ঘূর্ণিঝড় রিমালে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি II সারা দেশে নিহত ১০, ৩৭ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত II বিদ্যুৎবিহীন ২ কোটি ৭০ লাখ গ্রাহক

আপডেট: মে ২৭, ২০২৪, ১১:৩০ অপরাহ্ণ


সোনার দেশ ডেস্ক:


ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে দেশের ছয় জেলায় ১০ জন নিহত হয়েছেন। ১৯ জেলার ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি এবং আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি।

ঘূর্ণিঝড় রিমাল-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার (২৭ মে) সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে মোট ১৯টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর এবং যশোর। ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার সংখ্যা ১০৭টি এবং ইউনিয়ন ও পৌরসভার সংখ্যা ৯১৪টি।

ঘূর্ণিঝড় সতর্কবার্তার প্রেক্ষিতে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে নয় হাজার ৪২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এসব আশ্রয়কেন্দ্র ও স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আট লাখের বেশি লোক আশ্রয় নিয়েছেন। গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়াসহ আশ্রিত পশুর সংখ্যা ৫২ হাজার ১৪৬টি।

ছয় জেলায় প্রাণ গেল ১০ জনের
এদিকে রোববার (২৬ মে) বিকেল থেকে সোমবার (২৭ মে) পর্যন্ত উপকূলীয় ৬ জেলায় প্রাণ গেছে ১০ জনের। এর মধ্যে পটুয়াখালীতে তিনজন, ভোলা ও বরিশালে দুইজন করে এবং সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় একজন করে মারা গেছেন।

সোমবার (২৭ মে) ভোরে বরিশাল নগরীর রূপাতলী এলাকায় বহুতল ভবনের দেয়াল ধসে দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন একজন। পুলিশ জানিয়েছে, চারজন রেস্টুরেন্টে অবস্থান করছিলেন। বাতাসের তীব্রতায় আকস্মিক পাশের চারতলা ভবনের একটি অংশের দেয়াল ধসে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন হোটেল মালিক লোকমান ও কর্মচারী মোকছেদুল। আহত হন কর্মচারী। তাকে শের-ই বাংলা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে ভোলায় মারা গেছেন শিশুসহ দুজন। এর মধ্যে বসতঘরে চাপা পড়ে মারা যান মনেজা খাতুন নামে এক নারী। তিনি লালমোহন উপজেলার চর উমেদ গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কাদেরের স্ত্রী। স্থানীয়রা জানান, রাতে মনেজা খাতুন তার এক নাতিকে নিয়ে নিজ ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন। ঝড়ো বাতাসে টিনের ঘর ভেঙে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি।

এ ছাড়া জেলার দৌলতখানে ঘর চাপা পড়ে মাইশা (৪) নামে এক শিশু মারা গেছে। শিশুটি দৌলতখান পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মনির হোসেনের মেয়ে। জানা যায়, রাতে বাবা-মার সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল শিশু মাইশা। ভোরের দিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালে তাদরে ঘরের পাশে গাছ ভেঙে পড়ে। এতে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মাইশার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ওই পরিবারের আরও তিনজন।
পটুয়াখালীতে ‘রিমেল’ এর তাণ্ডবে মারা গেছেন তিনজন। এর মধ্যে দুমকি উপজেলায় ঝোড়ো হাওয়ায় গাছচাপায় জয়নাল হাওলাদার নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। জানা গেছে, জয়নাল হাওলাদার উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড নলদোয়ানি স্লুইসগেট এলাকার বাসিন্দা।

জেলার বাউফলে ঘূর্ণিঝড় ‘রিমালে’ মৃত্যু হয়েছে মো. আব্দুল করিম নামে এক পথচারীর। সকাল ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদ গেটের সামনে ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তি উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা।

রোববার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালি আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শওকাত মোড়ল নামে এক বৃদ্ধ মারা যান। ওইদিন বিকেলে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে প্লাবিত এলাকা থেকে বোন ও ফুফুকে রক্ষা করতে গিয়ে স্রোতে ভেসে প্রাণ হারান শরীফ হাওলাদার নামে এক যুবক।

চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানার টেক্সটাইল এলাকায় দেয়াল চাপায় মারা যান এক পথচারী। স্থানীয়রা জানায়, ভারী বৃষ্টির সময় একটি দেয়ালের পাশে আশ্রয় নেন সাইফুল ইসলাম হৃদয়। হঠাৎ দেয়ালটি ভেঙে পড়লে চাপা পড়ে তিনি মারা যান। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস তার মরদেহ উদ্ধার করে।

কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার নোয়াগাঁও চৌমুহনী এলাকায় নুর আইডিয়াল স্কুলে ক্লাস করার সময় পার্শ্ববর্তী নির্মাণাধীন এক ভবনের দেয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম সাগর (১২) নামে ৫ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।

সোমবার (২৭ মে) বেলা পৌনে ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সদর দক্ষিণ মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) খাদেমুল বাহার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিদ্যুৎবিহীন ২ কোটি ৭০ লাখ গ্রাহক
ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে উপকূলীয় এলাকা। কোথাও উপড়ে গেছে বিদ্যুতের খুঁটি, কোথাও গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে গেছে। আবার কোথাও কোথাও নিরাপত্তাজনিত কারণের বন্ধ আছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। সব মিলিয়ে পল্লী বিদ্যুতের ৬৫টি সমিতিতে গ্রাহক সংযোগ বন্ধ আছে। উপকূলীয় এলাকায় ২ কোটি ৭০ লাখ ৭৯ হাজার ৬৩১ গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছেন বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির একটি প্রাথমিক হিসাবে এই তথ্য দেওয়া হয়।

ঝড়ে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ৮০টি সমিতির মোট ২ কোটি ৬৯ লাখ ৪৭ হাজার ৭০০ গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ৩ লাখ ২১ হাজার ১৫০ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা গেছে। এখনও বিদ্যুৎবিহীন আছে ২ কোটি ৬৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৫০ গ্রাহক। আরইবির ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে পোল নষ্ট হয়েছে ২ হাজার ৩৯২টি, ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে ১ হাজার ৯৮২টি, স্প্যান (তার ছেঁড়া) ৬২ হাজার ৪৫৪টি, ইন্সুলেটর ভেঙেছে ২১ হাজার ৮৪৮টি, মিটার নষ্ট হয়েছে ৪৬ হাজার ৩১৮টি। আরইবির দাবি, সার্বিকভাবে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি ৭৯ কোটি ২ লাখ টাকা।

এদিকে রিমালের প্রভাবে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে পোল নষ্ট হয়েছে ২০টি, পোল হেলে পড়েছে ১৩৫টি, বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেছে ২৪ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার, ১১ কেভি পোল ফিটিংস নষ্ট হয়েছে ১৪২ সেট, ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে ১২টি, ১১ কেভি ইন্সুলেটর নষ্ট হয়েছে ১৩৪টি। প্রাথমিকভাবে এই কোম্পানির ক্ষতি ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা। বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিদ্যুৎবিহীন গ্রাহক সংখ্যা ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৮১ জন।

জ্বালানি বিভাগ থেকে জানায়, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী এলএনজি টার্মিনালের অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে স্থাপনাগুলোর কোনও ক্ষতি হয়নি। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কমানো এলএনজি সরবরাহ গতকাল বিকাল থেকে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করে বর্তমানে তা ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে। সোমবার দুপুর থেকেই তা ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত করা সম্ভব হয়েছে।

মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় চলমান থাকায় ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ সরেজমিন পরিদর্শন করে নির্ণয় সম্ভব হয়নি। প্রাথমিকভাবে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনা করে ক্ষয়ক্ষতির একটি প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে ২৪ ঘণ্টাব্যাপী কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে তদারকি করা হচ্ছে। জেলা পর্যায় ও সমিতিভিত্তিক কন্ট্রোল রুম রয়েছে। পরিবহন ঠিকাদারকে স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এলাকায় সব কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার জন্য আরইবি ও ওজোপাডিকোর লোকজন প্রয়োজনীয় মালামালসহ প্রস্তুত রয়েছে। ঝড় বা বাতাস কমার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করা হবে।

মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন
প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ কবলিত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ উপকূলীয় এলাকা এখনও মোবাইল যোগাযোগ নেটওয়ার্কের বাইরে। রোববার রাত থেকেই অনেকে ফোনে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।

টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক কেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে ব্যাপারে কোনো তথ্য জানাতে পারেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। মোবাইল অপারেটর রবি দাবি করেছে, তাদের কয়েকটি সাইট (টাওয়ার) অচল হলেও সেগুলো আবার চালু হয়েছে। বাংলালিংকের তথ্য পাওয়া যায়নি। গ্রামীণফোন জানিয়েছে, তারা দ্রুত সংযোগের আওতায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।

গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশনস শারফুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি, সম্মিলিতভাবে কাজ করছি। এরই মধ্যে একটি ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম ও কন্ট্রোল রুম গঠন করা হয়েছে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকা দ্রুত সংযোগের আওতায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।

রাজধানীর বাসিন্দা জেসমিন জানান, তার বৃদ্ধ বাবা-মা থাকেন সাতক্ষীরার শ্যামনগরে। রোববার রাত থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। অন্য গ্রামের এক আত্মীয়ের কাছ থেকে বাবা-মা’র বিষয়ে জেনেছেন।

১৯ উপজেলার নির্বাচন স্থগিত
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ১৯টি উপজেলার নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসব উপজেলায় পরে ভোট হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম। সোমবার (২৭ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। স্থগিত উপজেলাগুলোতে আগামী ২৯ মে তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল।

যেসব উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত হয়েছে- বাগেরহাটের শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, মোংলা, খুলনা জেলার কয়রা, ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, পটুয়াখালী সদর, দুমকী, মির্জাগঞ্জ, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, ভোলার তজুমদ্দিন, লালমোহন, ঝালকাঠির রাজাপুর, কাঁঠালিয়া এবং বরগুনার বামনা ও পাথরঘাটা।

ইসি সচিব বলেন, ‘তৃতীয় ধাপে ১০৯ উপজেলায় ভোট হওয়ার কথা ছিল। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বাহিনীগুলো প্রস্তুতিও নিয়েছিল। কিন্তু গতকাল রাত থেকে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। এসব এলাকায় ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত এবং ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত ঘোষিত হয়।’

তিনি জানান, স্থানীয় প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী যেসব নির্বাচনি এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের পানি প্রবেশ করেছে, বাঁধ ভেঙেছে, কোথাও গাছপালা ভেঙে পড়েছে, কোনো কোনো জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, এমন অবস্থায় ওইসব উপজেলা নির্বাচন করা সম্ভব নয়। মাঠ প্রশাসনের তথ্য এবং তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে ওইসব উপজেলায় ভোট স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে জাহাংগীর আলম বলেন, ‘এই সংখ্যা বাড়তে পারে। আমরা যদি আরও কোনো তথ্য পাই, যেখানে পানি উঠেছে, ভোটকেন্দ্র ডুবে গেছে, চলাচলের রাস্তাঘাট ডুবে গেছে তাহলে সেসব উপজেলার ভোট স্থগিত হতে পারে।’

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে প্রথমে ১১২টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। পরে আইনি জটিলতায় কয়েকটিসহ আজ ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে ১৯ উপজেলার নির্বাচন স্থগিত করা হলো। এ পর্যায়ে পূর্ব নির্ধারিত তফসিল অনুসারে আগামী ২৯ মে ৯০ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

৩২ লাখ শিশুসহ ৮৪ লাখ মানুষ ঝুঁকিতে
ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে বাংলাদেশের ৩২ লাখ শিশুসহ ৮৪ লাখ মানুষ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)। এসব মানুষ স্বাস্থ্য, পুষ্টি, স্যানিটেশন ও নিরাপত্তা অধিকারের ঝুঁকিতে রয়েছে। সোমবার (২৭ মে) এক বার্তায় সংস্থাটি এ তথ্য জানিয়েছে।

এতে বলা হয়, এমন পরিস্থিতিতে ইউনিসেফ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, হাইজিন কিটস এবং জেরিক্যানসহ জরুরি সরবরাহগুলো পূর্বনির্ধারিত করার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় এবং আশ্রয়কেন্দ্রে সেগুলো বিতরণের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া সংস্থার জরুরি সেবায় নিয়োজিত কর্মী ও অংশীদাররা নারী ও শিশুদের ওপর ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মূল্যায়ন করছে।

শক্তি কমে ঘূর্ণিঝড় রিমাল বর্তমানে স্থল গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এই অবস্থায় পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে আগামীকাল মঙ্গলবার (২৮ মে) সকাল পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পাশাপাশি সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

ঢাকাবাসীর নাকানি-চুবানি

ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা, গাছ ভেঙে সড়কে আছড়ে পরে, অনেক এলাকায় স্বল্প সময়ের জন্য বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন হয়। সোমবার ঢাকার গণপরিবহনও কম চলাচল করেছে, এতে ঢাকাবাসীকে চলাচলের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তবে জলাবাদ্ধতা এবং সড়কে উপরে পরা গাছ পরিস্কার করতে সিটি কর্পোরেশনের ৯১টি টিম কাজ করেছে। দিনভর একটানা বৃষ্টিতে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন কর্মক্ষেত্রে যাওয়া ও খেটে খাওয়া মানুষেরা। এছাড়া শিক্ষার্থীদের ছাতা মাথায় ভোগান্তিতে পরতে দেখা গেছে। ঢাকায় সোমবার সকাল থেকে ১১৬ মিলিমিটার অতি ভারী বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

রিমালের প্রভাবে হওয়া বৃষ্টিতে রাজধানীর অনেক এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বেশ কিছু এলাকায় গাছ ভেঙে সড়কে আছরে পরে। মিরপুর পাইকপাড়া এলাকায় সরকারি ডি টাইপ কোয়ার্টার এলাকায় বড় আকারের একটি কৃষ্ণচূড়াগাছ ঝড়ে ভেঙে যায়। সোমবার সকাল ১০টায়, উত্তরার জসীমউদ্দীন সড়কে সড়ক বিভাজকের একটি গাছ উপড়ে প্রাইভেট কারের ওপর পরতে দেখা গেছে।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবজনিত বৃষ্টিপাতের ফলে জলাবদ্ধতা নিরসনে সোমবার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। পাশাপাপশি জলাবদ্ধতা দূর করতে কাজ করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কুইক রেসপন্স টিম।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার ভোর থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ঢাকায় ১১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আমাদের হিসেব অনুযায়ী এটি অতি ভারী বৃষ্টিপাত। এরমধ্যে ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এরপর দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সন্ধ্যার পরও ঢাকায় বৃষ্টি ছিল।

Exit mobile version