মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১১ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহী বিভাগে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়নে অনিম দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারণে ৭ জনের ডিলারশিপ বাতিল করা হয়েছে। একজন ডিলারের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৬ ডিলারকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।
রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক দফতরের সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
উল্লেখ্য, সরকার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় হতদরিদ্রদের ১০ টাকা কেজি দরে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল সরবরাহ করছে। এ বছরের ৭ সেপ্টেম্বর থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় সরকার দেশের ৫০ লক্ষ হতদরিদ্র অর্থাৎ ওই সংখ্যক পরিবারে বছরে ৫ মাস নির্দিষ্ট মূল্যে ও পরিমাণে চাল সরবরাহ করবে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার বছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল হতদরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করবে। সরকার দরিদ্র জনগোষ্ঠির খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দিয়েছে। সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী এই কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়িত করলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রার অভিষ্ট লক্ষে পৌঁছান সম্ভব হবে।
ইতোমধ্যে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির জন্য দরিদ্র জনগোষ্ঠি বাছাই ও চাল বিতরেণের ক্ষেত্রে দুর্নীতির নানা অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগ দেশের সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে। সরকারও বিষয়টিকে তাৎক্ষণিকভাবে আমলে নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। ইতোমধ্যেই ডিলারশিপ বাতিল, জরিমানা আদায়, এমনকি ডিলারকে কারাগারে যেতে হয়েছে। তদুপরি অনিয়ম থেমে নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলার ৬৭ উপজেলার ৫৬৫টি ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই হতদরিদ্র হিসেবে কার্ড পেয়েছে ৭ লাখ ১৮ হাজার ২৯১ জন। এর জন্য ১ হাজার ১৭৫ জন ডিলার নিয়োগ করা হয়েছে।
এ কার্যক্রম চলার শুরুতেই বিচ্ছিন্নভাবে নানা অভিযোগ উঠতে থাকে। এসব অভিযোগের মধ্যে অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছল ব্যক্তি, ইউপি চেয়ারম্যান বা ডিলারের আত্মীয়-স্বজনের নাম তালিকাভুক্ত করা এবং দলীয়করণসহ ওজনে চাল কম দেয়া হয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সংবাদপত্রে প্রকাশিত অভিযোগের অধিকাংশেরই সত্যতা পাওয়া গেছে বলে স্বীকার করেন। ২৫ অক্টোবর রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত এক মতবিনময় সভায় মন্ত্রী এই তথ্য দেন। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সারা দেশে ৮টি টিম কাজ করছে।
আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী রাজশাহী বিভাগে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়নে অনিয়মের দায়ে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ডিলারদের কাছ থেকে ইতোমধ্যেই ৯৪ হাজার ৮৯০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। একজন ডিলারের জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং একজন ফড়িয়া ব্যবসায়ীকে তিন দিনের কারাদ- প্রদান করা হয়েছে।
খাদ্য বিভাগের সূত্র জনায়, খাদ্য বিভাগ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বদ্ধ পরিকর। এরই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই উপজেলা, জেলা ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক দফতরে অভিযোগ বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে খাদ্য বিভাগের ওয়েবসাইটে গৃহিত ব্যবস্থার তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও নিবিড় মনিটরিঙে মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তারা কাজ করছেন। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি নভেস্বর ২০১৬ মাসের মধ্যে শতভাগ সম্পন্ন হবে বলে অশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে। একই সাথে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় পর্যায়ে (মার্চÑএপ্রিল) এ কর্মসূচি শতভাগ নির্ভুল, স্বচ্ছতা ও সফলতার সাথে বাস্তবায়িত হবে বলে খাদ্যবিভাগ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।