নিজস্ব প্রতিবেদক:
গ্লোবাল গেইন গ্রুপে ৫০ হাজার টাকা রাখলে প্রতিদিন ২০০ করে টাকা করে পাবে গ্রাহক-এমন নানা প্রতুশ্রুতিতে গ্রাহকের কোটি টাকার বিনিয়োগ হাতিয়ে নেয়া গ্লোবাল গেইন গ্রুপ’র সিইও সাইফুল ইসলামে (৫০) আটক করেছে পুলিশ। তার বাড়ি বগুড়ার শেরপুরে।
মাত্র দুই মাস অফিস পরিচালনা করে গ্রাহকের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে অফিস বন্ধ করে দেয় এই প্রতারক চক্র। জানা যায়, রোবাবর (২৪ অক্টোবর) সকালে সাড়ে ১০ টার দিকে সাইফুল ইসলামকে রাজশাহী নগরীর শিরোইল বিন্দু হোটেল ও রেস্টুরেন্টের দুই তলায় গ্রাহকরা অবরুদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নেয়। পরে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
গ্লোবাল গেইন গ্রুপ নামের এই প্রতিষ্ঠানটি নগরীর উপশহর নূর মসজিদ এলাকায় শাখা অফিস পরিচালনা করছিলো। মাত্র দুই মাস অফিস চলার পরে বন্ধ করে দেয়া হয়।
আরও জানা যায়, রাজধানীর বাড্ডায় গ্লোবাল গেইন গ্রুপের কোম্পানির অফিসে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদুল ইসলাম, সিইও সাইফুল ইসলাম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম, এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর আলতাব, জাকারিয়া, মারুফ, হিসাব রক্ষক মেহেদী ও সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরপরে তাদের অন্য অফিসের সাথে রাজশাহী অফিসও বন্ধ হয়ে যায়।
গ্লোবাল গেইন গ্রুপ’র কয়েকজন গ্রাহক জানান, গ্লোবাল গেইন গ্রুপ করোনার মধ্যে মার্কেটে আসে। গ্লোবাল গেইন গ্রুপে ৫০ হাজার টাকা রাখলে প্রতিদিন ২০০ করে টাকা পাওয়া এমন প্রতুশ্রুতিতে গ্রাহকের বিনিয়োগ সংগ্রহ করে তারা। এছাড়া তাদের গ্রুপের বিভিন্ন পণ্য আছে। যেগুলো গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করা হয়। দাম হিসেবে লাভের টাকা থেকে কেটে নেয়ার কথা ছিল। তবে রাজশাহীতে অল্প কিছুদিন নিয়মিত থাকার পরে তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
রাজশাহী নগরীর মোন্নাফের মোড় এলাকার গ্লোবাল গেইন গ্রুপ’র গ্রাহক সিরাজ জানান, গ্লোবাল গেইন গ্রুপ’র রাজশাহীতে অফিস ছিল। এখন বন্ধ। রাজশাহীতে এই গ্রুপের প্রায় ১৮০ জন গ্রাহক আছে। তাদের থেকে বিভিন্ন সময় কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে এই গ্রুপ।
আরেক ভুক্তভোগি ফারুক হোসেন জানান, তিনি দিয়েছেন ৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা। বিভিন্ন সময়ে নিজের ও আত্মীয়দের টাকা দিয়েছেন। করোনার সময়ে তাকে বোঝানো হয়েছিল টাকা টাকাই থাকবে। মধ্যে থেকে মুনাফা পাবে। এমন প্রলোভেনে ফারুক নিজের মেজ ভাই মামুন হোসেন ও শাশুড়ির টাকাও দেন এই প্রতারকদের।
ফারুক জানান, তাদের প্রতিনিধিরা তাকে বলে ছিল ৫০ হাজার টাকা রাখলে প্রতিদিন তিনি ২০০ টাকা পাবেন। এই ২০০ টাকার মধ্যে ২০ টাকা কেটে রাখা হবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস (সাবান, চাল, ডাল, কাপড় ইত্যাদি) কেনাকাটা বাবদ। তবে শুধু টাকার ম্যাসেজ আসে। কিন্তু টাকা তোলা যায় না।
তিনি আরও জানান, গ্লোবাল গেইন গ্রুপ’র একটি আইডি ছিল। যে আইডিতে তাদের টাকা আসতো। কিন্তু আইডির নিয়ন্ত্রণ ছিল গ্লোবাল গেইন গ্রুপ’র হাতে। তারা চাইলে টাকা তোলা যেত। না চাইলে টাকা তোলা সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতিতে কয়েকবার যোগাযোগ করে বেশ কয়েক দফায় ১২ হাজার টাকা তুলেছেন।
গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি)’র মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। সে এমএলএম কোম্পানি পরিচালনার মাধ্যমে প্রতারণা করে আসছিলো। তার বিরুদ্ধে পুলিশি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।