গুলশানের জঙ্গিদের অস্ত্র মালদহে তৈরি! ।। উভয় দেশের জন্যই সতর্কবার্তা

আপডেট: অক্টোবর ৩০, ২০১৬, ১১:৫৭ অপরাহ্ণ

জঙ্গিবাদের নেটওয়ার্ক যে আন্তর্জাতিকভাবেই বিস্তৃত তা নিয়ে এখন কারুরই দ্বিমত নেই। প্রশিক্ষণ ও অর্থের যোগান জঙ্গিগোষ্ঠিগুলোর মাধ্যমে হয়ে থাকে। আর এ কাজে যে পাকিস্তানের জঙ্গিগোষ্ঠিগুলো নিরবিচ্ছিন্ন কাজ করে যাচ্ছে তাও বিশ্বের সকলের জানা। পাকিস্তানে আইএসআই এর মাধ্যমে জঙ্গি-সন্ত্রাসের প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়টিও আর রাখঢাক নেই। পাকিস্তানের সরকারের ভেতর ও বাইরে জঙ্গিদের ভিত খুবই শক্ত। ফলে দেশটি একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে প্রায়।
পাকিস্তান শুধু বাংলাদেশ নয়- গোটা বিশ্বের জন্যই হুমকি স্বরূপ। বিশেষ করে আমরা যারা পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশ তাদের সমস্যাটি খুবই মারাত্মক। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরিতে পাকিস্তান জঙ্গিবাদকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেছে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন ভারত এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এনআইএর তথ্যানুযায়ী এ বছরের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারীরা যে একে-২২ রাইফেল নিয়ে হানা দিয়েছিল, তা পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায় বসে তৈরি করা হয় বলে জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে। গুলশানে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ১৯ জনকে হামলার কাজটি ‘নব্য জেএমবি’র বলে বাংলাদেশের পুলিশ কর্মকর্তারা বলে আসছেন।
এনআইএ কর্মকর্তাদের ধারণা, ওই প্রশিক্ষকরা পশতু ভাষায় কথা বলছিল, তারা এসেছিল পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের দারা আদম খেল থেকে।
আফগান সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের ওই এলাকাটি সমরাস্ত্র তৈরির জন্য সুপরিচিত। ওই এলাকার কারিগররা অল্প সময়েই যে কোনো আগ্নেয়াস্ত্রের নকল তৈরি করতে পারেন, ওই এলাকায় বাজারে প্রকাশ্যেই অস্ত্র কেনা-বেচা হয়।
২০১৪ সালের অক্টোবরে বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান, মুর্শিদাবাদসহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় জেএমবি সদস্যরা ঘাঁটি গেড়ে বিস্ফোরক তৈরি থেকে শুরু করে বিভিন্ন কার্যকলাপ চালাচ্ছে তা কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স- এসটিএফ বিষয়টি জানলেও তারা খুব বেশি দূর এগুতে পারেনি। কারণ, মাঠে নামার পরেই প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে তাদের কাছে হঠাৎ নির্দেশ যায় ‘গো স্লো’ অর্থাৎ ধীরে চলো। এরপরই বিষয়টি নিয়ে তৎপরতা বন্ধ করে দেয় এসটিএফ।
ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূথ- ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ শাসকদের অভ্যন্তরে জঙ্গিদের আশ্রয়- প্রশ্রয়ের অভিযোগ ইতোমধ্যে উঠেছে। বাংলাদেশের জঙ্গিরা সেখানের প্রশাসনের সহায়তা পেলে তা বাংলাদেশের জন্য অস্বস্তিকরই শুধু নয়- বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্যও তা হুমকিস্বরূপ। কলকাতা পুলিশের এসটিএফ বছর দুয়েক আগেই যে সব তথ্য পেয়েছিল তা নিয়ে এগুতে পারলে পরবর্তী সময়ের অনেক জঙ্গি ঘটনা হয়ত এড়ান সম্ভব হত। সত্যিকার অর্থেই এমনটি যদি হয়েই থাকে তা হলে তা উভয় দেশের নিরাপত্তর জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েই আছে। এনআইএ- এর জঙ্গি তথ্য প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাববার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। বাংলাদেশ- ভারত উভয় দেশই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার সময় এসেছে। বাংলাদেশ- ভারত জঙ্গিদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষেই রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির আশায় পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনের অভ্যন্তরে জঙ্গিরা আশ্রয়-প্রশ্রয় পাচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তব্যকাজ হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ