গুলশান হামলা: সব উত্তর এখনও ‘পায়নি’ পুলিশ

আপডেট: অক্টোবর ৩, ২০১৬, ১১:৪৭ অপরাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক
গুলশান হামলার অর্থায়নসহ সব প্রশ্নের উত্তর এখনও পায়নি পুলিশ। পলাতক কয়েকজনকে ধরতে পারলে তা উদ্ঘাটন হবে বলে আশা করছেন তারা।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজাউল করিম এতে কতটুকু জড়িত, তাও এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি গোয়েন্দারা।
তবে তাহমিদ হাসিব খান এতে জড়িত নয় বলে ‘সাক্ষ্য-প্রমাণে’ নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটির প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম।
রাজধানীর কূটনীতিকপাড়ার হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার তিন মাস পর আলোচিত ওই ঘটনা নিয়ে সোমবার নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল।
গত ১ জুলাই ওই ক্যাফেতে জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ১৯ জনকে হত্যার পর সামরিক বাহিনীর অভিযানে চালিয়ে জিম্মি সঙ্কটের অবসান ঘটায়, তাতে ছয়জন নিহত হন।
বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলা এই জঙ্গি হামলার ঘটনায় আইএসের নামে দায় স্বীকারের বার্তা এলেও তা নাকচ করে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নিষিদ্ধ জেএমবির একটি ধারা এই কা- ঘটিয়েছে।
গুলশান ও তার এক সপ্তাহের মধ্েয শোলাকিয়ায় হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ‘নব্য জেএমবির’ আমির তামিম চৌধুরী ও তানভীর কাদেরিসহ কয়েকজন নিহত হন।
মামলার অগ্রগতি জানতে চাইলে মনিরুল বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ আসামিরা গ্রেপ্তারকালে নিহত বা আত্মহত্যা করেছে। অর্থের উৎস সম্পর্কে কিছু জানতে পেরেছি। এখনও পুরোপুরি জানতে পারিনি।
“অন্য আসামি যেমন নুরুল ইসলাম মারজান, জাহাঙ্গীর (সাংগঠনিক নাম রাজিব), বাসারুজ্জামান (সাংগঠনিক চকলেট), তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে পারলে ঘটনার রহস্য পুরোপুরি উদ্ঘাটন হবে এবং আর কে কে জড়িত, তা জানা যাবে। পাশাপাশি অর্থ ও অস্ত্রের উৎসও জানা যাবে।”
কল্যাণপুরের আস্তানা থেকে গ্রেপ্তার রিগ্যানকেও গুলশানের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদেও তথ্য মেলার আশার করছেন গোয়েন্দারা।
মনিরুল বলেন, “আজিমপুরে অভিযানে নিহত তানভীর কাদেরির ছেলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এই জবানবন্দির মাধ্যমে গুলশান হামলা সম্পর্কে কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে।”
তাহমিদ প্রসঙ্গ
হলি আর্টিজান বেকারি থেকে উদ্ধারের পর সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার তাহমিদ হাসিব খান একদিন আগেই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন, হামলায় যার কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ আদালতকে জানিয়েছিল।
মনিরুল বলেন, “তাহমিদ হাসিব খান এই মামলায় (গুলশান ঘটনায় মামলা) জড়িত না মর্মেই আমাদের কাছে মনে হয়েছে। সেই হিসেবে তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।”
পুলিশের কাছে তথ্য চেপে রাখার সন্দেহে তাহমিদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “অসহযোগিতার কারণেই ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় এবং আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।”
আফতাব বহুমুখী ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে রহিম খান শাহরিয়ারের কানাডায় পড়াশোনারত ছেলে তাহমিদ কমান্ডো অভিযানে জঙ্গিরা নিহত হওয়ার পর হলি আর্টিজান থেকে উদ্ধার হলেও পরে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তখন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজাউল করিমকেও গ্রেপ্তার করা হয়। পরে হাসনাতকে গুলশান হামলার ঘটনায় সন্ত্রাস দমন আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলেও তাহমিদকে বাদ দেয় পুলিশ।
জঙ্গিদের সঙ্গে হাসনাতের পাশাপাশি তাহমিদের ছবিও নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছিল।
দুজনের ছবি প্রকাশ হওয়ার পর একজন জড়িত নয় মনে হওয়ার কারণ কী-জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল বলেন, “এখানে মনে হওয়া কোনো বিষয় না। তদন্তে সাক্ষ্য প্রমাণে যেটি উঠে এসেছে, আমরা সেভাবেই কাজ করছি। সেখানে আমরা ‘এনালাইসিস’ করে দেখেছি।”
এদিকে ডিএমপির উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাহমিদ ছিলেন ‘পরিস্থিতির শিকার’।
“সাক্ষীর জবানবন্দি বিশ্লেষণ বা অন্যান্য যে ডকুমেন্ট ছিল আমরা এনালাইসিস করে নিশ্চিত হয়েছি তিনি (তাহমিদ) ‘ভিকটিম অব সারকামসটেন্সেস’। ওই সময়ে ওই পর্যায়ে তিনি ভিকটিম ছিলেন, অবস্থার শিকার হয়েছিলেন।”
তবে ভবিষ্যতে তদন্তের কোনো পর্যায়ে যদি তাহমিদের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, তাহলে তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান মনিরুল।
হাসনাত প্রসঙ্গ
হাসনাত করিমের সম্পৃক্ততা কতটুকু পাওয়া গেছে- জানতে চাইলে মনিরুল বলেন, “তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। টিএফআই সেলেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। দুই জিজ্ঞাসাবাদের ফলাফলেই জানা যাবে তিনি কতটুকু জড়িত।”
“এখনও টিএফআই সেলে সমন্বিত জিজ্ঞাসাবাদের রিপোর্ট পাইনি। সেটা পেলে তদন্তকারী কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদে যা পেয়েছে সেটি মিলিয়ে একটা কনক্লুশানে পৌঁছতে পারব।”- বিডিনিউজ