গণিতের প্রশ্নপত্র ফাঁস || নেপথ্যের অপরাধীরা ধরা পড়বে কি?

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৭, ১২:১৮ পূর্বাহ্ণ

‘প্রশ্নপত্র ফাঁস’ বাংলাদেশে এখন খুবই নিত্যদিনের কথা। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ধারণার সাথে মানুষের খুবই নিবিড় সম্পর্ক হয়ে গেছে। পরীক্ষা মানেই  প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রলোভন কিংবা ধকল। প্রশ্নপত্র ফাঁস হোক বা না হোক তা আলোচনায় আসেইÑ কারো উদ্বেগ, কারো বা কৌতুহল। আবার এমন কিছু মানুষ আছে যারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব ছড়িয়ে মজা করে কিংবা ফায়দা হাসিল করে। আবার কখনো কখনো প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাটি প্রামাণিক হিসেবে জাতির কাছে প্রকাশ পায়।
চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষা বেশ ভালোভাবে, শৃঙ্খলা মেনেই চলছিল কিন্তু গণিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের দোষে তা অভিযুক্ত হল। রোববার অনুষ্ঠিত ওই পরীক্ষার আগেই হোয়াটসঅ্যাপে পাওয়া প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া গেছে পরীক্ষায় সরবরাহ করা প্রশ্নপত্রে। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে বিস্তর লেখালেখি চলছে।
সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আগের রাতে ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই নেয়া হয়েছে এসএসসির ঢাকা বোর্ডের গণিতের পরীক্ষা।
একটি ফেইসবুক গ্রুপ থেকে মোবাইল নম্বর নিয়ে পরীক্ষার্থী সেজে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদক শনিবার রাতে গণিতের যে প্রশ্ন পেয়েছিলেন, হুবহু সেই প্রশ্নেই গণিতের সৃজনশীল ও এমসিকিউ অংশের পরীক্ষা হয়েছে। রোববার পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি চাউর হলেও ওই দিনের পরীক্ষা রীতিমত সম্পন্ন হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী একটি অনলাইন মিডিয়াকে বলেন “যদি দেখা যায় যে আগেই (গণিতের) প্রশ্ন আউট হয়ে গিয়েছিল এবং তার ফলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অথবা কেউ লাভবান হয়েছে, তাহলে নিশ্চয়ই আমরা গণিতের পরীক্ষা বাতিলের বিষয়ে ভাবব।” এটা নিশ্চিত হতে তদন্ত করার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “কমিটি আমাদের করাই আছে। আমরা বিভিন্নভাবে বিষয়টি তদন্ত করছি।”
আমরা যদি গত কয়েক বছরের বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাগুলোর ব্যাপারে লক্ষ করলে দেখবো- একই ধরনের বক্তব্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসেছে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁসের মূল কারিগরদের নাগাল মেলেনি। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বারবারই প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি দেয়া হয়ে থাকে। তাতে পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয় না।
দয়িত্বশীলদের বক্তব্য হলো- বিজি প্রেসে ছাপা হওয়ার পর পরীক্ষা শুরুর ১৫ থেকে ২০ দিন আগে সিল করা প্রশ্ন পাঠানো হয় বিভিন্ন জেলার ডিসি অফিসে, রাখা হয় সেখানকার ট্রেজারিতে। পরীক্ষার দিনই কেবল তা পরীক্ষার্থীদের মধ্যে মসরবরাহ করা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন খুবই স্বাভাবিক যে, তা হলে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে কীভাবে? নিশ্চয় সর্ষেয় ভূত না থাকলে ফাঁস হওয়ার মত কারণ উদ্ভব হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু সর্ষের ভূত কখনোই চিহ্নিত করা যায়নি কিংবা চিহ্নিত করার চেষ্টা হয়নি। এমনও হতে পারে যে, সরকার যন্ত্রের মধ্যেই এমন কেউ আছে যারা খুবই পরিকল্পিত উপায়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মত ঘটনা ঘটাচ্ছে কিংবা ফাঁসের গুজব ছড়াচ্ছে। এতে রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না সে ব্যাপারটি খতিয়ে দেখা খুবই জরুরি। এটা অস্বাভাবিক নয় যে, সরকারকে বার বার বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে একটি মহল সুকৌশলে একই কাজটি করে চলেছে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁস কিংবা ফাঁসের গুজবের বিষয়টিকে সরকার সিরিয়াসলি নিচ্ছে বলে মনে হয় না। নিশ্চয় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব্যাপারটি যদি গুজবও হয় তাতেও গুজবকারীর অপরাধ লঘু হয়ে যায় না। কেননা এই গুজবের দ্বারা পরীক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকসহ দেশবাসী প্রভাবিত হয়। অন্তত এবার বিষয়টিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খুবই গুরুত্ব সহকারে নিবেন এবং এর একটি বিহিত করবেন বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ