শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৪ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন কার্যত ‘অনুপস্থিত’ থাকা জামায়াতে ইসলামী আবার নতুন করে আলোচনায় এসেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, এর আগের উপজেলা ও পৌর নির্বাচনে অংশ নেইনি দলটি। তবে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে দলটির নেতারা।
জামায়াতের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে চলছে নানামুখি আলোচনা। দলটির নেতারা বলছেন- নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত নেই। তবে কেউ চাইলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। জামায়াত নেতাদের ভাষ্য, উপজেলা নির্বাচনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কমিটির অবস্থান হলো- দলের স্থানীয় নেতা ও প্রার্থীর ব্যক্তিগত সামর্থ্যে ভোটে অংশ নিতে পারবেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন দলটির নেতারা। পাঁচটি উপজেলায় এরই মধ্যে জামায়াতের নেতারা প্রচারণাও শুরু করেছেন। প্রথম ধাপে ৮ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩টি উপজেলায় ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। এই উপজেলাগুলো হচ্ছে- নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট। দলটির নেতারা বলছেন, এবারের নির্বাচন নির্দলীয় হবে এমটাই শোনা যাচ্ছে। এ জন্যই ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কেউ কেউ। প্রার্থী হতে এলাকাবাসীর অনুরোধ রয়েছে বলে জানান জামায়াত নেতারা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে জামায়াত অংশগ্রহণ করলে দল শক্তিশালী অবস্থানে যাবে ও নেতাকর্মীরা চাঙ্গা থাকবে। বারবার নির্বাচন বিমুখ হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে ও সংগঠন অনেকাংশেই দুর্বল অবস্থানে। এ হতাশা কাটার উদ্দেশ্যে অনেকের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে জামাতের অংশগ্রহণ।
জানা গেছে, চাঁপাইনবাগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর শক্তিশালী ভোটব্যাংক রয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও আওয়ামী লীগ-বিএনপির প্রার্থীদের হারিয়ে উপজেলা ও পৌর নির্বাচনে জয়লাভের বহু রেকর্ড রয়েছে জামায়াত নেতাদের। ২০১৪ সালেও উপজেলা নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থেকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন মো. মোখলেসুর রহমান, শিবগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ড. মো. কেরামত আলী। দীর্ঘদিন চাঁপাইনবাগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর।
নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. মোখলেশুর রহমান বলেন, দলের নেতাকর্মীরা চাইছেন চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হই। আমিও তাদের মৌন সমর্থন দিয়েছি। আমি এই উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলাম। সংগত কারণে আমার সাধারণ জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। সাধারণ ভোটাররাও চাইছেন আমি প্রার্থী হই। জনপ্রত্যাশা পূরণের জন্যই প্রার্থী হওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত আছে।
মোখলেশুর রহমানের দাবি-সাংগঠনিক দক্ষতা ও জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে জয়ী হতে তাকে তেমন বেগ পেতে হবে না। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনকে নিজেদের সংগঠন গোছানো এবং জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের সুযোগ হিসেবে দেখছেন তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো. আবু বকর বলেন, জামায়াত দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে না। স্থানীয়ভাবে আলোচনা করে কেউ প্রার্থী হলে সে বিষয়ে দলের কোনো বক্তব্য নেই। প্রার্থীকে স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচন করতে হবে। সে লক্ষ্যে সংগঠনের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জেলার ৫ উপজেলায় জামায়াতের প্রার্থী যারা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. মোখলেশুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবুল হাসান। শিবগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী অধ্যাপক মো. আব্দুল মান্নান, ভাইস চেয়ারম্যান মুহম্মদ বাবুল ইসলাম। নাচোল উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হচ্ছেন জামায়াত নেতা অ্যাডভোকেট মো. সিরাজুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রভাষক মো. ইয়াকুব আলী। গোমস্তাপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী মাওলানা মুহা. শাহ আলম, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মু. খাইরুল ইসলাম। ভোলাহাট উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. লোকমান আলী ডাক্তার, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. শামশুজ্জামান আলকেশ।