রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ৯ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
গুরুদাসপুর প্রতিনিধি
ঘন কুয়াশা। হিমশীতল বাতাশ। বাড়াচ্ছে শীতের তীব্রতা। প্রকৃতির এমন প্রতিকূল আবহাওয়া জেকে বসেছে গবাদি পশুগুলোর ওপর। প্রতিনিয়তই নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে হাঁস, মুরগি, গরু-ছাগলসহ গবাদিপশু।
মাঠ পর্যায়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম না থাকায় ছাগলে প্লেগরোগ (পিপিআর) হাঁস-মুরগি রানীক্ষেত রোগে মারা যাচ্ছে। তবে গরুগুলো কেবল ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এনিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিসহ কৃষকরা।
গুরুদাসপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, প্রচ- শীতে গবাদি পশু ও পক্ষিকুল প্রাণিগুলো ঝিমিয়ে পড়েছে। শীতের কারণে গড়ে দশভাগ ছাগল প্লেগরোগে, দশভাগ হাঁস-মুরগি রানীক্ষেত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। তবে কিছু গরু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলেও মারা যাওয়ার খবর তার দফতরে নেই। পাশাপাশি ৪৫টি খামারে গরু মোটাতাজাকরণ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
ওই কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, তার দফতরে পর্যাপ্ত পরিমান ভ্যাকসিন থাকলেও জনবল সঙ্কটের কারণে মাঠ পর্যায়ে শতভাগ সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তবে সচেতন কৃষক অফিসে এসেই সেবা নিচ্ছেন। তিনি খামার মালিকদের শুকনো খাবার, গোয়ালে তাপের ব্যবস্থা রাখাসহ পশুর গায়ে চটের বস্তা জড়িয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে পক্ষিকুলের বিষয়টি প্রাকৃতিক বলে তিনি কোনো মন্তব্য করেন নি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ভুক্তভোগীরা তাদের গবাদিপশুগুলোর চিকিৎসার জন্য এনেছেন। তাদেরই একজন গুরুদাসপুর পৌরসভার আনন্দনগর গ্রামের কৃষক মকবুল শাহ। তার চারটি গরুই শীতে ঝিমিয়ে পড়েছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগে খবর দিয়েও কোন সাড়া পান নি তিনি। বাধ্য হয়ে একটি বাছুর গরু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় ভ্যানে করে নিয়ে এসেছেন। তারমতে অসংখ্য কৃষক প্রতিদিন গবাদিপশু নিয়ে ভিড় করছেন। হাসপাতালের তথ্য মতে, প্রতিদিন গড়ে ১০-১৫জন ভুক্তভোগী মানুষ তাদের পশুর চিকিৎসা নিতে আসছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের দেয়া তথ্য মতে, গুরুদাসপুর উপজেলায় দেশি-বিদেশি ৫০ হাজার গরু ও ৮২ হাজার ছাগল ও ৮২টি খামার রয়েছে। তার মধ্যে ৩০ হাজার গরুই বাণিজ্যিকভাবে মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে দেশি ষাঁড়, নেপালী, ইন্ডিয়ান, অষ্ট্রেলিয়ান ও ফিজিয়ান জাতের গরু বিশেষভাবে উলে¬খযোগ্য।
উপজেলার চাঁচকৈড় পুরানপাড়া, গাড়িষাপাড়া, বামনকোলা ও দড়িবামনগাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই খামারিরা গরুগুলো গোয়ালঘরে বেঁধে রেখেছেন। প্রচ- শীতে এসব পশুগলো শুকিয়ে গেছে। শীতের কবল থেকে রক্ষা করতে পশুগুলোকে চটের বস্তা জড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু গোয়ালঘরগুলোর অধিকাংশই খোলা (বেড়াহীন)। উত্তরের হিমশীতল বাতাসে পশুগুলো কাঁপছে। তার চেয়ে বেশি কষ্টে রয়েছে গৃহপালিত ছাগলগুলো। হাতে গোনা কিছু মানুষ তাদের ছাগলকে পুরাতন কাপড় পরিয়ে রক্ষার চেষ্টা করলেও অধিকাংশ ছাগলেরই যতœনিতে পারছে না। এসব কারণে পশুগুলো শীতকালীন নানা সমস্যায় ভুগছে।
আকবর আলী ও টিবলু প্রামানিক জানান, তারা নিজেরাই শীতে কাহিল হয়ে পড়েছেন। গরুগুলোকে রাতে চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। গোয়াল ঘরে আগুন জ্বালিয়ে তাপ দেয়ার পাশাপাশি গোয়াল ঘরের চারদিকে আটকে দেয়া হয়। যাতে করে বাতাস না ঢুকে। তাদের দাবি পর্যাপ্ত খাবার দেয়ার পরও প্রচ- শীতে গরুগুলোর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ছে। একই সাথে দেখা দিয়েছে শীতবাহী নানা রোগ। এখন গরুগুলোকে রক্ষা করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। অপরদিকে উপজেলার বিভিন্ন গাছে আশ্রয় নেয়া বাদুর, কাক, শালিক, বকসহ পক্ষিকুল প্রাণিগুলোও শীতে ঝিমিয়ে পড়েছে। ঘনকুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় পাখিগুলোর কিচিরমিচির শব্দ আর শুনতে পাচ্ছে না মানুষ। ধারাবারিষা নয়াবাজারের বাসিন্দা আ. মজিদ জানান, সেখানকার একটি বাঁশ বাগানে কয়েক হাজার কাক, বক, শালিক আশ্রয় নিয়ে বছর ধরেই থাকে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এলাকার মুখর করে রাখলেও শীতের কারণে আর শব্দ শুনতে পান না কেউ-ই।
সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ জানান, গত বুধবার সকালে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৫০টি পাখিকে অচেতন অবস্থায় বাঁশ ঝাড়ের নিচে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। পাখিগুলোর দুর্দশা দেখলে কষ্ট হয়।
অপরদিকে উপজেলার ৮২টি খামার খামার মালিক শীতে তাদের মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। চাঁচকৈড় তালুকদার পাড়া মহল¬ার মুরগির খামার মালিক আবদুল কাদের জানান, শীতে তার খামারের প্রায় দেড় হাজার মুরগি ঝিম পাড়ছে। ঘনকুয়াশা আর শীত থেকে মুরগিকে বাঁচাতে খামারের চারদিকে ঘিরে রাখার পাশাপাশি ভেতরে গরম রাখতে বিদ্যুতের বাল্ব জ্বালিয়ে দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারপরও মরছে মুরগি। চাঁচকৈড় তালুকদার পাড়া মহল¬ার মুরগির খামার মালিক আজিমুদ্দিন জানান, শীতে তার খামারের প্রায় দেড় হাজার মুরগি ঝিম পাড়ছে।