বুধবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১ কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
সেলিম সরদার, ঈশ্বরদী:
এখন ঈশ্বরদীর বিখ্যাত বোম্বাই লিচুর ভরা মৌসুম। ঈশ্বরদীর গ্রামে গ্রামে যখন পরিপক্ক লিচু লাল রঙে রঙিন হয়ে বাজারে উঠতে শুারু করেছে তখনই ঘূর্ণিঝড় রিমালের তান্ডবে সর্বনাশ হয়েছে লিচুর। যখন প্রতি একশ’ লিচুর দাম ৩০০ টাকা, তখন ঝড়ের তান্ডবে গাছ থেকে ঝরে পড়া লিচু ফেরি করে বিক্রি করা হচ্ছে মাত্র ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দামে। অথচ ঝরে না পড়লে এক কেজি ওজনের এই পরিমান লিচুই বিক্রি হতো ৩০০ টাকায়। জানা গেছে, ঈশ্বরদীর এবার ৩১০০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা লিচুর গাছ রয়েছে ৫ লাখেরও বেশি। ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় প্রতিটি গাছ থেকেই ঝরে পড়েছে বিপুল পরিমান লিচু। এসব লিচুই বাধ্য হয়ে বিক্রি করা হচ্ছে কেজি দরে।
মঙ্গলবার (২৮ মে) ভ্যানে ভর্তি করে ঝরে পড়া লিচু বিক্রি করছিলেন সলিমপুর ইউনিয়নের কৃষক আজমল হোসেন। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে আমার বাগানের গাছ থেকে অধিকাংশ লিচু ঝরে পড়েছে। এই লিচুই বাজারে বিক্রি করতে এসেছি। ৩০০ টাকার লিচু বিক্রি করতে হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। ‘পানির দরে বেচতে হচ্ছে।’ মানিকনগর গ্রামের লিচু চাষী আমিরুল ইসলাম সরদার জানান, লিচুর ফলন ভালো হলেও শেষ সময়ে এই অপুরণীয় ক্ষতিতে গ্রামে গ্রামে হতাশা বিরাজ করছে লিচু চাষীদের ঘরে ঘরে। একেবারে শেষ সময়ে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে লিচু নিয়ে এই এলাকার হাজার হাজার মানুষের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে।
আওতাপাড়া গ্রামের দূর্জয় ইসলাম লিমন মন্ডল জানান, লিচু আবাদে আগের চেয়ে খরচও বেড়েছে অনেক। লিচু আবাদের জন্য বছরে প্রতি বিঘা জমির খাজনা পড়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। এর বাইরে প্রতিটি লিচু গাছে বছরে অন্তত: ৪ বার কীটনাশক ¯েপ্র করতে হয়, তাতে প্রায় আড়াই হাজার টাকা খরচ হয়। সার, সেচ, শ্রমিকের মজুরি বাবদ খরচ হয় আরো ২ হাজার টাকা। ঘূর্ণিঝড়ের আগে যারা লিচু বিক্রি করেছেন তারা খরচের টাকা নিয়ে ঘরে ফিরেছেন। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ে এবার লিচুতে যে পরিমান ক্ষতি হয়ে গেছে তা অপুরণীয়। এবছর তাপদাহের ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এই সর্বনাশ হয়েছে লিচু চাষীদের।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঈশ্বরদীতে এবছর লিচু আবাদী কৃষকের সংখ্যা ৮ হাজার ৪০০ জন। তারা এবার লিচু আবাদে এবছর বিনিয়োগ করেছেন ১২৫ কোটি টাকা।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসার মিতা সরকার জানান, প্রথম দফায় তাপদাহে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ লিচুর গুটি ঝরে পড়েছে, গাছেই ফেটে নষ্ট হয়েছে কিছু লিচু। শেষ সময়ে সোমবার সারাদিন ও রাতভর ঘূর্ণিঝড়ে লিচুর যে ক্ষতি হয়েছে তাতে এ বছর লক্ষ্যমাত্রা পুরণ করা আর সম্ভব হবেনা। এ বছর লিচু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল সাড়ে চারশ’ কোটি টাকা।