গৌরবের বিজয় দিবস আজ

আপডেট: ডিসেম্বর ১৬, ২০১৬, ১২:২০ পূর্বাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক


আজ মহান বিজয় দিবস। এ দিনটি হচ্ছে বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিবস। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন দেশের অভ্যুদয়ের দিন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃতে নয়মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের এই দিনে বিকেলে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।
যে অস্ত্র দিয়ে বর্বর পাকবাহিনী দীর্ঘ নয় মাস ত্রিশ লাখ বাঙালিকে হত্যা করেছে, দু’লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছে সেই অস্ত্র পায়ের কাছে নামিয়ে রেখে এক রাশ হতাশা এবং অপমানের গ্ল¬ানি নিয়ে লড়াকু বাঙালির কাছে পরাজয় মেনে নেয় তারা। সেই থেকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালিত হয়ে আসছে। এবার জাতি ৪৬তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করবে।
দেশের শ্রেষ্ঠসন্তান বুদ্ধিজীবী এবং একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে এই স্বস্তি নিয়ে আজ কৃতজ্ঞ জাতি সশ্রদ্ধ বেদনায় স্মরণ করছে দেশের পরাধীনতার গ্ল¬ানি মোচনে প্রাণ উৎসর্গ করা বীর সন্তানদের। দিবসটি পালন শুরু হবে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্যদিয়ে। মহান বিজয় দিবসে ঊপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে সকল শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
এবারের বিজয় দিবস পালিত হবে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। শোক আর রক্তের ঋণ শোধ করার গর্ব নিয়ে উজ্জীবিত জাতি দিবসটি পালন করবে অন্যরকম অনুভূতি নিয়ে। অফুরন্ত আত্মত্যাগ এবং রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই মহান বিজয়ের ৪৫ বছর পূর্ণ হলো আজ।
বিজয় দিবস সরকারি ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোর প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হয়েছে। রাতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় করা হয়েছে আলোকসজ্জা। হাসপাতাল, কারাগার ও এতিমখানাগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। সংবাদপত্র বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে, বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘যার যা কিছু আছে’ তা নিয়েই স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন ‘ এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। পরে ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালিরা অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই মুক্তিযুদ্ধে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, ভুটান, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সাহায্য-সহযোগিতা করে। অবশেষে বাঙালি দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে বুকের উষ্ণ রক্তে রাঙিয়ে রাত্রির বৃন্ত থেকে ছিনিয়ে আনে ফুটন্ত সকাল।
বিজয়ের এই ৪৫ বছর অনেক চরাই-উতরাই পেরিয়েছে জাতি। কখনো সামনে এগিয়েছে, আবার পিছিয়ে গেছে নানা রাজনৈতিক টানাপোড়নে। তবুও হতোদ্যম হয়নি জাতি। বিলম্বে হলেও শুরু হয়েছে ইতিহাসের দায়-মোচনের প্রচেষ্টা। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার সম্পন্ন হয়েছেÑ একাত্তরের মানবতা বিরোধী-শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী কয়েকজনের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে, কয়েকজনজন যাবজ্জীবন কারাদ- ভোগ করছে এবং বাকিদের বিচার কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়াও হার না মানা বাঙালি অর্থনৈতিক-সামাজিক অগ্রগতি এবং ক্রীড়াতেও উড়াচ্ছে বিজয় নিশান।- বাসস