বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৬ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, গণহত্যাকারী খুনি হাসিনার বিচার আমরা দেখতে চাই। সংস্কার দেখতে চাই এবং নতুন সংবিধান দেখতে চাই। এই প্রজন্ম বাংলাদেশর জণগণের কাছে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে যে একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান এই দেশের মানুষকে উপহার দেবে। এই সংবিধান বাংলাদেশের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করবে। যেই সংবিধান ইনসাফ নিশ্চিত করবে। স্বৈরাতন্ত্র এবং পরিবারতন্ত্রের অবসান ঘটাতে হবে এই বাংলাদেশ থেকে। মেধা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে আমরা নতুন রাজনীতি এবং বন্দোবস্ত গড়ে তুলব।
রোববার (৬ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে সভায় তিনি এ কথা বলেন। দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রার ষষ্ঠ দিনে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা এনসিপি এ পথসভার আয়োজন করে।
তিনি বলেন, রাজশাহী সমাবেশ জুলাই পদযাত্র ইতিহাসে স্মরণ হয়ে থাকবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর হতে যাচ্ছে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমরা রাজপথে নেমে ছিলাম। অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমার ভাই আবু সাইদ পুলিশের বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়েছিল। অনেক স্বপ্ন নিয়ে রাজশাহীর ভাইয়েরা শহিদ হয়েছিলেন। আমাদের স্বপ্ন ছিল কেবল শেখ হাসিনার পতন নয়- স্বপ্ন ছিল একটি নতুন বাংলাদেশ। সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশের পুনর্গঠন। কিন্তু দুঃখের কথা- ৫ আগস্টের পরে নানা শক্তির ষড়যন্ত্রে সংস্কারের পথ রুদ্ধ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি আমাদের ভুল হয়েছিল। আমাদেরও সীমাবন্ধতা ছিল। কিন্তু আজকে আমরা আপনাদের সামনে শপথবদ্ধ। এই ভুল আমরা আর করব না। আমরা আর সুযোগ দেব না। যারা এই গণঅভ্যুত্থানকে, এই সংস্কারের যাত্রাকে ব্যাহত করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশের জণগণ তাদের কোনদিন ক্ষমা করবে না। ৫ আগস্ট ২০২৪-ই আমাদের লক্ষ্য ছিল ফ্যসিবাদের পতন। এবার আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের পুনর্গঠন। ৫ আগস্ট আমাদের লক্ষ্য ছিল গণভবন, এবার আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে জাতীয় সংসদ ভবন। আমরা গণভবনকে জয় করেছি। এবার আমরা জাতীয় সংসদ ভবনকে জয় করব। ইশাআল্লাহ জাতীয় সংসদে তারুণ্যে অভুতপূর্ণ বিজয় উদযাপিত হবে সামনের নির্বাচনে।
তিনি বলেন, রাজশাহী ঐতিহ্যের নগরী। রাজশাহী জ্ঞান, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির নগরী। এই পদ্মারপাড়ে রাজশাহী যুগযুগ ধরে টিকে ছিল। আমরা স্মরণ করছি- মজলুম জননেতা মাওলা ভাসানীকে। তিনি এই রাজশাহী শহর থেকে ফারাক্কা লংমার্চ শুরু করেছিল। আমরা ঘোষণা করছি যদি আমাদের নদীর হিস্যা, আমাদের পানির হিস্যা বুঝে নিতে হয়। আমাদের সীমান্তকে রক্ষা করতে হয়- তাহলে আমরা আবারও লংমার্চ শুরু করব, রাজশাহী শহর থেকে।
জুলাই সনদ, জুলাই ঘোষণাপত্র আদায় করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন- বন্ধুগণ আপনারা প্রস্তুত হন- আগামি ২৩ আগস্ট শহিদ মিনারে দেখা হবে। আমরা জুলাই সনদ, জুলাই ঘোষণাপত্র আদায় করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। যারা বলে জুলাই কেবল আবেগের বিষয়, যারা বলে জুলাইকে কোন সাংবিধানিক ভিত্তি দেওয়ার প্রয়োজন নাই- তাদেরকে দেখিয়ে দিতে হবে ২৩ আগস্ট ২০২৫ সালে বাংলাদেশের জনগণ আবারও মুজিববাদী সংবিধানের বিরুদ্ধে একত্রিত হবে। যারা জুলাইকে সংবিধানে জায়গা দিতে চায় না, যারা জুলাইকে কোন আইনি কাঠামতে জায়গা দিতে চাই না, তারা মুজিববাদে ফেরার রাস্তা তৈরি করতে চাই। তারা মুজিববাদের নতুন পাহারাদার হিসেবে নিজেদের ঘোষণা করেছে। মুজিববাদের যারা পাহারাদার তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবশ্যই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, এই রাজশাহী জেলা ও নগরকে আমরা আবার পুনর্গঠন করতে চাই। এই রাজশাহীর হারানো ঐতিহ্যকে আমরা আবার ফিরিয়ে আনতে চাই। এই রাজশাহীতে কর্মসংস্থান থাকবে, রাজশাহীতে শিক্ষা, চিকিৎস থাকবে। রাজশাহীতে শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হবে। উন্নয়ন মানে কেবল ঢাকার উন্নয়ন নয়। উন্নয়নের বিকেন্দ্রিকরণ করতে হবে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রি করণ করতে হবে। এটারজন্যই আমাদের সংস্কার, এটার জন্যই আমাদের নতুন দেশ। এটার জন্যই জুলাই পদযাত্রা। আমাদের জুলাই পদযাত্রার বার্তা, আমাদের নতুন দেশ গঠনের বার্তা। দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশের বার্তা।
সমাবেশে বক্তব্য দেন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সার্জিস আলম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ, রাজশাহী মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারী মোবাশ্বের আলী প্রমুখ।