বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহারাজপুরে আবদুল আজিজ ওয়াক্ফ এস্টেট দুই মোতোওয়াল্লির দ্বন্দ্বে উতপ্ত হয়ে উঠেছে চৌধুরীপাড়া। সাবেক মোতোওয়াল্লি সেকান্দার রহমান চৌধুরী ওরফে জুবিন চৌধুরী এবং বর্তমান মোতোওয়াল্লি গোলাম ফারুক রুমির ভোগ-দখল নিয়ে স্থানীয়রা দুপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। যেকোন মুহূর্তে বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০ দিকে জুবিন চৌধুরীর সমর্থক এবং গোলাম ফারুক রুমির সমর্থকরা চৌধুরী বাড়ির সামনে মহারাজপুরের শিশা বাগানে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এসময় দুপক্ষের মধ্যে বাগবিত-ার এক পর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়দের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯২৫ সালে মরহুম আবদুল আজিজ চৌধুরী ৪৬৩ দশমিক ৬২ একের সম্পত্তি লিল্লাহে ওয়াকফ করেন। তবে বর্তমানে প্রায় ৬ শত বিঘা জমি রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ধানি জমি, পুকুর, খাড়ি, বসতবাড়ি, আমবাগান ও মেহগনি গাছ। ওয়াকফ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ক্রমানুসারে মোতাওয়াল্লি নিযুক্ত হচ্ছিল। সর্বশেষ ২০১৫ সালে এ ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লি নিযুক্ত হন গোলাম ফারুক। এরপর থেকেই ওয়াকফ এস্টেট নিয়ে শুরু হয় অস্থিরতা।
বর্তমান মোতাওয়াল্লি গোলাম ফারুক রুমি বলেন, ওয়াকফ প্রশাসক বিস্তারিত সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে সেকান্দার রহমান ওরফে জুবিন চৌধুরীকে অপসারণ করে আমাকে নিয়োগ দেয়া হয়। আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে রিট করলে আপিল বিভাগ আমার পক্ষে রায় দেন। এরপর সেকান্দার রহমান পুনরায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জজ আদালতে ০৬/১৯নং মিস আপিল করলে শুনানি শেষে আমার পক্ষে রায় হয়। রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে ৩৭৬০/২৩নং সিভিল রিভিশন করলে তা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। আদালতের বারবার হেরে তিনি এখন অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন।
সাবেক মোতোওয়াল্লি সেকান্দার রহমান চৌধুরী ওরফে জুবিন চৌধুরী বলেন, গোলাম ফারুক অবৈধভাবে দখলে নেয় আবদুল আজিজ ওয়াক্ফ এস্টেট। এরপর থেকে এস্টেটের নিয়ম অমান্য করে গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে সম্পদ লুণ্ঠন করছেন। লাখ লাখ টাকার গাছপালা চোখের সামনে কেটে বিনিষ্ট করছেন। ইতোমধ্যে মুকুলিত আমগাছ, মেহগনিসহ শিশুগাছ কেটে ফেলেছেন। এ নিয়ে ক্ষোভের স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সুষ্টি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি এস্টেটের ভেতরের প্রায় ১৩টি আম গাছ, ১১টি মেহগনি ও ৮টি শিশু গাছ কেটে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। গাছগুলোর বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫ লাখ টাকা। গাছগুলো মরে যাচ্ছে এমন অজুহাতে কাটা হচ্ছে।
অবৈধভাবে ওয়াকফ এস্টেট দখলে রেখে গত ১০ বছরে বিপুল গাছপালা বিক্রি করেছেন মোতাওয়াল্লী গোলাম ফারুক। তিনি পুরোপুরি বিধি উপেক্ষা করে মোতাওয়াল্লী নিযুক্ত হন। সরকারি চাকরিজীবী হয়েও ওয়াকফ এস্টেস্টের সম্পতির ওপর রক্ষিত মূল্যবান গাছপালা কেটে বিক্রি করে তছরূপ করে চলেছেন।
অন্যদিকে, বর্তমান মোতোওয়াল্লি গোলাম ফারুক রুমি বলেন, আমি স্বেচ্ছায় কোন গাছ কাটিনি। পুরাতন এই বাগানে ৭ বছরে ৪-৫টি গাছ মারা গেছে। সেগুলো অপসারণ করা হয়েছে। তবে ফাঁকা জায়গায় নতুন করে গাছ রোপণ করা হয়েছে। ওয়াকফ এস্টেটের দোতালা বাড়ির দরজা-জানালা তৈরির জন্য ২-৩টি মেহগনির গাছ কাটা হয়েছে। শুধুমাত্র আমাকে হয়রানি করার জন্য নানাধরনের ছলচাতুরি করা হচ্ছে।
তিরি আরও বলেন, সেকান্দার রহমান চৌধুরী ওরফে জুবিন চৌধুরীর বয়স মাত্র ১ বছর হওয়ায় তার মা পারভীন চৌধুরীকে অভিভাবক নিযুক্ত করে মোতোওয়াল্লির দায়িত্ব দেন। কিন্তু বিধানমতে নাবালক এবং কোন নারী মোতোওয়াল্লী নিযুক্ত হতে পারবে না। দীর্ঘ ৪৬ বছর ধরে তিনি সেই দায়িত্বে থাকলেও ওয়ারিশদের কোন টাকা পরিশোধ করেনি। এরপর প্রায় ২ কোটি টাকায় একটি আমবাগান গোরস্থান কমিটির কাছে বিক্রি করে। এছাড়া বারঘরিয়া বিলের ১৮ বিঘা জমি প্রায় ২৫ লাখ টাকায় জালাল উদ্দিনের কাছে বিক্রি করে।
বর্তমান মোতোওয়াল্লির ছোট ভাই সুবিধাভোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক জামী বলেন, ওয়াকফ এস্টেটের নিয়ম অনুসারে আমার ভাই মোতাওয়াল্লী নিয়োগ হওয়ার পরে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে আব্দুল আজিজ চৌধুরীর নামে মিলাদ-মাহফিলসহ সকল সুবিধাভোগীকে রশিদের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। সকল আয়-ব্যয়ের রির্টান দাখিল করা হয়। এছাড়া আগের মোতাওয়াল্লী সেকান্দার রহমান চৌধুরী ১৭ লাখ টাকা সরকারি অংশের বকেয়া ছিল। সেই বকেয়ার ১০ লাখ টাকা আমারা পরিশোধ করে করেছি।