নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে পারিবারিক কলহের জের ধরে স্ত্রীকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর থেকে তার স্বামী গা ঢাকা দিয়েছে। বুধবার (১৫ মে) গভীর রাতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌর সদরের গোদাগাড়ী মহল্লায় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
খবর পেয়ে সকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে দুপুরে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে। নিহত ওই গৃহবধূর নাম সুরভী খাতুন (২৮)। তিনি ওই গ্রামের সিঙ্গাপুর প্রবাসী তরিকুল ইসলামের মেয়ে। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান পলাতক।
পুলিশ জানিয়েছে, ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের মেডিকেল মোড় এলাকার শামসুদ্দীন ইসলাম ধলুর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় সুরভী খাতুনের। বিয়ের পর থেকে স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান বেকার ছিলেন। এই নিয়ে প্রায়ই এই দম্পতির মধ্যে হতাশা ও অসন্তোষ দেখা দিত।
বুধবার (১৫ মে) বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) নিয়োগের এমসিকিউ পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এই পরীক্ষায় সুরভী খাতুন উত্তীর্ণ হন। আর এই খবর শুনে শ্বশুর বাড়ি যান মোস্তাফিজুর রহমান। কারণ স্ত্রী সুরভী খাতুন কিছু দিন থেকে তার বাবার বাড়িতেই থাকছিলেন। তার স্বামী মোস্তাফিজুর রহমানও একই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু স্ত্রী উত্তীর্ণ হলেও তিনি উত্তীর্ণ হতে পারেননি।
শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পর বুধবার রাতে এই নিয়ে তাদের দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। দীর্ঘদিন থেকে কর্মহীন থাকায় এ সময় মোস্তাফিজুরকে তার শাশুড়ি বকাবকি করেন। পরে রাতে তারা সবাই ঘুমিয়ে পড়েন।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সুরভীর মা তাদের ডাকতে যান। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ঘরে ঢুকে দেখেন মেয়ের নিথর দেহ বিছানায় পড়ে আছে। আর জামাতা মোস্তাফিজুর ঘরে নেই। তড়িঘড়ি করে তারা সুরভীকে গোদাগাড়ীর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক সুরভীকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে নিহতের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ’র (রামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে।
গোদাগাড়ী সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সোহেল রানা বলেন, সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় নিহত গৃহবধূর গলায় হালকা দাগ দেখা গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের জেরে তাকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। এই ঘটনায় নিহত গৃহবধূর মা জোৎসনা আক্তার বাদী হয়ে জামাতা মোস্তাফিজুর রহমানের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তবে আসামি পলাতক। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।