বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
গোমস্তাপুর প্রতিনিধি:
ফলন বৃদ্ধিতে ও শ্রমিক খরচ কমাতে প্রথমবারের মত চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে সমলয় পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষাবাদের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ডিসেম্বরের শেষের দিকে উপজেলার রহনপুর ইউনিয়নের ষাড়ব্রুজ এলাকায় ট্রে পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন শুরু করা হয়েছে। ওই ব্লকের কৃষকরা কৃষি প্রণোদনার পেয়ে ও উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে এবার বোরোধান উৎপাদন শুরু করেছে। ৫০ একর জমিতে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রীড জাত এসএল ৮ এইচ ধানের বীজ এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হচ্ছে। এই আধনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ধানের উৎপাদন খরচ কমানোসহ শ্রমিক সংকট নিরসন হবে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
সমলয় চাষপদ্ধতি কি এবিসয়ে জানা গেছে, নতুন এ পদ্ধতিতে বীজতলা থেকে ফসল কাটা, সবই এক সময়ে একযোগে করা হবে। স্বল্প মানুষের সাহায্যে কাজটা করবে যন্ত্র। জমির অপচয় রোধে এ পদ্ধতিতে প্রচলিত রীতিতে বীজতলা তৈরি না করে প্লাস্টিকের ফ্রেম বা ট্রেতে লাগানো হবে ধানের বীজ। ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে চারা হবে। তারপর রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টারের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণ করা হবে। একটা ট্রান্সপ্ল্যান্টার এক ঘণ্টায় এক একর জমিতে চারা লাগাতে পারে, বেঁচে যায় সাড়ে চার হাজার টাকা। চারা একই গভীরতায় সমানভাবে লাগানো যায়। একই সময় রোপণ করায় নির্দিষ্ট এলাকায় সব ধান পাকেও একই সময়। মেশিন দিয়ে একই সঙ্গে সব ধান কাটা ও মাড়াই করা যাবে। আর বড়সড় পরিসরে হবে বলে সব প্রক্রিয়াতেই যন্ত্রের ব্যবহার হবে সাশ্রয়ী।
এদিকে শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে এগারোটা ষাড়ব্রুজ এলাকায় রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্র দিয়ে চারা রোপণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন গোমস্তাপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামছুল আজম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ফিরোজ আলীর সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.কাওসার আলী, রহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান, উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আতিকুল ইসলাম আজম, কৃষক সাইদুল ইসলাম ও রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের চালক আরিফুল ইসলাম।
গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রহনপুর ইউনিয়নের ষাড়ব্রুরুজ ব্লকের ৫৪ জন কৃষককে তাদের দেড়শ বিঘা (৫০ একর) জমিতে কৃষি প্রণোদনায় এই পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
কৃষির সর্বাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে উচ্চ ফলনশীল একই জাত ব্যবহার, ট্রে-তে বীজ বপন, চারা রোপনে রাইচ ট্রন্সপ্লান্টার ব্যবহার, সুষম সার ব্যবহার ও আন্তপরিচর্চা, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা, ধান কর্তনে কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো, উৎপাদন খরচ সাশ্রয় করা, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ভরা মৌসুমে কৃষি শ্রমিকের সংকটের সমাধান সম্ভব হবে এই সমলয় চাষাবাদে। রোপণ পদ্ধতি দেখে কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হয়েছে।
কৃষক সাইদুল ইসলাম ও আব্দুর রশিদ জানান, এই পদ্ধতিতে চারা বপণ ও রোপণ করতে কখনও দেখেনি। প্রথমবারের মত উপজেলা কৃষি বিভাগের তত্বাবধানে ৫০ একর জমিতে তিনিসহ ৫৪ জন কৃষক সমলয় পদ্ধতিতে ধান চাষাবাদ করা হচ্ছে। খরচ কম, শ্রমিক লাগে কম। আশা করছেন ভাল উৎপাদন হবে তাদের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার বলেন, সমলয় পদ্ধতিতে ধান চাষে অর্থের অপচয় কম ও সময় সাশ্রয় হয়। সফলভাবে ফলন উৎপাদনের জন্য সমলয়ে চাষাবাদ পদ্ধতিকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। কৃষকরা এই পদ্ধতিতে পাচ্ছেন বীজ, সার ও কৃষি উপকরণ। ট্রে পদ্ধতিতে কৃষক ভাল মানের চারা উৎপাদন করে অল্প সময়ের মধ্যে অধিক জমিতে ফলাতে পারবে। এছাড়া মেশিনের মাধ্যমে ধান রোপণ, কাটা, মাড়াইসহ সকল প্রক্রিয়া মেশিনের সাহায্যে সম্পন্ন হবে। ফলে শ্রমিক সংকট থেকে মুক্তি ও অল্প খরচে ধান রোপণ ও মাড়াই করে ঘরে তুলতে পারবেন কৃষক। খরচ কমবে এবং অধিক লাভবান হবেন বলে জানান তিনি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামছুল আজম বলেন, খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য ধানের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির প্রয়োজন। সমলয় পদ্ধতিতে ট্রেতে চারা উৎপাদনেন মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তির প্রসারসহ ধানের উৎপাদন খরচ কমানো সম্ভব। খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হবে।