চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:
ভারতের ফারক্কা বাঁধের মাধ্যমে একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মা নদীসহ আরও তিনটি নদী পানি শুন্য। এমতাবস্থায় সহজেই পদ্মা পাড়ের মানুষ পাঁয়ে হেটে নদী পার হয়। দেখে মনে হয় এক হাঁটু জল।
জানা যায় বিপুল জলরাশির খর-স্রোতা পদ্মার চিরচেনা রূপ আর নেয়। নদীর বুকে এখন ধু-ধুূ বালুচর। যত দূর চোখ যায় শুধু বালি আর বালি। উত্তরাঞ্চলের লাইফ-লাইন পদ্মা নদীতে কোথাও হাঁটু পানি আবারও কোথাও একটু পানির বিস্তৃতি দৃশ্যমান। উৎস্য ও উজান হতে পদ্মায় পর্যাপ্ত পানি না আসায় নদী ক্রমশ বালির নীচে চাপা পড়ছে। চারদিক হতে ধেয়ে আসছে মরুময়তা। পদ্মায় পানি সঙ্কটের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আরও ৩ নদীর অস্তিত্ব এখন প্রায় বিলীন। স্থানীয়রা বলছেন, নদী অববাহিকার লাখো মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে পদ্মায় স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনার অন্য কোন বিকল্প নেই।
দেখা যায়, বর্ষা মৌসুমে মাস তিনেকের জন্য পানি থাকলেও বছরের ৯ মাসজুড়েই তলানিতে থাকছে পদ্মা নদীর পানি। এ নদীতে ঘোলা-পানি আর স্বচ্ছ পানির মায়াবি দৃশ্য আর নেয়। স্রোতহীন বয়ে যাচ্ছে এক সময়ের প্রমত্ত পদ্মা। নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে বালুচরের সৃষ্টি হয়েছে। পানিশূণ্য পদ্মায় আটকে যাচ্ছে পাথরবাহী জাহাজ। মাঝ নদীতে গোসল করছে শিশুরা। পদ্মা মরে যাবার সাথে সাথে মহানন্দার অস্তিত্ব প্রায় বিলীন। আর পাগলা নদীর আগের পাগলামীও নেই। পূর্ণভবা নদীরও একই চিত্র। এসব নদীতে বর্ষার সময় কিছু পানি থাকলেও সারা বছর থাকে শুকনো। নৌকা নয় চলে চাষাবাদ। ফারাক্কা বাঁধ দেবার ফলে উত্তরাঞ্চলের নদ-নদী এখন অস্তিত্ব হারানোর পথে।
এবারো পদ্মায় মাস তিনেকের জন্য যৌবন এসেছিল। কিন্তু ফাল্গুন মাসেই নদীর পানি তলানিতে নেমে গেছে। চলছে খরা মৌসুমের চৈত্র-বৈশাখ। তখন ‘কি মরণ দশা হবে’ তা নিয়ে দুশ্চিন্তার ভাঁজ নদী তীরবর্তী মানুষের কপালে। বিরূপ প্রভাব পড়েছে প্রকৃতিতেও। হারিয়ে গেছে অর্ধশত দেশি প্রজাতির মাছ। নৌ যোগাযোগ আর নেই। নদীর বুকে আবাদ হয় ধানসহ বিভিন্ন ফসলের।
এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী মহানন্দা নদী নাব্যতা হারিয়ে মরা খালে পরিণত হওয়ার পথে। বালু ও পলি জমে ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর তলদেশ। কমে যাচ্ছে পানির প্রবাহ। নদীর বুকে জেগে উঠছে চর। স্থানীয় কৃষকরা সেই চরেই ফলাচ্ছেন ফসল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পলি জমে ভরাট হওয়ার কারণে এ মহানন্দা নদীর অস্তিত্বই এখন বিলীন হওয়ার পথে। ভরাট হয়ে যাওয়া নদীর তলদেশে এখন বোরো ধান, গম, ভুট্টাসহ নানা ধরনের ফসলের চাষ করেন কৃষকরা। নদীর বুকে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন নদী তীরবর্তী মানুষ।
স্থানীয়রা জানায়, এক সময় এ নদীতে পর্যাপ্ত পানি প্রবাহ ছিলো। তা দিয়ে চাষ করার পাশাপাশি নিত্য-প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা হতও। নদী তলদেশে পলি জমে বিস্তৃীর্ণ এলাকাজুড়ে জেগে উঠেছে বিশাল চর। মহানন্দা নদী বাংলাদেশ ভারতের ১টি আন্তঃসীমানা নদী। ভারতের দার্জিলিং, কিশানগঞ্জ, কাটিহার, মালদহ অতিক্রম করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ দিয়ে বালাদেশে প্রবেশ করে। এ নদী একসময় ছিল প্রবল খরস্রোতা ছিলো এবং নদী পাড়ের মানুষের কাছে ছিলো মূর্তিমান আতঙ্ক। কিন্তু বর্তমানে এ নদী নাব্যতা হারিয়ে ফেলে বর্ষাকালে এর ভয়াল রূপ আর চোখে পড়েনা। মহানন্দা নদীর ঢেউ এখন শুধুই স্মৃতি।
স্থানীয় এক কৃষক কামরুল ইসলাম জানান, আমাদের জমি মহানন্দা নদী ভাঙনে তলিয়ে যায়। ১৯৭২ সালের জরিপে খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত হয়। পরে আর সংশোধন করা সম্ভব হয়নি। নদীতে চর পড়ায় আমরা পৈতৃক সম্পত্তি ফিরে পেয়ে চাষ করে ভালো আছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) চাংপাইনবাবগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, উৎস থেকে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক না থাকায় নদীর গতিপথ বদলে গেছে। দীর্ঘদিন ড্রেজিং না হওয়ায় বর্ষ মৌসুমে দুই কুল উপচে পড়ে, আবার শুষ্ক মৌসুমে এসব নদীতে পানি থাকেনা। প্রতিবছরই নদী ভাঙনের কবলে পড়ে। পদ্মা নদী তীর রক্ষায় ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান। মহানন্দায় পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে রাবারড্যাম নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৯০% কাজ শেষ হয়েছে।