গোদাগাড়ীতে বন উজাড়, ভূমি দখল ।। তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হোক

আপডেট: জানুয়ারি ৪, ২০১৭, ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ

বেড়ায় খেত খেলে, ফসল রক্ষা করা দায় বটে। যারা সম্পদ দেকভালের দায়িত্বে আছেন তারাই যদি আমানতের খেয়ানত করে তা হলে সাধারণ মানুষের নিরবে দেখা ছাড়া কী উপায় আছে? কিন্তু কিছু মানুষ তো সমাজে থাকেই যারা সাহসের ওপর ভর করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন।
জেলার গোদাগাড়ীতে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের বন উজাড় করে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ শুরু করেছে। এমনি অভিযোগ বনের উপকারভোগীরা করেছেন, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের কাছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দৈনিক সোনার দেশে মঙ্গলবৈার প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে উপকারভোগিদের দেয়া তথ্য মতে, বর্ষা মৌসুমে বনে পানি প্রবেশ করলে উপকারভোগীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তারা নৌকায় করেও গাছ কেটে নিয়ে যান। এতে বনের ৩০০ বিঘা জমি ফাঁকা হয়ে যায়। বন্যার পানি নেমে গেলে এর মধ্যে তারা প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে কলাই, ৭৫ বিঘা জমিতে খেসারি ও ২৫ বিঘা জমিতে মসুর ডালের চাষাবাদ করেছেন। কিছু জমির ফসল এরই মধ্যে কাটতে শুরু করেছেন তারা। ১০০ বিঘা জমিতে প্রায় ৩০ লাখ টাকার ফসল হবে। এই টাকার অংশের ভাগ পেতে স্থানীয় বন কর্মকর্তা ও পুলিশ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অভিযোগ করতে গেলে উল্টো তাদেরকেই হুমকি দেয়া হচ্ছে।
সোনার দেশের প্রতিবেদক রোববার সরেজমিনে গোদাগাড়ীর ফরাদপুর এলাকায় পদ্মার চরের বনটিতে গিয়ে উপকারভোগীদের এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া পেয়েছে। উপকারভোগীরা জানিয়েছেন, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল বনের গাছ কেটে ফেলে ও বনে অগ্নিসংযোগ করে ফাঁকা জমি দখল করছেন। এরপর তারা সেখানে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করছেন। এদের সঙ্গে উপকারভোগীদেরও কয়েকজন জড়িত আছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।।
‘সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন’ প্রকল্পের আওতায় বিভাগীয় সামাজিক বনবিভাগ ২০১১-১২ অর্থবছরে ৪০ হেক্টর জমিতে এক কোটি পাঁচ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ব্যয়ে বনটি গড়ে তোলে। এলাকার ২৪৯ জন ব্যক্তিকে উপকারভোগী করে সেখানে রোপণ করা হয় বিভিন্ন প্রজাতির এক লাখ ৩২ হাজার গাছ। গাছগুলো এখন বেশ বড় হয়েছে। এ অবস্থায় সেখানে নজর পড়েছে দুর্বৃত্তদের।
বন উজাড় করে ১০০ বিঘা জমিতে প্রভাবশালীরা আবাদ করছে অথচ বনের দেকভালের দায়িত্বে থাকা বন বিভাগ এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তা জানেন না, এটা কীভাবে সম্ভব? তাই বোধকরি লোকমুখে শোনা যায়, ‘বাংলাদেশে সবই সম্ভব’। এই যদি পরিস্থিতি হয় তা হলে জনগণের অর্থ ব্যয় করে উপজেলায় বনবিভাগের অফিস ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কী প্রয়োজন? দুর্বৃত্তরা বন কেটে নিয়ে ফসলাদি ফলাচ্ছে আর বন বিভাগ জানবে না তা কেমন করে হয়! উপকারভোগিদের অভিযোগ অগ্রাহ্য করার উপায় নেই। দুর্বৃত্তের সাথে বনবিভাগের কারো সংযোগ একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। তাদের কারো ইঙ্গিত বা যোগসাজস না থাকলে প্রকাশ্যে সরকারি সম্পদ লুটপাট বা দখল করা সম্ভব নয়। বিষয়টি অবশ্যই তদন্তের দাবি রাখে। ঘটনার সাথে বনবিভাগের কর্মকর্তা এবং বন কেটে নিয়ে জমি দখল করে আবাদের সাথে জড়িত দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক। তা না হলে যে টুকু বন অবশিষ্ট আছেÑ তাও আর রক্ষা করা যাবে না।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ