ঘণ্টায় ৪৮ কেজি চা পাতা তোলার স্বীকৃতি জেসমিনের

আপডেট: জুন ৪, ২০২৪, ২:২১ অপরাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক :


একচল্লিশ বছর ধরে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নেপচুন চা বাগানে কাজ করছেন জেসমিন আক্তার। কুমিল্লায় জন্মগ্রহণকারী এই নারীর বিয়ে হয় ১৬ বছর বয়সে, তারপর স্বামীর সঙ্গে এসে এই বাগানে যোগ দেন পাতা তোলার কাজে।

জেসমিনের বয়স এখন ৫৭ বছর, তিনি প্রতি ঘণ্টায় ৪৮ কেজির মতো চা পাতা তুলতে পারেন। গত এক বছরে তিনি পাতা তুলেছেন ২৫ হাজার ২১৭ কেজি। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি এ বছর ‘জাতীয় চা পুরস্কার’ পেয়েছেন।

সারাদেশে সর্বোচ্চ চা পাতা চয়নকারী শ্রমিক হিসেবে জেসমিন বাংলাদেশ চা বোর্ডের এই পুরস্কার পেয়েছেন। মঙ্গলবার ঢাকায় জাতীয় চা দিবসের অনুষ্ঠানে তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর আগে চা বোর্ডের সচিব রুহুল আমীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাতীয় চা দিবস উপলক্ষে প্রবর্তিত এই পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চা পাতা চয়নকারী ক্যাটাগরিতে জেসমিন আক্তার পুরস্কার পাচ্ছেন। তিনি এক বছর এবং প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ চা চয়ন বা উত্তোলনকারী হিসেবে এ পুরস্কার পাচ্ছেন। পুরস্কার হিসেবে তিনি ক্রেস্ট ও সনদ পাবেন।”

গতবারও এই পুরস্কার পেয়েছিলেন নেপচুন চা বাগানের এক শ্রমিক, তার নাম উপলক্ষী ত্রিপুরা। ইস্পাহানি গ্রুপের মালিকানাধীন এ বাগানটি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুর থানার নারায়নহাট ইউনিয়নে অবস্থিত।

চা বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২৩ সালের সর্বোচ্চ চা পাতা চয়নকারী বাছাই করতে তাদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে। ৩০ মিনিটে একজন চা শ্রমিক কী পরিমাণ পাতা উত্তোলন করতে পারেন, সেই হিসাবের সঙ্গে উত্তোলিত ভালো পাতার পরিমাণও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। চা গাছের উপরের অংশ কোন অবস্থায় আছে তাও বিবেচনায় রাখা হয় এবার।

শ্রীমঙ্গলের করিমপুরের বাগানে চা শ্রমিকদের মধ্যে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ চা বোর্ডের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে পাতা উত্তোলনের বিষয়টি রেকর্ড করা হয়।

নেপচুন চা বাগানের জেসমিন আক্তার আধা ঘণ্টায় মোট ২৪ কেজি পাতা সংগ্রহ করেন। সে হিসাবে তিনি ঘণ্টায় চা পাতা উত্তোলন করেছেন ৪৮ কেজি। তার বেশি কেউ উত্তোলন করতে পারেননি।
নেপচুন চা বাগানের উপ ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের শ্রমিক জেসমিন আক্তার গত বছর মোট ২৫ হাজার ২১৭ কেজি পাতা সংগ্রহ করেছেন।

“সে সর্বোচ্চ পাতা চয়নকারী হিসেবে এবারের চা পুরস্কারের জন্য মনোনীত হওয়ায় আমরা আনন্দিত। গতবছরও আমাদের অন্য একজন চা শ্রমিক উপলক্ষী ত্রিপুরা একই ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছিলেন।”

জেসমিন ১৬ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসে স্বামী আবদুল বারেকের সঙ্গে চলে আসেন ফটিকছড়ির চা বাগানে। সেখানে সংসার শুরুর পরপরই স্বামীর সঙ্গে লেগে পড়েন চা বাগানের কাজে। ৪১ বছর ধরে সেই কাজই করে চলেছেন তিনি।।
তার স্বামী বারেক পাতা সংগ্রহকারী না হলেও বাগানে অন্য কাজের সঙ্গে যুক্ত। তাদের দুই ছেলে, দুই পুত্রবধূ, মেয়ে ও মেয়ে জামাইও চা বাগানে কাজ করেন।

জেসমিন আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিয়ের পর থেকেই বাগানে কাজ করছি। বাগানই আমার পরিবারের মতো। আমার ঘরের সকলে এখানে কাজ করে।”

শ্রেষ্ঠ চা চয়নকারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার পাওয়ার আগেতিনি বলেন, “আমি খুবই খুশি, ভালো লাগছে।”
পরিবারের সবাই চা বাগানে কাজ করলেও নাতি-নাতনিদের পড়ালেখা করাতে চান জেসমিন।

নেপচুন চা বাগানের কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ফটিকছড়িতে ১৯৬০ সালে ২৭০০ একর জায়গার ওপর তাদের বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়। শ্রমিকরা নিরলস শ্রম দিয়ে এ বাগানকে একটি পর্যায়ে এনেছেন।
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ