মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
ভবিষ্যতে ছেলেমেয়েদের সু-নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান করান শিক্ষকরা। কিন্তু অনেক সময় শিক্ষকরা পাঠদানে ব্যস্ত না হয়ে তারা রাজনৈতিক কর্মকান্ডসহ বিভিন্ন কাজে জড়িয়ে পড়েন। এতে করে শিক্ষার্থীদেরকে সু-নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রটা অনেকটা ব্যাহত হয়।
গত বৃহস্পতিবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মহিশালবাড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ রেখে বিদ্যালয়েই গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করলেন এক সহকারী গ্রন্থাগারিক। খবরে বলা হয়েছে, প্রধান শিক্ষকের এমন আয়োজনে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে অভিভাবক মহল। অভিভাবক মহলদের ক্ষুদ্ধ হওয়ার যুক্তি আছে। কারণ তারা তো তাদের ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য পাঠায় নি। তাদের ছেলেমেয়েদের পাঠ্যপুস্তুক নিয়ে শিক্ষাগ্রহণের জন্য বিদ্যালয়ে পাঠিয়েছেন। অবশ্য এক্ষেত্রে শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি অনেকটা দায়ী। তারা ক্লাস বন্ধ রেখে এই ধরণের তামাসা আয়োজন করা মোটেই উচিত হয় নি। বিয়ের গায়ে হলুদের আয়োজন বাড়িতে অথবা কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজন করা যেতে পারে। সেখানে বিদ্যালয়ের পাঠদানের সময় বাদ দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাওয়াত দিতে পারে গ্রন্থাগারিক। এই অনুষ্ঠানে কেউ নিজের ইচ্ছায় গেলে অভিভাবকসহ সচেতন মহল কিছু বলবে না। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান তার ফেসবুকে গায়ে হলুদের তিনটি ছবি শেয়ার করেন। ছবিগুলো জুড়ে দেন প্রধান শিক্ষক হায়দার আলীর ফেসবুকেও। ছবির বর্ণনায় ওই শিক্ষক লেখেন, ‘মহিশালবাড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী গ্রন্থাগারিক মো. ইব্রাহিমের আগামীকাল (শুক্রবার) শুভ বিবাহ আল্লাহর অশেষ রহমতে সুসম্পন্ন হইবে। সে লক্ষে আজ (বৃহস্পতিবার) অত্র বিদ্যালয়ে গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়।’ প্রকাশ হওয়ার পর পরই ভাইরাল হয়ে যায় এসব ছবি। পড়তে থাকে বিরূপ মন্তব্য। প্রকাশিত ছবিগুলোতে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের আঙিনায় ঘটা করে গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে। এর একটি ছবিতে সহকারী গ্রন্থাগারিক মো. ইব্রাহিমের মুখে গামছা ধরে আছেন সহকারী শিক্ষক আশরাফুল হক। পাশে বসে রয়েছেন প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী। আশপাশে ঘিরে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীরা। সেখানে অন্য শিক্ষকরাও ছিলেন। সবার মুখে হাসি। ওই অনুষ্ঠানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মো. ইব্রাহিমকে একে একে মিষ্টিমুখ করান। বিদ্যালয় ভবনের ছাদে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের এ আয়োজন উপভোগ করতে দেখা গেছে। তবে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত এ ব্যাপারে প্রশাসনিকভাবে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। প্রশাসনের উদাসনিতায় শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচারনা কমিটির সদস্যরা পার পেয়ে যান। আর ক্ষতির মুখে পড়তে হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে। শুধু এই ঘটনায় নয়, এর আগের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক ও সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদেরকে ব্যবহার করা হয়। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যদের কথা চিন্তা করে এই ধরণের প্রবনতা থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে।