রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
দুই বছর আগে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘পদ্মা নদীতে চুবানি দেওয়া’ এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘সেতু থেকে টুস করে পদ্মা নদীতে ফেলে দেওয়া’র যে বক্তব্য রেখেছিলেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাতে হত্যার হুমকি প্রকাশ পেয়েছে অভিযোগ তুলে চট্টগ্রামে মামলার আবেদন করা হয়েছে।
রোববার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম জুয়েল দেবের আদালতে এ মামলার আবেদন করেন নগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি সৌরভ প্রিয় পাল।আদালত মামলার আবেদনটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
মামলার আবেদনে একমাত্র আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে। ঢাকার ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরকে তার ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাদী সৌরভ প্রিয় পাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পদ্মা সেতু থেকে ফেলে খালেদা জিয়াকে হত্যার হুমকি ও হত্যার জন্য আওয়ামী সন্ত্রাসীদের প্ররোচনা দেওয়ায় শেখ হাসিনাকে একমাত্র আসামি করে মামলা করেছি।”
বাদী আইনজীবী রেজাউল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলার আবেদনটি আমলে নিয়ে আদালত পিবিআইকে তদন্ত করে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
“এটি পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কোন কর্মকর্তা তদন্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।”
২০২২ সালের ১৮ মে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল আওয়ামী লীগ।
সেই অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেদিনের বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “একটি এমডি পদের জন্য পদ্মা সেতুর মতো সেতুর টাকা বন্ধ করেছে, তাকে পদ্মা নদীতে দুইটা চুবানি দিয়ে তোলা উচিত। মরে যাতে না যায়, পদ্মা নদীতে একটু চুবানি দিয়ে সেতুতে তুলে দেওয়া উচিত। তাহলে যদি শিক্ষা হয়।
“পদ্মা সেতুর অর্থ বন্ধ করাল ড. ইউনূস। কেন? গ্রামীণ ব্যাংকের একটি এমডি পদে তাকে থাকতে হবে।”
ওইদিনের বক্তব্য শেখ হাসিনা বলেন, “খালেদা জিয়া বলেছিল, যে জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, কারণ বিভিন্ন স্প্যানগুলো যে বসাচ্ছে, ওটা ছিল তার কাছে জোড়াতালি দেওয়া। তো বলছিল, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, ওখানে চড়া যাবে না। চড়লে ভেঙে পড়বে। আবার তার সাথে তার কিছু দোসররাও।
“তাদেরকে কি করা উচিত? পদ্মা সেতুতে নিয়ে যেয়ে, ওখান থেকে পদ্মা নদীতে টুস করে ফেলে দেওয়া উচিত।”
মামলার আবেদনে বলা হয়, “২০২২ সালের ১৮ মে আসামি (শেখ হাসিনা) একখানা তথাকথিত সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন।
“উক্ত সংবাদ সম্মেলনে আসামি তার দলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এবং বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার যে গভীর ষড়যন্ত্র ও নীলনকশা তার মনে সুপ্তভাবে বিদ্যমান ছিল, তা প্রকাশ্যে বিষোদগারের মাধ্যমে দেশবাসীর নিকট প্রকাশ করেন।”
শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে এজাহারে বলা হয়, “ওই বক্তব্যের মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপির প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং দেশের একমাত্র নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে হত্যার সুপ্ত ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন ও তাদের মানহানি করেছেন।”
ওই বক্তব্যের মাধ্যমে শেখ হাসিনা বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘হত্যার হুমকি, হত্যার ষড়যন্ত্র এবং হত্যার প্ররোচনা’ দিয়েছেন বলে মামলার আবেদনে অভিযোগ করা হয়।
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ