গোদাগাড়ীতে মহিষ পালনে ভাগ্যের চাকা ঘুরছে প্রান্তিক কৃষকদের

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৭, ১২:০৪ পূর্বাহ্ণ

একে তোতা, গোদাগাড়ী



রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মোল¬াপাড়া গ্রামের প্রান্তিক কৃষক সাদেক আলী। ফসলি জমিতে হাল চাষের জন্য দুইটি মহিষ ক্রয় করে। চাষ কাজের পাশাপাশি মহিষ থেকে দুধ সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে। এরপর মহিষের দুইটি বাচ্চা বড় করে বিক্রি করে ১ লাখ টাকা আয় করে।
এরপর বাণিজ্যিকভাবে মহিষের খামার গড়ে তুলে সাদেক আলী। বর্তমানে তার খামারে ১০৫ টি মহিষ রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধ শতাধিক মহিষ প্রতিদিন ৫শ লিটারের দুধ সংগ্রহ করে বিক্রি করছে।
সাদেক আলী জানান, বছরে মহিষের খামার থেকে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা আয় করছে। মহিষের খামার সম্প্রসারণের ইচ্ছা রয়েছে তার। উপজেলার বিজয়নগর গ্রামের স্কুল শিক্ষক মাজেদ আলী বাণিজ্যিকভাবে মহিষের খামার গড়ে তুলেছে। তার এই খামারে ৭০টি দুধেল মহিষ রয়েছে। প্রতিদিন দুধেল মহিষ থেকে ৭শ লিটারের বেশি দুধ সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করছে। মহিষের খামার থেকে তার বছরে আয় আসছে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। সাদেক আলী ও মাজেদ আলীর মতো এই এলাকার ৮টি গ্রামের শতাধিক প্রান্তিক কৃষক মহিষ পালন করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, উপজেলার মোল¬াপাড়া, বিজয়নগর, চকপাড়া, কুমরপুর, ফরাদপুর, নিমতলা, খারিজাগাতি, দরগাপাড়া গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই ১/২টি করে দুধেল মহিষ রয়েছে। এসব গ্রামের পাশে রয়েছে পদ্মানদী। আর বিশাল পদ্মার চর জুড়ে রয়েছে মহিষের চারণভূমি। বর্ষামৌসুম ছাড়া সারাবছরই দিনের বেলায় এই চরে মহিষ থাকলেও রাতের বেলায় খামারে অবস্থান করে। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরো জানান, উপজলোয় প্রতিদিন ১৫ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ হয়। এর মধ্যে এই ৮টি গ্রাম থেকেই ৭ হাজার লিটারের বেশি দুধ সংগ্রহ করা হয়। মহিষ পালনকারীরা দুধ সংগ্রহ করে সরাসরি উপজেলায় অবস্থিত আড়ং সহ বিভিন্ন কোম্পানির দুধ সংগ্রহ কেন্দ্রে বিক্রি করে। এছাড়াও বিভিন্ন মিষ্টান্ন ও চায়ের দোকানে দুধ সরবরাহ করা হয়। এ অঞ্চলের মানুষ খামারে গিয়ে তাদের প্রয়োজনের জন্য দুধ সংগ্রহ করে থাকে। প্রতিটি খামারে গিয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের লোকজন মহিষকে নিয়মিত টিকাদান ও চিকিৎসা প্রদান করে আসছে। এছাড়াও উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের পক্ষ থেকে নিয়মিত মনিটরিং করা হয়।
উপজেলার ফরাদপুর গ্রামের মহিষ পালনকারী মাসুম বলেন, তার খামারে ১০টি দুধেল মহিষ রয়েছে। প্রতিটি মহিষ বছরে ২৮০ থেকে ৩০০ দিন পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে। হাল চাষে মহিষকে ব্যবহার ছাড়াও মহিষের গোবর জৈব সার ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
মহিষ পালন অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় গোদাগাড়ী উপজেলায় প্রতিবছর মহিষের খামার বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর সূত্রে জানা যায়। উপজেলায় শতাধিক খামারে ২ হাজার মহিষ রয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ নেওয়াজ বলেন, মহিষের খামার গড়ে ওঠায় অনেকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। মহিষ খামার মালিকদের সবধরনের সহযোগিতা দিয়ে আসছে উপজেলা প্রশাসন।