রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪ ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
২২ বছর ধরে গ্রাচুয়িটির ৫ লাখ ৩২ হাজার ৩২৮ টাকার জন্য রেলওয়ের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছেন অবসরপ্রাপ্ত এইএন/পিএন্ডডি নজরুল ইসলাম (৮২)। এমন অবস্থায় তিনবার ব্রেইন স্টোক করেন তিনি। ফলে টাকার অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসাও করাতে পারছেন না বলে দাবি করেন নজরুল ইসলাম। নজরুল ইসলাম ২০০১ সালের ৪ এপ্রিল পশ্চিম রেলওয়ে রাজশাহী থেকে তিনি অবসরে যান।
আক্ষেপ করে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘২০০১ সালের ২৯ এপ্রিলে আমি চূড়ান্ত অবসরে যাই। এরপরে টাকার জন্য আবেদন করি। সেখান থেকে (সংশ্লিষ্ট দপ্তর) আমাকে বলা হয়, এইভাবে ঘুরলে হবে না। কিছু পয়সা-কড়ি দিতে হবে। নজরুল বলেন, দেখেন-আমি যদি অন্যভাবে জীবনে ১০ টাকাও কামাই করতাম। তাহলে ওখান থেকে দুইটা টাকা বা পাঁচটা টাকা খরচ করতাম, ফকিরকে দিতাম বা কাউকে দিতাম। তাহলে আমার কষ্ট হত না। কিন্তু আমার বেতনের টাকা। এটা আমার বালবাচ্চার (ছেলে-মেয়ে) হক, আমার পরিবারের হক, এই টাকা আমি দিতে পারবো না। তারা বলেন, এখানে ওখানে ঘোরাঘুরি করে লাভ হবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার একটা বন্ধু ছিল পানি উন্নয়ন বোর্ডের ইঞ্জিনিয়ার। তাকে অনুরোধ করে বললাম, টাকার কথা। সে আমাকে তিন হাজার টাকা দেন। তিন হাজার টাকা নিয়ে আমি তাকে বললাম- আমি লোন হিসেবে নিচ্ছি, টাকা পেলে আপনাকে ফেরত দিয়ে দেব। তিন হাজার টাকা আমি তার (সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সেই সময় টাকা চাওয়া ব্যক্তি) হাতে গুনে দিলাম। তার কয়েকদিন পরে গেছি। তিনি বলেছেন, আপনি ওমুক তারিখে আসেন, গেলাম। বলে যে এতে তো হবে না।
আরো কিছু টাকা দেন। আমার কিছু কলিগ ছিল তাদের ধরে বললাম যে- তিন হাজার টাকা দিছি (দিয়েছি) তার পরেও চাচ্ছে। ও তো বিরাট রাক্ষস। তখন ওদের কাছে থেকে হাজার পাঁচ-সাতেক টাকা নিয়ে দিয়েছি। এর পরে আমি প্রায় চার মাস ঘুরলাম। আমাকে বলে যে, চিফ ইঞ্জিনিয়ার (তৎকালীন) বলেছে ৫০ হাজার টাকা লাগবে (সত্য-মিথ্যা জানি না)। আমি বলেছি দিতে পারবো না। তারপরে আমি বহু ঘুরাঘুরি ও দৌড়াদৌড়ি করেছি।’
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি অনেক অনুনয়-বিনয় করেছি। চাকরি জীবনে যে সব জায়গায় কাজ করেছি তার সব কাগজ দেখিয়েছি। আমি ১৫ থেকে ১৬ জায়গায় কাজের সব প্রশংসাপত্র দিয়েছি। আমার সবই পরিস্কার, ঠিক আছে। আমি শুধু ঘুরছি আর ঘুরছি। টাকা পাইনি। আমি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। প্রধান বিচারপ্রতিকে (বর্তমান ও সাবেক) চিঠি দিয়েছি। আমার কাগজপত্রে আমার চিফ ইঞ্জিনিয়ার (সাবেক) লিখেছেন, আপনার একটা অডিট অপত্তি ছিল। যেটা বাদ দিয়ে আপনার টাকা দেয়ার কথা বলেছে ঢাকার সিজিও অফিসকে। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।’
তিনি জানান, ‘আমার বড় ছেলে ২৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী। কিছু দিন আগে স্ট্রোক করে মারা গেছে। সে আমার সব খরচ দিত। তার স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। এছাড়া তার দুই ছেলে বিয়ে করে আলাদা আছে। এক ছেলে বিকাশ ও অপর ছেে টোবাকো কোম্পানিতে কাজ করে। নজরুলের দাবি ছেলেরা অল্প টাকা বেতন পান। তা দিয়ে তাদের কোনোমতে চলে। তিনি বাড়ি ভাড়া পান সাত হাজার টাকা। আর দুই ছেলে সাহায্য করে। এমন অবস্থায় কষ্ট দিন যাচ্ছে বলে জানান নজরুল।
নজরুল ইসলামের সরবারহকৃত কাগজপত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর নং-১৫১-জি/১৪৬৯/প:/ক(৪) স্মারকে মহাপরিচালক পরিবহন অডিট অধিদপ্তর, অডিট কমপ্লেক্স (১১ তলা) সেগুন বাগিচা, ঢাকা। এর বিষয় ছিল নজরুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত-এইএন/পিএন্ডডি/পশ্চিম/রাজশাহী এর গ্র্যাচুরিয়টির স্থগিতকৃত অর্থ ফেতর প্রদান প্রসঙ্গে।
এতে স্বাক্ষর করেন, নির্বাহী প্রকৌশলী/ পিএন্ডডি (পশ্চিম) মো. আনোয়ার হোসেন (পক্ষে প্রধান প্রকৌশলী (পশ্চিম) বাংলাদেশ রেলওয়ে রাজশাহী। ২০০২ সালের ২৯ এপ্রিল এইএন/এন্ডডি রাজশাহী হিসেবে অবসরগ্রহণ করেছেন তিনি। ইতোপূর্বে তার মাসিক পেনশন মঞ্জুর করা হয়েছে। ১৯৭১-৭২ হতে ২০০৯-১০ অর্থ বছর পর্যন্ত সকল সাধারণ অনুচ্ছেদভুক্ত অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি হওয়ার প্রেক্ষিতে আমার গ্রাচুয়িটির স্থগিতকৃত অর্থ বাবদ ৫ লাখ ৩২ হাজার ৩২৮ টাকা ৯৯ পয়সা ফেরত প্রদান করার জন্য পত্র নং-১৫১-জি/১৪৬৯/ পঃ ক(চ) ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর সিপিও/পশ্চিম/রাজশাহীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়। যে প্রেক্ষিতে সিপিও/পশ্চিম (রাজশাহী কর্তৃক পত্র নং-এস/৭১৯/১৫৪ লুজ (ও) তাং-১৬/০২/২০২১ ইং এর মাধ্যমে এফএএন্ডসিএও। পশ্চিম/রাজশাহীকে উক্ত ৫ লাখ ৩২ হাজার ৩২৮ টাকা ৯৯ পয়সা নজরুল ইসলামের অনুকূলে ফেরত প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ দিন অতিক্রান্ত হলেও কোনো টাকা পাইনি।
তিনি আরো বলেন, নিষ্পত্তিকৃত অডিট আপত্তির বিপরীতে গ্রাচুয়িটির স্থগিতকৃত ৫ লাখ ৩২ হাজার ৩২৮ টাকা ৯৯ পয়সা দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। টাকার অভাবে জীবনযাপন করা কষ্টকর হয়ে উঠেছে। একই সাথে টাকার অভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না।
নজরুলের স্ত্রী সানিয়া বানু (৬৫) বলেন, আমাদের অনেক কষ্টে দিন যাচ্ছে। তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে মারা গেছে। তার স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে চলতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। বাড়ি ভাড়ার সাত হাজার টাকায় মাস চালাতে অনেক কষ্ট হয়। স্বামীর টাকাটা পেলে তাদের অনেক উপকার হতো।
বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আফজাল হোসেনের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। তাই এবিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।