বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮ ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:
শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন, শাট ডাউন ও দেশজুড়ে সংঘাতের কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা।
দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে আম পাঠাতে না পারায় চাষীদের উৎপাদিত আম পঁচে নষ্ট হয়েছে বাগানেই। কেউ কেউ আম পাড়লেও বিক্রি করতে হয়েছে কম দামে। সব মিলিয়ে আন্দোলন-সংঘাত ও কারফিউয়ের ১০ দিনে জেলার চাষী ও ব্যবসায়ীদের ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরেন্দ্র কৃষি উদ্দ্যোগ এর সিইও ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি এসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক মো. মুনজের আলম।
তিনি আরও জানান, আমের মধ্যম ও নাবী জাতের যখন ভরা মৌসুম, তখনই ছাত্র আন্দোলনের নামে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে সংঘাত। এতে জেলার বাইরে আম পাঠাতে পারেননি চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষী ও ব্যবসায়ীরা। আম পেকে নষ্ট হয়েছে বাগানে। ক্ষতি এড়াতে চাষীরা গাছ থেকে আম পাড়লেও স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে হয়েছে কম দামে। ফলে লোকসানের শিকার হয়েছেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা।
তিনি বলেন, জেলা থেকে প্রতিদিন ৩ শতাধিক ট্রাকে সাড়ে ৩ হাজার মেট্রিক টন আম যায় দেশের অভ্যন্তরীন বাজারে। এই আমের মূল্য গড়ে ২৫ কোটি টাকা। আন্দোলনের ১০ দিনে ২৫০ কোটি টাকার আম বেচা-কেনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কিছু আম পঁচে নষ্ট হওয়ায় এবং কম দামে বিক্রি করায় এই অঙ্ক গিয়ে দাঁড়ায় ১৫০ কোটি টাকার ঘরে। কাজেই ওই ১০ দিনে চাষী ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতি ১০০ কোটি টাকা।
রিজিওনাল হর্টিকালচার রিসার্চ স্টেশন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোখলেসুর রহমান বলেন, এবছর দেরিতে মুকুলায়ন এবং বিরূপ প্রাকৃতিক অবস্থার কারণে আমের উৎপাদন কম হয়েছে।
গত কয়েকদিনের আন্দোলন ও কারফিউ এর কারণে আম পরিবহনে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় চাষী ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মধ্যে পড়লেও এবার আমের দাম বেশি থাকায় ক্ষতি কিছুটা হ্রাস পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, এখনো গাছে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ আম রয়েছে। নাবি জাতের এই আমের মধ্যে রয়েছে ফজলি, আশ্বিনা, আম্রপালি, বারি-১১, কাটিমন, গৌড়মতি ইত্যাদি।
সূত্রমতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩৭হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে ৭৫ লাখ ৭৯ হাজার,৮২৫ টি আমগাছ রয়েছে এবং গতবছর জেলায় ৪ লাখ ৪৩হাজার ৬২৫ মেট্রিকটন আম উৎপাদন হয়েছিল।
এদিকে আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে এখন আমের ভরা মৌসুম, বাজারে ফজলি আম্বিনা, বারি ফোর সহ নানা জাতের আম। এবার শুরু থেকেই প্রকৃতির বৈরিতায় আমের ফলন অনেকটায় কম এ জেলায়। তবে বাজারে মৌসুমের শুরু থেকেই আমের বাড়তি দাম থাকায়, আম বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা ফলন কম হওয়ায় কষ্ট অনেকটায় কাটিয়ে উঠেছিলেন।
তবে কোটা আন্দোলকে ঘিরে সহিংসতা ও পরবর্তী সময়ে কারফিউ এর কারনে, গেল সপ্তাহে দেশের ব্যবসায়ীদের মাঝে দেখা দিয়েছিলো চিন্তার ভাজ। কিছুটা কমে গিয়েছিলো আমের দাম, অন্যদিকে ব্যাংক বন্ধ থাকায় লেনদেনে সমস্যায় পড়তে হয়েছিলো তাদের। কারফিউ শিথিল হওয়ায় আবারো পূর্বের অবস্থায় ফিরেছে আমের কেনাবেচা। সেই সঙ্গে বেড়েছে আমের দামও।
দেশের বৃহৎতম আমের বাজার কানসাটে গত দুদিন থেকে আবারো জমে উঠেছে কেনাবেচা। ঢাকা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যবসায়ীরা আম কিনে পাঠাচ্ছেন। এতে বাড়তির দিকে আমের দাম। বৃহস্পতিবার কানসাট আম বাজার ঘুরে দেখা যায়, পুরো বাজার ভরে আছে আম আর আমে। বাজার ছাপিয়ে আমের ভ্যানের সারি গিয়ে পৌচ্ছেছে মূল সড়কে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে। আমের ট্রাক আর আমের ভ্যানের এ যাওয়া আসায় সড়ক জুড়ে প্রায় সময়ই লেগে থাকছে দীর্ঘ যানযন।
আমের দাম নিয়ে খুশি আম ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, গত কয়েকদিন কারফিউ এর কারনে কিছুটা দাম কমে গিয়েছিলো, আবারও আমের দাম বাড়তির দিকে। ফজলি আম বিক্রি হচ্ছে তিন ৩৮০০ থেকে ৪০০০ টাকা, আশি^না ১৮০০-২০০০ টাকা, আমরুপালী ৪০০০- ৪৫০০ টাকা, বারি-৪ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০০- ৩৮০০ টাকা দরে। এ দাম পেয়ে নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানান ব্যবসায়ীরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে প্রতিদিন আম কেন্দ্রীক বাণিজ্য হয় প্রায় ২৫-৩০ কোটি টাকার, দেশের বিভিন্ন স্থানে আম পাঠানোর জন্য গড়ে উঠছে ছোট বড় প্রায় ৫ শতাধিক আমের আড়ৎ। আর এ সব আড়ৎসহ আম প্যাকেজিংসহ আম কেন্দ্রিক কাজে সৃষ্টি হয়েছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান। আম বাজার জমে উঠায় আবারো ব্যাস্ততা বেড়েছে আম শ্রমিকদের।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কারফিউ শিথিলের সময়সীমা সকাল ৬ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত করায় যানচলাচলসহ জনবীবন অনেকটায় স্বাভাবিক।