বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি :
চাঁপাইনবাবগঞ্জে আগাম জাতের শীতকালীন পেঁয়াজ চাষ করে সফল হচ্ছেন কৃষকরা। এ বছর জেলায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন জাতের পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ না আসলে এবং ন্যায্য দাম পেলে তারা ভালো লাভবান হবেন। কৃষি বিভাগও বলছে, আগাম জাতের পেঁয়াজ বাজারে আসলে পেঁয়াজের দাম সাশ্রয় হবে।
সীমান্তবর্তী এ জেলায় গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর কৃষকরা মাঠে মাঠে শীতকালীন (কোন্দ) আগাম জাতের পেঁয়াজ লাগিয়েছেন। অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে এ জাতের পেঁয়াজ রোপণ করা হয় এবং ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করে।
জানা গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আগাম জাতের শীতকালীন কোন্দ ও ছাচি পেঁয়াজ চাষ করে সফল এ জেলার কৃষকেরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ চলতি বছর ৩ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন কোন্দ ও ছাচি জাতের পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে।
কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ না আসা ও নায্য দাম পেলে ভাল লাভের আশা তাদের। এ জাতের পেঁয়াজ চাষ করে কৃষকরা লাভবান। আর কৃষি বিভাগ বলছেন, আগাম জাতের পেঁয়াজ বাজারে আসলে পেঁয়াজের দাম সাশ্রয় হবে। এ ব্যাপারে কৃষকদের বিভিন্নভাবে সার্বিক সহযোগিতা করে আসছেন কৃষি বিভাগ।
মাঠ জুড়ে শীতকালীন কোন্দ জাতের পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে। এ যেন সবুজের সমারোহ। গত বছর ভাল দাম পাওয়ায় এ বছর মাঠ কে মাঠ শীতকালীন কোন্দ ও ছাচি আগাম জাতের পেঁয়াজ লাগিয়েছেন কৃষকরা। অক্টোবর মাসের ১ম সপ্তাহের দিকে এ জাতের পেঁয়াজ রোপন করেন ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে এ পেঁয়াজ বাজার উঠতে শুরু করবে।
কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, আগাম জাতের পেঁয়াজের বীজ লাগানো আছে। চলতি ডিসেম্বরে শেষে জমি থেকে পেঁয়াজ উঠানো হবে। আমার মতো অনেক কৃষকই প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম পেতে পারে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার পর্যন্ত।
তবে সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা পেঁয়াজের দাম পেলেও আমরা যারা পেঁয়াজ চাষ করছি তাও লাভ থাকবে। আমাদের এ মাঠে শুধুই পেঁয়াজ চাষবাদ হয়ে থাকে। এখন সবাই কৃষক পেঁয়াজের পেছনে সময় ব্যয় করছে ভালো ফলনের আশায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষক আবুল কাসেম বলেন, আমি ৬ বিঘা আগাম জাতের পেঁয়াজ লাগিয়েছি। প্রতি বিঘা পেঁয়াজ ১ লাখ ২০ হাজার খরচ হলেও প্রতি বিঘা জমিতে ৯০ থেকে ১০০ মণ পেঁয়াজ পাওয়া যায়। খরচ বাদে বিঘা প্রতি দিয়ে ৮০-৯০ হাজার টাকা লাভ হবে। এ বছর আমার সবগুলো জমিতে আগাম জাতের পেঁয়াজ খুব ভালো হয়েছে।
কৃষক সেতাউর রহমান জানান, তারা লাভের আশায় লাগালেও তেমন একটা লাভ করতে পারেন না। কারণ হিসাবে তিনি উল্লেখ করেন পেঁয়াজ বাজারে আসার সময় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। এতে করে দেশি পেঁয়াজের দাম কমে যায়। তাদের দাবি আগাম জাতের পেঁয়াজ উঠানোর সময় যাতে কোন ধরনের ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি করা না হয়।
ফলে তারা লোকসানের মধ্যে পড়ে। এ জাতের পেঁয়াজ চাষ করে কৃষকরা যাতে কোন রকম লোকসানে না পড়ে সেদিকে নজর রাখার পাশাপাশি নায্য দাম নির্ধারণ করে দিবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সদর উপজেলার কৃষক জহুরুল ইসলাম জানান, এ বছর আমার সব জমিতেই আগাম জাতের পেঁয়াজ খুব ভালো হয়েছে। কোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা না হলে বেশ ভালো লাভ হবে।
কৃষক মজিবুর রহমান জানান, জমিতে আগাম জাতের পেঁয়াজের বীজ লাগানো আছে। ডিসেম্বরে জমি থেকে পেঁয়াজ উঠানো হবে। আমরা অনেক কৃষকই প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা পেতে পারি। তবে সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা পেলে আমরা লাভবান থাকব। আমাদের মাঠে শুধুই পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে।
কৃষক মতিউর রহমান বলেন, লাভের আশায় পেঁয়াজ লাগালেও মাঝে মাঝে লাভ করতে পারি না। কারণ, যখন পেঁয়াজ উঠানোর সময় আসে তখন হঠাৎ করেই ভারত থেকে পেঁয়াজ আসতে শুরু করে এবং সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম কমে যায়। তাই আমরা চাই যে, আগাম জাতের পেঁয়াজ উঠানোর সময় যেন ভারতীয় পেঁয়াজ না আসে।
কৃষক হাসিব হোসেন জানান, শীতকালীন কোন্দ জাতের পেঁয়াজে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক স্প্রে ও নিড়ানির কাজ করা হচ্ছে, যাতে কোন ধরনের পোকামাকড় না লাগতে পারে। স্প্রে ও কীটনাশকের দাম এ বছর একটু বেশি। তাছাড়া গত বছরের তুলনায় এবছর দ্বিগুণ দামে পেঁয়াজের বীজ ক্রয় করা হয়েছে। আমরা কৃষি বিভাগের কাছে আগাম জাতের পেঁয়াজের বীজ চাই।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার জানান, আগাম জাতের শীতকালীন কন্দ ও ছাচি জাতের পেঁয়াজ বাজারে আসলে পেঁয়াজের দাম কম হবে। জেলায় চলতি বছরে শীতকালীন আগাম জাতের কোন্দ ও ছাচি পেঁয়াজ চাষাবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে।#