাদের মধ্যেই দুটি মত রয়েছেÑ যে কারণে সমস্যাটির সমাধান হয়নি। তবে যে গুলোর সমাধান হয়েছে সে সব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির ভাষার লিপির সংস্করণ হয়েছে।
বর্তমান সরকার সার্বজনিন শিক্ষার ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করেছে। দেশের সকল শিশু যাতে স্কুলে যেতে পারে এবং শিক্ষিত হতে পারে তার জন্য নানাবিধ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। সেই লক্ষে স্কুলের সংখ্যা বৃদ্ধি, বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন উপবৃত্তি চালু এবং বছরের শুরুতেই বিনামূল্যে বই বিতরণসহ শিক্ষার মানোন্নয়নে বিস্তর কর্মসূচি চালু আছে।
আদিবাসীদের মধ্যে এখনো পর্যন্ত তেমন শিক্ষিত লোকের বিস্তর অভাব রয়েছে। আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষায় এটি একটি চ্যালেঞ্জ বটে। যদিও শিক্ষা মন্ত্রী একই সাথে বলেছেন তাদের সরকার শিক্ষক তৈরির উদ্যোগ নিবেন। অবশ্যই এই অচলায়তন ভাঙ্গার জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। আদিবাসী শিক্ষক দ্বারাই আদিবাসীদের মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্যোগ ছাড়া তাদের ভাষা ভাব ও সংস্কৃতির সংযোগ ঘটান যাবে না। এ লক্ষ্য হাসিল করতে হলে আদিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নের সাথে সাথে তাদের ক্ষমতায়নের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা আশান্বিত এই কারণে যে, উদ্যোগটা শুরু হয়েছে। এটিকে উন্নয়ন-ধারাবাহিকতায় এনে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে। এমন দিন প্রত্যাশা করা অমূলক নয় যে, পাক-প্রাথমিক থেকে আদিবাসীদের মাতৃভাষায় শিক্ষার এই অভিযাত্রা মাধ্যমিক পর্যায়ে নেয়া সম্ভব হবে। কেবল তখনই আদিবাসীরা তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্প- সাহিত্য সুরক্ষায় নিজেরাই সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে। আমরাও তেমন দিনেরই অপেক্ষা করি।