মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
গুরুদাসপুর প্রতিনিধি
উপজেলা ও পৌর আ’লীগের হস্তক্ষেপে নাটোরের গুরুদাসপুরে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই প্রথমদিনের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। বাছাই কমিটিতে আ’লীগ নেতাদের পক্ষ থেকে একজন বিতর্কিত সদস্য থাকার অভিযোগ তোলা হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন ওই কমিটির বিতর্কিত সদস্য জাভেদ মাসুদ আখেরকে কমিটি থেকে বাদ দিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অন্তর্ভুক্তির দাবি সংবলিত লিখিত অভিযোগ উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা ও যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য সচিব মোছা. ইয়াছমিন আক্তারের কাছে জমা দেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাছাইয়ের প্রথম দিনের কার্যক্রম আগামী শনিবার পর্যন্ত স্থগিত করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা জানান, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের নির্দেশে গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কাযক্রম শুরু হয়। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. আনোয়ার হোসেন এতে সভাপতিত্ব করেন। বাছাই কার্যক্রমের কিছুক্ষণের মধ্যেই উপজেলা আ’লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র শাহনেওয়াজ আলী এবং পৌর আ’লীগ সভাপতি জাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে দলের সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও আ’লীগ সমর্থিত মুক্তিযোদ্ধারা উপজেলা চত্ত্বরে জয়বাংলা স্লোগান দেন। বাছাই কমিটি থেকে বিতর্কিত সদস্য জাভেদ মাসুদকে বাদ দেয়ার দাবি তুলেন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ও ইউএনও হলরুমে বাছাই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে তাঁর কার্যালয়ের ফিরে আসেন। পরে আ’লীগ নেতা ও দল সমর্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সমঝোতা করে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে একটি লিখিত অভিযোগ নেন ইউএনও। এ ঘটনার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা আ’লীগ সাধারণ সাম্পাদক পৌর শাহনেওয়াজ আলী ও পৌর আ’লীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য জাভেদ মাসুদ আখের জামায়াত-বিএনপি সমর্থিত দলের সমর্থক। বিগত জোট সরকারের সময়ে এলাকায় তিনি আ’লীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতনসহ তাদের মালামাল লুটের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি বাছাই কমিটিতে থাকলে মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার পক্ষের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা মুল্যায়িত হবে না’। তাই বিতর্কিত ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
অভিযুক্ত জাভেদ মাসুদ বলেন, তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। যোগ্য মনে করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তাকে বাছাই কমিটিতে রেখেছেন। মন্ত্রণালয় ছাড়া তাকে বাদ দেয়ার এখতিয়ার কারো নেই। প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করে অভিযোগকারীদের অনুসারিদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করতেই তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমন্ডার আনোয়ার হোসেন এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হন নি। তবে যাচাই বাছাই জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল প্রতিনিধি মুক্তিযোদ্ধা মো. সাইফুল ইসলাম মোল্লা বলেন, গেজেটভুক্ত ১৬৯ জন মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় লাল তালিকা ও প্রধানমন্ত্রী প্রতিস্বাক্ষরিত ২৮জন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। এর বাইরেও ১৫৩ জন তালিকাভুক্তির জন্য আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন। এসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ নিয়ে আ’লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বাছাইয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন।
এ বিষয়ে ইউএনও মোছা. ইয়াসমিন আক্তার বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী বাছাই কমিটির বিতর্কিত ওই সদস্যকে বাদ দেয়া হয়েছে। আগামী শনিবারে পুনঃরায় বাছাই কমিটির কার্যক্রম শুরু হবে।