গ্রাম্য সালিশে নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না || নাগরিক সমাজের সোচ্চর ভূমিকা চাই

আপডেট: মার্চ ২৮, ২০১৭, ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ

আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আইনকে হাতে নিয়ে মানুষের প্রতি অন্যায় নির্যাতন চলছেই। আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় দরিদ্র মানুষের ওপর অন্যায়- বিচার, নির্যাতন চালাতে পারছে কথিত গ্রাম্য মাতব্বর ও ফতোয়াবাজরা। সাধারণতঃ গ্রাম্য সালিশের নামে অসহায় নারী ও শিশুরা বেশি করে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জীবনহানির মত ঘটনাও ঘটছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলায় অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে গ্রাম্য মাতব্বররা কথিত আদালত বসিয়ে অভিযুক্ত যুবককে ১০১ দোররা মেরেছেন। এ ঘটনায় এক দরিদ্র গৃহবধূকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছেন মাতব্বররা। বর্তমানে ওই গৃহবধূ ভোলাহাট উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দৈনিক সোনার দেশে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নির্যাতিত ওই নারী ভোলাহাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ জামবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের নয় নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শিহাবকে শুক্রবার দুপুরে গ্রেফতার করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ভোলাহাট উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল বড়ইগাছী ভাটাপাড়া গ্রামে।
দায়েরকৃত মামলা সূত্রে জানা গেছে, ১১ মার্চ রাত প্রায় ১১টার দিকে জামবাড়িয়া ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের মোতাহার হোসেনের ছেলে ফারুক (২৩) বড়ইগাছী ভাটাপাড়া গ্রামের এক গৃহবধূর ঘরে বসে ছিলেন। এ সময় কয়েক ব্যক্তি ওই ঘরে প্রবেশ করে তাদের আটক করে এবং অনৈতিক কাজে তারা লিপ্ত ছিল- এ ধরনের অভিযোগে ওই গৃহবধূকে রাতেই বেধড়ক মারপিট করেন।
একপর্যায়ে এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ইব্রাহীম, সাত নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আব্দুস সামাদ, আট নম্বর ওয়ার্ড সদস্য জিন্নাত ও নয় নম্বর ওয়ার্ড সদস্য শিহাব আটককৃত ফারুককে মারপিট করা হবে না- এ ধরনের আশ্বাস দিয়ে তার বাবার কাছ থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা আদায় করে ফারুককে ছেড়ে দেন।
ঘটনার পর দিন সকাল ১০টার দিকে ওই গৃহবধূর বাড়ির সামনে কথিত আদালত বসানো হয়। এরপর সাত নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও কথিত আদালতের প্রধান বিচারক আবদুস সামাদ ইউনিয়ন পরিষদের অন্য সদস্যদের নিয়ে গ্রাম পুলিশ মোস্তফাকে দিয়ে ওই গৃহবধূকে দ্বিতীয় দফায় মারধর করেন। এর ফলে গৃহবধূ ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এরপরেও কথিত বিচারকদের বিচার থেমে থাকেনি। কথিত রায়ে গৃহবধূর সঙ্গে অনৈতিক কর্মকা-ে লিপ্ত থাকার অভিযোগে ফারুককে মারা হয় ১০১ দোররা। গৃহবধূকে ছয় হাজার টাকা এবং ফারুককে দ্বিতীয় দফা ২২ হাজার টাকা অর্থদ- করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, সালিশে আদায় ৪৮ হাজার টাকা কথিত বিচারকরা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন।
সমাজের এ এক ভয়ঙ্কর চিত্রÑ যার কোনো সমাধান হচ্ছে না। আমাদের জনপ্রতিনিধিদের অধিকাংশরই মান কত নি¤œ এসব ঘটনা থেকে বোঝা যায়। এরা সরকারের অংশ হলেও রাষ্ট্রের আইন ও নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে অবস্থান নেয়। এটা তাদের অজ্ঞতা নাকি পাশবিক উন্মত্ততা? আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির বিষয়টিই তাদের কাছে বেশি গুরুত্ব পায়। এর জন্য তাদেরকে কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না। সবকিছুই ম্যানেজ করে নিতে পারে তারা। যারা নির্যাতিত হয় তারা আইনের আশ্রয় নিলেও মামলা বেশি দিন চালাতে পারে নাÑ ফলে এক পর্যায়ে তাদের থেমে যেতে হয় কিংবা মিমাংসা করে নিতে হয়। এ ঘটনার ক্ষেত্রেও হয়ত তেমনটি হবে।
কিন্তু সচেতন নাগরিকগণ এর দায় একেবারে এড়িয়ে যেতে পারেন না। এড়িয়ে যাওয়ার অর্থই হলো অমানবিক আচরণকে উৎসাহিত করা। এতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বাড়ছে বৈ কমছে না। মানবিক বোধসম্পন্ন প্রতিটি মানুষকেই এ ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ