গল্প : তাজ্জব

আপডেট: জানুয়ারি ২১, ২০১৭, ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ

রফিকুজ্জামান রণি


সন্ধ্যায় বাজার থেকে ফিরে দাদুভাই নান্টুকে চুপিসারে ঘরে ডেকে নেন।
হঠাৎ করেই গোপন তলব, মানেটা কী! বিষয়টা দাদুকে জিজ্ঞেস করার আগেই লাল রঙের একটা প্যাকেট খুলে তিনি নতুন একটা মোবাইল সেট বের করে নান্টুর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেনÑ ‘এটা দেখাতেই ডেকেছি রে নান্টু।’
নান্টু একটু অবাকই হয়! এতো আগ্রহভরে সামান্য একটা মোবাইল দেখানোর রহস্য কী? দাদুকে তাই ভর্ৎসনা মিশিয়ে বলেÑ ‘উফ্ দাদু, এটা দেখাতে এতো নিরিবিলি ডাকার কি দরকার? এ যে সাধারণ একটা মোবাইল ফোন ছাড়া আর কিছুই দেখছি না। এর মধ্যে আবার দেখার কী আছে?’
দাদু কিছুটা খাতির জমানোর চেষ্টা করেনÑ ‘এতো চটিস্ কেন রে… আমি কি আর মোবাইল চালাতে জানি? আমাকে একটু মোবাল চালানোটা শেখানের জন্যেই তো ডাকলাম। নিজে বুড়ো হয়ে গেছি তাই বলে তো আর শখ বুড়ো হয়ে যায়নি!’
দাদুর কথাটা নান্টুর ভালো লেগে যায়। দাদুকে সে মোবাইল চালানো শেখাতে শুরু করেÑ ‘দাদু, প্রথমে যে বাটনগুলোতে নম্বর লেখা আছে, ওগুলোতে চেপে চেপে নম্বর ওঠাবেন। তারপর সবুজ বাটনে টিপ দিবেন, কল ঢুকে যাবে। কারো কাছ থেকে কল আসলে সবুজ বাটনে টিপবেন, রিসিভ হবে। তারপর কানে কাছে নিয়ে হ্যালো বলবেন। যদি কল কাটার দরকার হয় তবে লাল বাটনে টিপলেই চলবে। আর যদি মিস্ড কল দেয়ার দরকার হয়Ñ নম্বর উঠিয়ে প্রথমে সবুজ বাটনে এরপর কল ঢুকলে লাল বাটন টিপে ধরলেই মিস্ড কল হয় যাবে। তবে সাবধান! তাড়াতাড়ি কেটে দিতে হবে কিন্তু…’
দাদু খুশি হয়ে ধন্যবাদ দিতে দিতে বললেন, ‘সব কলই তো বুঝলাম কিন্তু মিস্ড কল জিনিসটা তো বুঝলাম না রে দাদুভাই। ওটা আবার কী।’
‘মিস্ড কল হচ্ছে এমন এক কল যে কল করলে মোবাইলে কোনো টাকা-পয়সা কাটে না।’
‘আরে এটা আগে শিখাইলি না ক্যান রে..! যা দাদু তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। এখন বুঝে গেছি কিভাবে মোবাইল চালাতে হয়। আমি নিজেই এখন দিব্যি চালাতে পারবো।’ প্রয়োজনীয় কিছু প্রোগ্রাম দেখিয়ে দিয়ে নান্টু চলে গেলো।
দাদু এখন মহাখুশি! বিশেষ করে যখন জানতে পেরেছেন মিস্ড কল দিলে কোনো টাকা-পয়সা খরচ হয় না তখন থেকে। মনে মনে ঠিক করলেন, আজ রাতে না ঘুমিয়ে রাতভর নতুন নতুন নম্বর বানিয়ে খালি মিস্ডকল দিবেন।

 

২.
নতুন একটা নম্বর বানিয়ে মিস্ডকল দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রথমবার তিনি ডায়াল করলেন। কিন্তু সেটা মিস্ডকল হলো না। কলটা চলে গেলো অপরিচিত এক লোকের কাছে। ভদ্রলোক রিসিভ করলেনÑ ‘হ্যালো।’
‘ভাই আমি নান্টুর দাদু বলছি। মনে কিছু নেবেন না। আমি আপনাকে একটা মিস্ডকল মারছি।’
এক মুহূর্তে কথাটা বলেই নান্টুর কথামতো তড়িঘড়ি করে লাইন কেটে দিলেন! এমন অদ্ভুত আচরণে ওপাশের লোকটা এক্কেবারেই আক্কেলগুড়–ম!
একই প্রক্রিয়ায় নতুন আরেকটি নম্বরে ডায়াল দিলেন তিনি। এবার ধরলো এক মহিলা। ভেসে আসলো সুললিতকণ্ঠ স্বরÑ ‘হ্যালো।’
‘হ্যালো ম্যাডাম! আমি নান্টুর দাদু বলছি। মনে কিছু নেবেন না। আমি আপনাকে একটা মিস্ড কল দিয়েছি।’
এবারও তাড়াহুড়ো করে লাইন কেটে দিলেন। এমন কা-ে মহিলাটি যেন নির্জীব-পাথর, ওপাশে খামুশ হয়ে রইলো!
এভাবে আবারও নতুন নম্বরে ডায়াল দেন। এখন ধরেছে এক ছোট্ট খুকু। ওপারের সাড়া পেয়ে তিনি বললেনÑ ‘হ্যালো সোনামণি, আমি নান্টুর দাদু বলছি। তুমি কিন্তু একদম রাগবা না। আমি কিন্তু তোমাকে কল দেইনি। মিস্ড কল দিয়েছি মাত্র।’ এতটুকু বলেই দ্রুত লাল বাটনে চাপলেন।
বুড়ো মানুষের ছেলেমানুষি আচারণ দেখে এবং হাস্যকর বক্তব্য শুনে ওই প্রান্তে ছোট্ট খুকি একেবারেইÑ থ মেরে রইলো!

৩.
রাতভর অসংখ্য নম্বর বানিয়ে বানিয়ে একই কায়দায় কল দিলেন তিনি। কিন্তু কল এবং মিস্ড কলের যে বিস্তর ফারাক সেটা তার মাথায় ঢোকেনি। না বুঝে, না শুনে চালালেন অন্তহীন মিস্ড কলের মহড়া। একসময় নতুন নম্বরে কল ঢোকাতে গিয়ে ‘আপনার মোবাইলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভ্যালেন্স নেই। দয়া করে রিসার্চ করুন!’ নারীকণ্ঠে ভেসে আসা এ জাতীয় কথাবার্তা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলেন। মেজাজ চরমে উঠে গেলো। চেঁচেমেচি করে নান্টুকে ডেকে তুললেন। মেঘডাকা আকাশের মতো গর্জন দিয়ে ওঠেন, ‘এই, তুই না বললি মিস্ড কল দিলে টাকা-পয়সা খরচ হয় না। সন্ধ্যায় আমি যে মোবাইলে দু’শ টাকা ঢুকিয়েছিলাম, এরমধ্যে তো কোথাও কল দেই নাই। শুধু অনেকগুলো মিস্ড কল মারছি। এখন আমার টাকা গেলো কই?’
নান্টু পুরোদস্তুর কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলো! চিন্তায় পড়ে গেলো। ভাবলো, মিস্ড কল দিলে তো কোনোভাবেই টাকা কাটার কথা না। তাহলে দাদু কিসের মিস্ড কল দিলেন যে দু’শ টাকা গায়েব!
দাদুর কাছে মিস্ড কল দেয়ার ধরনটা জানতে চাইলো নান্টু।
দাদুর মুখে মিস্ড কল দেয়ার ধরন শুনে নান্টুর মাথায় যেন টুইন টাওয়ার ভেঙে পড়লো!