মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১১ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চন্দ্রজয় করে তিন মহাকাশচারী বদলে দিয়েছিলেন মানবসভ্যতার ইতিহাস। চাঁদের বুকে মানুষের পায়ের স্পর্শের সেই ৫৩ বছর পূর্ণ হলো আজ ২০ জুলাই। তবে ১৬ জুলাই ছিল সেই ঐতিহাসিক ‘চন্দ্রভ্রমণের’ শুরু। ১৯৬৯ সালের এই দিনটাতে ‘স্যাটার্ন-৫’ রকেটে চেপে চাঁদে পাড়ি দিয়েছিল ‘অ্যাপোলো ১১’। যদিও তার পর থেকে একাধিক বার সফল চন্দ্র অভিযান হয়েছে।
১৬ জুলাই ১৯৬৯। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ভোর ৬:৪৫ টায় তিন নভোচারী তাঁদের নাশতা সারেন। এরপর নভোচারীর পোশাক পরেন। পেছনে ফিরে সবার উদ্দেশে হাত নেড়ে ধীরে ধীরে রকেটের ভেতর অদৃশ্য হয়ে যান। গোটা দুনিয়ার মানুষ টেলিভিশনে এই দৃশ্য সরাসরি দেখে। সকাল ৯: ৩২ টায় ৭৬ লাখ পাউন্ড জ্বালানি ভরা নাসার ‘স্যাটার্ন ৫’ রকেটের ইঞ্জিনের অংশ প্রজ্জ্বলিত হয়। এরপর উড়াল দেয় মহাকাশের দিকে। চাঁদের মাটিতে পৌঁছাতে তাঁদের সময় লেগেছিল ৪ দিন। ২০ জুলাই চাঁদের কক্ষপথে প্রদক্ষিণের পর এই উপগ্রহের মাটিতে নামেন তিন মহাকাশচারী। প্রথম পা রাখেন মার্কিন মহাকাশচারী নীল আর্মস্ট্রং। তাঁর পরে এডুইন অলড্রিন। সবশেষে নামেন পাইলট মাইকেল কলিন্স।
ফেরার সময় একটি ব্যাগে নমুনা হিসেবে সাড়ে ২১ কিলোগ্রাম চাঁদের মাটি এবং পাথর ভরে ফিরে এসেছিলেন তাঁরা। পরে জানা গিয়েছিল, সেই ব্যাগটি হারিয়ে ফেলেছিল নাসা। তবে ২০১৩ সালে সেটির খোঁজ মেলে। যে রকেটে চেপে উড়েছিল অ্যাপোলো ১১, তার উচ্চতা ছিল ৩৬৪ ফুট। ওজন ছিল ২ লাখ ৩৯ হাজার ৭২৫ কিলোগ্রাম। আর অ্যাপোলো ১১-র ওজন ছিল ৪৫ হাজার ৭০২ কিলোগ্রাম। পৃথিবী থেকে উৎক্ষেপণ এবং ফের পৃথিবীতে অবতরণ, এই মিশনটা সম্পূর্ণ হতে মোট সময় লেগেছিল আট দিন তিন ঘণ্টা এবং ১৮ মিনিট।
তবে এই অভিযান বিতর্কমুক্ত থাকেনি। অনেক মহল থেকে এই অভিযান ও চাঁদে পা রাখার বিষয়টাতে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। তবে ওই চন্দ্রাভিযান নিয়ে যত বিতর্কই থাকুক না কেন পরবর্তী সময়ে সেটা আর ধোপে টেকেনি।
চাঁদে অভিযানের চেষ্টা এখনো থেমে নেই। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসেই চিনের একটি মহাকাশযান চাঁদ ঘুরে এসেছে। চন্দ্রপৃষ্ঠের সবচেয়ে দুরূহ স্থানে মহাকাশযানটি অবতরণ করেছে বলেও দাবি করেছে চিন। চিনের জাতীয় মহাকাশ প্রশাসন (সিএনএসএ) ঘোষণা করে, পৃথিবী থেকে চাঁদের যে পাশটি দেখা যায় না, সে পাশেই তাঁদের পাঠানো মহাকাশযান চ্যাং ই-৪ অবতরণ করেছে। মহাকাশে আধিপত্য বিস্তারে উঠেপড়ে লেগেছে পরাশক্তিগুলো। চন্দ্রাভিযানের চেষ্টায় আছে ভারত। ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই চাঁদের উদ্দেশে উড়াল দেয়ার চেষ্টা করে ভারতের চন্দ্রযান-২। ত্রুটির কারণে ওই সময় উড্ডয়ন স্থগিত রাখতে হয়। পরবর্তীতে সফল উড্য়নের পরেও ভারতের চন্দ্রযান চাঁদের মাটিতে ল্যান্ডিঙের সময় ভেঙ্গে পড়ে।
‘একজন মানুষের জন্য একটি ছোটো পদক্ষেপ, কিন্তু মানবতার জন্য এক বিশাল অগ্রযাত্রা।’ চাঁদে অবতরণের পর এই বিখ্যাত উক্তির মাধ্যমে নিল আর্মস্ট্রং বোঝাতে চেয়েছিলেন, ৫২ বছর আগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কী অসামান্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছিল। সফল চন্দ্রাভিযানের ওই ঘটনা তখন থেকে বিশ্বের প্রতিদিনের জীবনকেও প্রভাবিত করছে।
অ্যাপোলো কর্মসূচিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছিল। কিন্তু সেই অর্থ কোনোভাবেই অপচয় হয়নি। কারণ মানুষের জীবনে বিজ্ঞানের পথে নবযাত্রার শুরুটা এসেছিল ওই দিনটি থেকে।