মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ অফিস
চাঁপাই সদন উপজেলায় চর বাগডঙ্গা এলাকার নদী ভাঙনের দৃশ্য-সোনার দেশ
ভারত ফারাক্কা বাঁধের গেট খুলে দেয়ায় উজান থেকে ধেয়ে আসা ঢলের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পদ্মা নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে এসব এলাকার শতাধিক ঘরবাড়ি, আমবাগান, আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে ভিটেমাটি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন এসব এলাকার অনেক মানুষ। হুমকির মধ্যে রয়েছে সরকারি-বেসরকারি অনেক স্থাপনা। ফলে নদী তীরবর্তী এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপক ভাঙন আতঙ্ক। অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ফারাক্কা বাঁধের কিছু গেট খুলে দেয়ার পর থেকেই পদ্মা নদীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ পয়েন্টে গত ১৫ দিন ধরে বাড়ছে পানি। আর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের গোয়ালডুবি থেকে ভারতীয় সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলছে পদ্মার তীব্র ভাঙন। ভাঙনে রোডপাড়া গ্রামটি এখন পদ্মা গর্ভে। বিপুল পরিমাণ আম বাগান ও ফসলি জমি ইতোমধ্যে পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। পদ্মার ভাঙন রোধে এই এলাকায় দুই বছর আগে নির্মিত নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের শেষ অংশেও ভাঙন দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, গত দুই সপ্তা থেকে পদ্মায় পানি বাড়ছে। পানি বাড়ার সঙ্গে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। তবে গত এক সপ্তা থেকে ভঙনের তীব্রতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন, গোয়ালডুবি, বিশ^াসপাড়া, ফাটাপাড়া, মালবাগডাঙ্গা, ক্যাড়াপাড়া এলাকায় বর্তমানে ভাঙন চলছে। রোডপাড়া গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবার ভাঙনের কারণে ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। গত সাত দিনে ওই এলাকাটি পদ্মা গর্ভে চলে গেছে বলে জানান তিনি। তিনি আরো জানান, বর্তমানে স্থানীয় ইউপি কার্যালয় ভবন, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চবিদ্যালয়, দুইটি মাদরাসা, মসজিদ, ঈদগাহ ও চরবাগডাঙ্গা বাজার হুমকির মধ্যে রয়েছে।
চরবাগডাঙ্গা গ্রামের আমিনুল ইসলাম জানান, তিনি নদী ভাঙনের কারণে দুই বছর আগে তার বাড়ি সরিয়ে আনেন চর বাগডঙ্গায়। কিন্তু নদী ভাঙতে ভাঙতে আবার তার বাড়ির কাছে হাজির। পরিবার নিয়ে এখন কোথায় যাবেন তা তিনি বুঝতে পারছেন না। অন্যদিকে শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নেও চলছে পদ্মার ভাঙন।
ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান জানান, হলদাপাড়া, জামাইপাড়া, লক্ষ্মীপুর চর এলাকায় পদ্মার ভাঙন চলছে। এখন পর্যন্ত এসব এলাকা থেকে অর্ধশতাধিক বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ শহিদুল আলম জানান, আকস্মিকভাবে উজান থেকে পানি ধেয়ে আসায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। চরবাগডাঙ্গা এলাকায় পদ্মার ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার সুযোগ নেই। তবে এই এলাকার ভাঙন প্রতিরোধের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করা হবে।