মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
গুরুদাসপুর প্রতিনিধি
চলনবিল জাদুঘরের দৈন্যদশা কাটছে না। অযতœ অবহেলায় শ্রী হীন হয়ে পড়েছে দুূর্লভ প্রতœ সম্পদগুলো। বছর খানেক আগে বেশকিছু মূল্যবান সম্পদ রাসায়নিক পরিচর্যার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পর জাদুঘরটি সাইনবোর্ড সর্বস্ব হয়ে পড়েছে। একারনে দর্শনার্থী টানতে পারছেনা প্রতিষ্ঠানটি।
খোঁজনিয়ে জানা গেছে, চলনবিল জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৭৮ সালে। ‘চলনবিলের ইতিকথা’ বইয়ের লেখক অধ্যাপক এমএ হামিদ ব্যক্তি উদ্যোগে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর ইউনিয়ন সদরে জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। উদ্যোক্তার জন্ম একই গ্রামে।
উপ-মহাদেশের অনেক দূর্লভ নিদর্শন সংরক্ষিত রয়েছে এ জাদুঘরে। তাছাড়া চলনবিল অঞ্চলের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষন করার পাশাপাশি চলনবিল অঞ্চলের মানুষ ও তাদের ইতিহাস কৃষ্টিকালচারকে সমৃদ্ধ করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। এজন্য তিনি একটি ভবনসহ আটশতক জায়গা জাদুঘরের নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছিলেন। ২০০১ সালে জাদুঘরটি প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের অধীনে চলে যায়।
স্থানীয়রা জানান, জাদুঘরটি প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের অধীনে চলে যাওয়ার পর অযতœ আর অবহেলার ছাপ পড়তে থাকে। সংরক্ষিত মূল্যবান সম্পদগুলো সংরক্ষণে আধুনিক সুবিধা সংবলিত আলমারী (সেল্ফ) নির্মাণ করা হয়নি। যত্রতত্র ফেলে রাখায় ধুলাবালিতে তা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
তাছাড়া প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করা হয়নি জাদুঘরটিতে। মূল ভবনটি পুরোনো হওয়ায় আদ্রতাজণিত সমস্যায় স্যাতঁস্যাঁতে থাকে। যার প্রভাব পড়ছে জাদুঘরে রক্ষিত মুল্যবান সম্পদের ওপর। কালেভদ্রে জাদুঘরটি খোলা হলেও দর্শনার্থীরা মুগ্ধ হতে পারে না।
বছরখানেক আগে বেশ কিছু মূল্যবান প্রতœসম্পদ রাসায়নিক পরিচর্যার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পর সেগুলো ফিরিয়ে আনা হয় নি এখনো। একারনে সাইনবোর্ড সর্বস্ব হয়ে পড়েছে জাদুঘরটি। সেই সাথে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে দর্শনার্থীরা।
খোঁজনিয়ে দেখা গেছে, জরাজীর্ণ ভবনটি বাইরের অংশে ঝকঝকে রঙ করা হয়েছে। তবে ভেতরে দুইটি কক্ষে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে রাখা হয়েছে দূর্লভ প্রাচীন নিদর্শনাবলী। অগোছালো উম্মুক্তভাবে রাখার কারনে মূল্যবান প্রতœতাত্তিক সম্পদগুলোতে ধুলার আস্তরণ পড়েছে, এতে শ্রী হীন হয়ে পড়েছে দুলর্ভ সংগ্রহশালাটি। নেই চাহিদামত আসবাসপত্র। আকতার হোসেন নামে একজন কর্মচারি জাদুঘরটি সাধ্যমত দেখভাল করেন। প্রতœতত্ত্ব বিভাগের বগুড়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা গত রোববার মুঠোফোনে বলেন, জাদুঘরটি আধুনিকরণের জন্য সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় নতুন ভবনের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। বাড়ানো হবে লোকবল। সেখানে জাদুঘরটির উদ্যোক্তা এমএ হামিদকে স্মরণীয় রাখতে তার ছবিসহ পৃথক একটি গ্যালারি থাকবে। আর তখনই ফিরিয়ে আনা হবে রাসায়নিক পরিচর্যার জন্য নিয়ে যাওয়া সকল সম্পদ।
যা রয়েছে চলনবিল জাদুঘরে : জাদুঘরে প্রবেশ পথেই রয়েছে চলনবিলের কৃতি সন্তান প্রখ্যাত ঐতিহাসিক স্যার যদুনাথ সরকারের পোড়া মাটির আশ্চর্র্য মূর্তি। এছাড়া সংগৃহিত রয়েছে, দুর্লভ নিদর্শনের মধ্যে তুলট কাগজ, গাছের ছালে লেখা প্রাচীন-মধ্যযুগের পুঁথির পান্ডুলিপি, বিভিন্ন সময়ের স্বর্র্ণ, রৌপ্য মুদ্রা। আছে তা¤্র ও ধাতব মূদ্রা, সুলতান নাসির উদ্দিনের নিজ হাতে লেখা পবিত্র কুরআন শরীফ, বিভিন্ন ধরনের প্রস্থর, পোড়া মাটির ভাস্কর্য মূর্তি, রাজা, সম্রাট, সুলতান-নবাবদের ব্যবহৃত তরোবারিসহ যুদ্ধাস্ত্র, রানী ভবানীর স্মৃতি চিহ্ন, মনসা মঙ্গলের বেদি-ঘট, বগুড়ার কবি মরহুম রুস্তম আলী কর্নপূরীর দলিল-দস্তাবেজ ও উপ-মহাদেশের বিভিন্ন প্রান্তর হতে সংগৃহিত ঐতিহাসিক নিদর্শন।
খুবজীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মনিরুল ইসলাম ও স্থানীয় মেধাবিকাশ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সহকারি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা জানান, জাদুঘরে যাওয়ার জন্য সারাদেশের সাথে আধুনিক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। জাদুঘরটি আধুনিকভাবে যাত্রা শুরু করলে দর্শনার্থী বাড়বে।