মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৯ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও গোমস্তাপুর প্রতিনিধি:চাঁপাইনবাবগঞ্জে গোমস্তাপুরে উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের রোকনপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে গরু আনতে গিয়ে ‘নিখোঁজ’ রয়েছেন সাইফুল ইসলাম নামে এক বাংলাদেশি যুবক। ভারতের অভ্যন্তরে বিএসএফের গুলিতে নিহত হওয়ায় আশঙ্কা পরিবার ও স্থানীয়রা করলেও বিজিবি পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি। সাইফুল ইসলাম উপজেলার রাধারনগর ইউনিয়নের রোকনপুর ঠাকুরপুকুর গ্রামের সামাদ আলী ওরফে হাসান গোয়ালার ছেলে।
অন্যদিকে গরু আনতে যাওয়া রাজু আহমেদ নামে আরেক যুবক রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। বিএসএফের ছোড়া গুলিতে আহত হন বলে জানান ওই যুবক।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার রাতে চার-পাঁচজনের একটি দল রোকনপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে গরু আনতে যায়। এ সময় সীমান্তের আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ২১৯-এর কাছে ভারতের অভ্যন্তরে বিএসএফের ১৫৯ ইটাভাটা ক্যাম্পের টহলরত সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালালে সাইফুল ঘটনাস্থলেই ‘নিহত’ হন। পরে বিএসএফ সাইফুলের মরদেহ ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে যায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে গোমস্তাপুরে উপজেলার রাধানগর ইউপি চেয়ারম্যান মতিউর রহমান ও সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, কয়েকজন গরু চোরাকারবারি গরু আনার জন্য গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার পর রোকনপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে যায়। এ সময় বিএসএফ সদস্যদের ছোড়া গুলিতে সাইফুল ইসলাম ‘নিহত’ হন। এ সময় রাজু হোসেন নামে ওই দলের আরও এক যুবক আহত হন। তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ১৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের রোকনপুর বিওপি কমান্ডার নায়েব সুবেদার আজাদ রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমরা শুনেছি। পরিবারের পক্ষ থেকেও আমাদের জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জে গোমস্তাপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চৌধুরী জুবায়ের আহমেদ বলেন, বিএসএফ এর গুলিতে একজন ‘নিহত’ ও একজন আহতের বিষয়ে শুনেছি। ঘটনা জানার পর আমাদের একটি টিম পাঠানো হয়েছিল। ঘটনাটি ভারতের অভ্যন্তরীণ। শুনেছি ‘মরদেহ’ বিএসএফ নিয়ে গেছে।
সাইফুল ইসলামের বড় ভাই রবিউল ইসলাম জানান, গত মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) এশার নামাজের পর সাইফুল ইসলামসহ কয়েকজন ভারতে গরু আনতে গিয়েছিলো। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ তারা পাচ্ছিলেন না। বুধবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে ফেসবুকে তার ভাই’র মরদেহের ছবি দেখার পর তারা নিশ্চিত হন যে তার ভাইয়ের মৃত্যু হয় বিএসএফের গুলিতেই।
রবিউল ইসলাম আরও জানান, সাইফুল কৃষি কাজ করত। তার দুই ছেলে মেয়ে। কিভাবে যে ভারতে গরু আনতে গেল কিছুই বুঝতে পারছি না। যেন লাশটা আনার ব্যবস্থা করে, এটায় বিজিবি আর সরকারের কাছে অনুরোধ।
এ বিষয়ে নওগাঁ ১৬ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান জানান, সাইফুল ইসলাম নামে একজন মিসিং হয়েছে এটা নিয়ে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। সাইফুল ইসলাম মারা গিয়েছে কিনা, বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাতে সীমান্তে ফায়ারিং এর শব্দ শোনা গিয়েছিলো, এর প্রেক্ষিতে বিএসএফের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো। তারা আমাদের জানাবে বলে জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৯ মার্চ লালমনিরহাট সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে মুরুলী চন্দ্র (৪৩) নামে এক বাংলাদেশি নিহত হন। কালীগঞ্জ উপজেলার বুড়িরহাট সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে গত ২৫ মার্চ রাতে জেলার আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দীঘলটারী পশ্চিম সীমান্ত এলাকায় ৯২৩ নম্বর পিলারের ভারতের অভ্যন্তরে বিএসএফের গুলিতে লিটন পারভেজ (২২) নামের এক তরুণ আহত হন। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে লিটনের লাশ বাংলাদেশে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।