শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
বিলুপ্তপ্রায় সরীসৃপ জাতের প্রাণী ঘড়িয়াল সংরক্ষণ ও বংশবৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সময়ের গুরুত্বপর্ণ উদ্যোগ এটি। এই উদ্যোগের দাবি দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসছিল। বিলম্বে হলেও বন অধিদপ্তর দেশের প্রথম ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছে। রাজশাহীতেই এই কেন্দ্রটি স্থাপিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রজনন কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন, বাংলাদেশ ঢাকা বন অধিদফতরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী। রাজশাহীর পবা নার্সারিতে ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্রে গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে আনা হয় দুটি পূর্ণবয়স্ক ঘড়িয়াল। একটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী। এই কেন্দ্রে অবমুক্ত করা হয় ঘড়িয়াল দুটি। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সোনার দেশসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ ও প্রচার করেছে।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ঘড়িয়াল সংরক্ষণে এই উদ্যোগ নতুন নয়। ২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার একটি পুকুরে ঘড়িয়ালের প্রজননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে সময় চিড়িয়াখানায় দুটি স্ত্রী ঘড়িয়াল ছিল, যেগুলো আগে জেলেদের জালে ধরা পড়ে উদ্ধার করা হয়। এর একটিকে পাঠানো হয় ঢাকা চিড়িয়াখানায়, যার নাম রাখা হয় ‘যমুনা’। ঢাকায় ছিল চারটি পুরুষ ঘড়িয়াল। অন্যদিকে ঢাকা থেকে একটি পুরুষ ঘড়িয়াল এনে রাজশাহীর পুকুরে ছাড়া হয়, তার নাম দেওয়া হয় ‘গড়াই’। আর রাজশাহীতে আগে থেকেই থাকা স্ত্রী ঘড়িয়ালটির নাম হয় ‘পদ্মা’। এই আন্তচিড়িয়াখানা বিনিময়ের মাধ্যমে ‘যমুনা’ ঢাকা চিড়িয়াখানায় তিনটি পুরুষ সঙ্গী পায়, আর রাজশাহীর ‘পদ্মা’ পায় ‘গড়াই’কে। তবে আট বছরেও তাদের কোনও বাচ্চা হয়নি, কারণ ছিল প্রজননের অনুপযোগী পরিবেশ। তাই এবার আইইউসিএন এবং সামাজিক বন বিভাগের যৌথ উদ্যোগে রাজশাহীতে গড়ে তোলা হলো ঘড়িয়ালের উপযোগী প্রজনন কেন্দ্র। কিন্তু ওই উদ্যোগ সফল হয়নি।
ঘড়িয়াল মূলত খুবই শান্ত ও উপকারী জলজ প্রাণী। এটি বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২-এর তালিকাভুক্ত একটি রক্ষিত প্রজাতি।
বিশ শতকের আশির দশকে দেশের যমুনা, পদ্মা ও মেঘনা নদীতে প্রচুর ঘড়িয়ালের দেখা মিলতো। কিন্তু ঘড়িয়ালকে ভয়ংকর প্রাণী ভেবে মানুষ নির্বিচারে মেরে ফেলায় এখন আর তেমন দেখা যায় না। এরা এখন মহাবিপন্ন প্রাণী। ২০১৩ সালে দেশে ঘড়িয়াল বিলুপ্ত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিকভাবে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই ঘোষণা সঠিক ছিল না। ঘোষণার পরেও ঘড়িয়ালের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা গেছে।
ঘড়িয়াল সাধারণ কুমিরের তুলনায় কিছুটা আলাদা। সাধারণত পুরুষ ঘড়িয়ালের দৈর্ঘ্য ৬.৫ মিটার এবং স্ত্রী ঘড়িয়ালের দৈর্ঘ্য ৪.৫ মিটার পর্যন্ত হয়। আকারে বিশাল হলেও এরা মানুষের জন্য হুমকি নয়। চোয়াল সরু ও দুর্বল হওয়ার কারণে বড় শিকার ধরতে পারে না। দাঁতগুলো চিকন ও ধারালো হওয়ায় বিশেষভাবে মাছ ধরতে পারে। প্রধানত মাছ, ছোট পাখি ও ব্যাঙ খেয়ে এরা বেঁচে থাকে। ঘড়িয়ালের প্রজনন ঋতু সাধারণত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি। স্ত্রী ঘড়িয়াল বালুচরে গর্ত খুঁড়ে ডিম পাড়ে। প্রতিবার ডিমের সংখ্যা হয় ৩০-৫০টি। প্রায় ৩ মাস পর ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। আয়ু ৫০ থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত হতে পারে।
আইইউসিএন এবং সামাজিক বন বিভাগের যৌথ উদ্যোগে নেয়া প্রকল্পটি সফল হবে এই প্রত্যাশাই রইল।