খেলাপি ঋণ ৬৫ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা

আপডেট: নভেম্বর ২০, ২০১৬, ১১:৩২ অপরাহ্ণ


সোনার দেশ ডেস্ক
ব্যাংকিং খাতে বেড়েই চলছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর শেষে এ খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
খেলাপি ঋণের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি করা (জুলাই-সেপ্টেম্বর ’১৬) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম করছে। এছাড়া বাছবিচার ছাড়াই ঋণ অনুমোদন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সর্বোত্তম পরিপালন এবং ঋণ আদায় কার্যক্রম জোরদারের কারণেই খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এতে ব্যাংকের তহবিল ব্যয় বাড়ছে। এখনই সতর্ক ও সচেতন না হলে আগামীতে অনেক ব্যাংক অস্তিত্ব হারাবে। বিশেষ সুবিধায় নিয়মিত ঋণ আবারো খেলাপি হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্টরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। ফলে মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ। যা আগের প্রান্তিক জুন শেষে ছিল ৬৩ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা।
তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিক জুন শেষে যার পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। ফলে গেল তিন মাসে এ খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এ সময়ে বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিক জুন শেষে যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। ফলে গেল তিন মাসে এ খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১৩ কোটি টাকা। এ সময়ে বিশেষায়িত খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ অপরিবর্তিত রয়েছে। যার পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। তবে এ সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমে দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিক জুন শেষে যার পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৭৭ কোটি টাকা।
ঋণ খেলাপি বেড়ে যাওয়া ব্যাংকিং খাতের জন্য উদ্বেগজনক উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ব্যাংকগুলোর অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। আর এটি খুবই দুশ্চিন্তার বিষয়। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ। তাদের যেন কোনো জবাবদিহিতা নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংকগুলোকে টার্গেট নির্ধারণ করে দিতে হবে। আর যেসব ব্যাংক তা অর্জন করতে পারবে না ওই সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আর যারা ভালো করবে তাদের পুরস্কৃত করতে হবে। যাতে অন্যরা উৎসাহ পান।
সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকগুলো বাছবিচার না করেই ঋণ দিচ্ছে। এ নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এছাড়া নতুন ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে ব্যাংকগুলোকে। একই সঙ্গে পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপকদের জবাবদিহীতায় আনতে হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, বিশেষ সুবিধায় যে বড় বড় ঋণগুলো নিয়মিত করেছে তারা ধারাবাহিকভাবে ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। ফলে ঋণ খেলাপি বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সব সময় ব্যাংকগুলোকে এ বিষয়ে চাপ দিচ্ছে। এছাড়াও সরকারি ব্যাংকের এমডিদের নিয়ে তিন মাস পর পর খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য বৈঠক করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।-জাগো নিউজ