ছবি/সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ইদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালিন অবকাশ শেষে মাধ্যমিক বিদ্যালয় টানা ২৩ দিন বন্ধ থাকার পর খুলেছে গেল রোববার (২২ জুন)। আর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে টানা ২১ দিন ছুটি শেষে মঙ্গলবার (২৪ জুন) খুলবে। এর মধ্যে আবারও এসেছে করোনাভীতি। ২০২২ সালের মার্চ মাসে বন্ধ হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেড় বছর পর ২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। তবে এবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে রাজি না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। স্কুল খুলে গেলেও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহা দেখা দিয়েছে।
এদিকে ২১ দিন বন্ধের পর মঙ্গলবার (২৪ জুন) থেকে খুলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। প্রাথমিকেও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের এই নির্দেশ পালনে সহায়তা করবে শিক্ষকরা।
রোববার ও সোমবার মাধ্যমিক স্কুলগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ক্লাসে মাস্ক ব্যবহার ও হাত ধোয়ার মত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অনীহা আছে। শিক্ষকরাও কঠোর হতে পারছেন না। মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।
রাজশাহী মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক সাবিনা সুলতানা বলেন, শিক্ষকরা মাস্ক পরে আসলেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সে প্রবণতা খুবই কম। আমরা স্কুলের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য জোর দিচ্ছি। তাদের স্কুল চলাকালীন সময়ে মাস্ক পরিধান করতে বলা হচ্ছে। অনেকে এই নির্দেশ মানতে চাচ্ছে না। ভবিষ্যতে তারা মাস্ক পরবেন বলে আশা করছি।
রাজশাহী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক সেলিনা বেগম বলেন, ক্লাসে ছাত্রীদের কেউ কেউ মাস্ক পরলেও অনেকেই পরেননি। তবে আমরা শিক্ষার্থীদের বলে দিচ্ছি, আশা করছি তারা যথাযথভাবে মাস্ক ব্যবহার করবে।
গোদাগাড়ী উপজেলার কাদিপুর-১ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শওকত আর খাতুন বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হয়েছে। আমাদের আবার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে হবে। শিক্ষার্থীরা যেন হাত ধুয়ে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে তারও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর মুখে মাস্ক থাকে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।
রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এ.কে.এম আনোয়ার হোসেন বলেন, মঙ্গলবার (২৪ জুন) প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলছে। এবার ইদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি ছিল ২১ দিন। প্রতিটি স্কুলে শিক্ষার্থীদেও স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রথমদিনে স্কুল শিক্ষার্থীদের ভালো করে হাত ধুয়ে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে।
রাজশাহী জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল ওয়াহাব বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা প্রতিটা থানা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও নির্দেশনা মানতে বেশকিছু ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক মোহা. আছাদুজ্জামান বরেন,বর্তমানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের যে হার, তাতে স্কুলের মাধ্যমে সংক্রামণ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হয়েছে। আর যদি সংক্রামণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরামর্শক্রমে সরকারই স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আপাতত সে শঙ্কা নেই।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের যৌথ নির্দেশনার আলোকে দেশের স্কুল, কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ডেঙ্গু ও করোনা মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে নিতে হবে। প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন ও তদারকির জন্য বিশেষভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা আছে, সাবান ও পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। জনবহুল স্থানে যাওয়া এড়িয়ে চলা এবং বাইরে বের হলে মাস্ক পরিধান করতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং অন্যদের থেকে অন্তত তিন ফুট দূরে থাকতে হবে। চোখ, নাক ও মুখে হাত দেয়ার আগে হাত পরিষ্কার করতে হবে। হাঁচি বা কাশির সময় মুখ ঢাকতে টিস্যু, রুমাল বা কনুইয়ের ভাঁজ ব্যবহার করতে হবে।
এদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সোমবারের (২৩ জুন) তথ্যে দেখা গেছে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ পর্যন্ত আটজন রোগী চিকিৎসক নিয়েছেন। এর মধ্যে এখন শুধু একজন রোগী ভর্তি আছেন। ছয়জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মারা গেছেন একজন।