বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৯ কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
বিভক্তির চার বছর পর ফের ঐক্যবদ্ধ হওয়া ঘোষণা দিয়েছে গণফোরামের দুই অংশ।বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে গণফোরামের একাংশের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী এ বিষয়ে যৌথ ঘোষণাপত্র পড়ে শুনিয়ে বলেন, “আমরা দ্রুততম সময়ে ঐক্যবদ্ধ গণফোরাম এর জাতীয় কাউন্সিল করব।”
নেতৃত্বের কোন্দলে চার বছর আগে আলাদা হয়ে গিয়েছিল গণফোরামের দুই পক্ষ। কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন অংশটির বাইরে গিয়ে আরেকটি কমিটি ঘোষণা করেছিলেন মোস্তফা মহসীন মন্টু এবং তার অনুসারীরা।
মন্টুর অংশের নেতা সুব্রত চৌধুরী ঐক্যের ঘোষণা দিয়ে বলেন, “৩১ বছরের ধারাবাহিকতায় গণফোরামের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মী সংগঠক ও সমর্থকদের পক্ষ থেকে আমরা আজ এই শুভদিনে আমাদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেনের উপস্থিতিতে গণফোরাম ঐক্যবদ্ধভাবে সকল স্তরে রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ও সামাজিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছি।”
‘অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সজাগ থাকুন’
দলের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘গণফোরাম’ ব্যানারে এই আলোচনা সভায় কামাল হোসেন ছিলেন প্রধান অতিথি। দুই অংশের নেতাদের মধ্যে মোস্তফা মহসীন মন্টু, অ্যাডভোকেট এসএম আলতাফ হোসেন, মো. মিজানুর রহমানও বক্তব্য দেন।
কামাল হোসেন বলেন, “ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার এক নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। দেশের জনগণ স্বপ্ন দেখছে এক স্বাধীন ও বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশের।
“কোনো অশুভ শক্তি বা ষড়যন্ত্র যেন এই রক্তস্নাত বিজয় ও মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। এই অর্জনকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমি আশা করব, গণফোরামের নেতা-কর্মীরা সকল বিভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের মধ্য দিয়ে নতুন করে যাত্রা শুরু করবে।”
কামাল হোসেন বলেন, “ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিগত ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট সরকারের বন্দিদশা থেকে জনগণ নতুন করে মুক্তিলাভ করেছে। অভিবাদন সংগ্রামী জনতাকে। ছাত্র-জনতা আবারও প্রমাণ করেছে, এই দেশ স্বৈরশাসকের নয়, এই দেশ জনগণের।
“মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও অবিশ্বাস মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে বিপন্ন করে তুলেছে এবং বিরোধী দলগুলোর ওপর বিগত সরকারের সীমাহীন দমন পীড়নের ফলে দেশ আজ চরম সংকটে পতিত হয়েছে। ফলে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো আমাদের গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করার সুযোগ পেয়েছে। যে কারণে জাতি হিসাবে আমরা লজ্জিত হয়েছি।”
বিভক্তি এবং পূর্বাপর আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে আসা কামাল হোসেন এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি থেকে বেরিয়ে আসা সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিকের নেতৃত্বে ১৯৯৩ সালের ২৯ অগাস্ট প্রতিষ্ঠা হয় গণফোরাম। সে সময় কামাল সভাপতি, আর মানিক সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন।
সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিকের মৃত্যুর পর সাধারণ সম্পাদক হন মোস্তফা মহসীন মন্টু।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কামাল হোসেনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও নানা সিদ্ধান্তের ফলে খুব বেশিদিন কেউই থাকতে পারেননি দলটিতে। প্রতিষ্ঠাকালীন অনেক সদস্যই বহু আগে সংগঠন ছেড়ে যান, পরে আবার অনেকে যোগ দেন।
কোভিড মহামারীর মধ্যে ২০০০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে বর্ধিত সভা করে আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে দুই ভাগ হয় গণফোরাম। এরপর দুই পক্ষকে এক করতে কয়েক দফা উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা এতদিন সফল হয়নি।
বিভক্তির পর একাংশের নেতৃত্বে দেন কামাল হোসেন। ড. রেজা কিবরিয়াকে কেন্দ্র করে দল ভাগ হলেও শেষ পর্যন্ত তিনিও গণফোরামে থাকেননি, যোগ দিয়েছিলেন গণঅধিকার পরিষদে, পরে তিনি সেই দলও ছাড়েন।
গত বছরের ২৭ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিশেষ কাউন্সিলে কামাল হোসেনকে এমিরেটাস সভাপতি করে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়; সভাপতি হিসেবে মফিজুল ইসলাম খান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মো. মিজানুর রহমানের নাম ঘোষণা করা হয়।
গণফোরামের আরেক অংশের নেতৃত্বে দেন মোস্তফা মহসীন মন্টু। অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীরা ছিলেন ওই অংশে।
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ