সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
গুরুদাসপুর প্রতিনিধি
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়ন আ’লীগের যুগ্মআহ্বায়ক মোশারফ হোসেন ও ইউনিয়ন আ’লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিপন সরকারের সমর্থকদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এক পর্যায়ে মোশারফ হোসেনের সমর্থকরা প্রতিপক্ষের ধারাবারিষা পুর্বপাড়া, খাকড়াদহ ও দাদুয়া গ্রামে সমর্থকদের ২৫-৩০টি বাড়িঘর ভাঙচুর করে। গত শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত ওই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গ্রাম তিনটির প্রবেশমুখে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
ওই ঘটনায় গতকাল রোববার সন্ধ্যায় রিপন সরকার বাদী হয়ে প্রতিপক্ষ মোশারফ হোসেন, আহাদ মন্ডল, হাবিবুর রহমান ও নাছির মন্ডলসহ প্রায় ১৫০ জনের বিরুদ্ধে ভাঙচুর ও লুটপাটের মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলীপ কুমার দাস সত্যতা নিশ্চিত করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস আগেও মোশারফ হোসেন ও রিপন সরকার গুরুদাসপুর উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র শাহনেওয়াজ আলীর সমর্থক ছিলেন। সম্প্রতি রিপন সরকারকে বাদ দিয়ে মোশারফ হোসেনকে ধারাবারিষা ইউনিয়ন আ’লীগের যুগ্মআহ্বায়ক করেন। এতে রিপন ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় সাংসদ ও নাটোর জেলা আ’লীগের সভাপতি আবদুল কুদ্দুসের পক্ষে চলেন যান।
গত শুক্রবার সাংসদ ধারাবারিষা ইউনিয়নের শরীপুর গ্রামে যান বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে। সেখানে রিপন সরকার তার অনুসারিরা দল বেঁধে আনুষ্ঠানিকভাবে সাংসদের সভাস্থলে গিয়ে যোগদান করেন। এতে মোশারফ হোসেন ও তার সমর্থকরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ওই ঘটনার জের ধরে শনিবার রাতে ধারাবারিষা পূর্বপাড়া গ্রামে উভয়গ্রুপের সমর্থকদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। রিপন সরকার দাবি করেন, মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে হাবিবুর রহমান, আহাদ মন্ডল ও তার ছেলে নাছির মন্ডল দেশিয় অস্ত্র নিয়ে পূর্বপাড়া, খাকড়াদহ ও দাদুয়া গ্রামে তার সমর্থকদের ২৫-৩০টি বাড়িঘর ভাঙচুর করেন। এলাকায় তাদের দাপট থাকায় কেউ প্রতিবাদ করতে পারে নি।
ধারাবারিষা পূর্বপাড়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত রুবিনা বেগম, আবদুস সামাদ মিয়াসহ সাতজন ব্যক্তি জানান, তারা সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। তারপরও মোশারফ হোসেনের লোকজন তাদের বাড়িতে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছে। ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পায় নি তারা। রিপনের সমর্থক ও ধারাবারিষা ইউনিয়ন আ’লীগের সাবেক সভাপতি খাকড়াদহ গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা সোলেমান আলী জানান, তার বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। বাড়ির জানালা ভাঙতে না পারাই প্রাণে বেঁচেছেন তিনি।
ধারাবারিষা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মতিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অভিযুক্তরা এলাকায় নানা অপকর্ম করে বেড়ান। এ কারণে রিপন সরকার তার সমর্থকদের নিয়ে সাংসদের সঙ্গে রাজনীতি করতে এসেছেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রিপন ও তার সমর্থকদের দমনে নেমেছেন। এ কারণে তিনটি গ্রামের মানুষ ভীতসন্তস্ত্র হয়ে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের নিরাপত্তায় মামলা দায়ের করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে মোশারফ হোসেন দাবি করেন, রিপন সরকার সাংসদ আবদুল কুদ্দুসের আর্শীবাদপুষ্ট হয়েই গ্রামে দাপট শুরু করেছেন। গ্রামের সাধারণ মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করছেন তিনি। সর্বশেষ শনিবার রাতে তিনি (মোশারফ হোসেন) একা বাড়ি ফেরার পথে রিপন সরকার তার লোকবল নিয়ে পথরোধ করে হত্যা চেষ্টা চালায়। কোন রকমে প্রাণে বাঁচেন তিনি। ওই খবর ছড়িয়ে পড়লে তার সমর্থকরা রিপনকে ধরতে বের হয়। এসময় তার সমর্থরা কয়েকজনকে মারধর করলেও বাড়িঘর ভাঙচুর করে নি।
গুরুদাসপুর পৌর মেয়র শাহনেওয়াজ আলী বলেন, এলাকায় নানা অপকর্মের কারণে রিপন দলীয় পদ হারান। এখন সাংসদের সমর্থন পেয়ে তার সমর্থকদের নানাভাবে হয়রানি করছেন। নিজের অপকর্ম আড়াল করতে তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে বাড়িঘর ভাঙচুরের অভিযোগ আনা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সাংসদ আবদুল কুদ্দুসের সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।
এ বিষয়ে নাটোর পুলিশ সুপারের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) খাইরুল আলম বলেন, শনিবার রাত থেকে ওই গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। মামলা রেকর্ড হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।