শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:
চাঁপাইনবাবগঞ্জে মালচিং পদ্ধতিতে নতুন জাতের হলুদ রঙের তরমুজ চাষ শুরু হয়েছে। ইতিপূর্বে কালো তরমুজ চাষ করে সফল হওয়ার পর কৃষক শাহীন আলম এবার চাষ করছেন হলুদ তরমুজ।
জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের নগরপাড়া মাঠে এই তরমুজ চাষ করছেন শাহীন আলম নামে এক কৃষক। তার খেতে গিয়ে দেখা যায়, সবুজ কচি লতাপাতার মাঝে ঝুলছে হলুদ রঙের তরমুজ। ছোট-বড় তরমুজে নুয়ে পড়েছে মাচা। দেখে মনে হচ্ছে ঠিক যেন হলুদের সমারোহ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এসএসসিপি রেঞ্জ প্রকল্পের আওতায় এই সীমান্তবর্তী এলাকায় কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় ৬৬ শতক জমিতে হলুদ তরমুজের চাষ হচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে কৃষক শাহীন আলমকে হলুদ তরমুজ চাষের বিষয়ে প্রশিক্ষণসহ দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেসঙ্গে প্রকল্প থেকে সার, বীজ ও মালচিং পেপার সরবরাহ করা হয়েছে। এই তরমুজের বিশেষত হচ্ছে সাধারণত তরমুজের মৌসুম যখন শেষ হয় তখন অসময়ে এই তরমুজ চাষ করা যায়। এ তরমুজ দেখতে বাইরে হলুদ রঙের কিন্তু ভিতরে লাল টুকটুকে এবং রসে ভরা, খেতে অনেক সুস্বাদু এবং মিষ্টি। বাজারে এই তরমুজের চাহিদা বেশি থাকায় এবং ভালো দাম হওয়ায় এই জাতের তরমুজ চাষ করে কৃষকের ভালো লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের রোকনপুর সীমান্তবর্তী এলাকার নগরপাড়া গ্রামে ৬৬ শতক জমিতে এই হলুদ জাতের তরমুজ চাষ করেছেন কৃষক শাহিন আলম। কৃষি অফিসের পরামর্শে অল্প দিনের মধ্যেই জমির গাছগুলো বেড়ে উঠেছে। জমিতে বেড করে মাটির সঠিক আর্দ্রতা ধরে রাখতে মালচিং পেপার ব্যবহার করা হয়েছে। পুরো ক্ষেতে বাঁশের খুঁটির ওপরে চিকন দড়ি দিয়ে জালের মতো করে বিছিয়ে মাচা তৈরি করা হয়েছে এবং মাচার ওপরে গাছের সবুজ পাতার নিচে ছোট-বড় অনেক পরিপক্ক তরমুজ ঝুলছে।
এ প্রসেঙ্গ কৃষক শাহীন আলম বলেন, আমি এর আগে সিজনাল তরমুজ চাষ করেছিলাম কিন্ত এই ধরনের হলুদ তরমুজ চাষ করিনি। আমার পাশে একজন তরমুজ চাষ করেছিল তার তরমুজ চাষ দেখে আমার আগ্রহ জাগে। পরে কৃষি অফিসার গাণিউল স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং স্যারের পরামর্শেই তরমুজ চাষ শুরু করি। কৃষি অফিস থেকে বীজ, সার ও প্রদর্শনী দিয়েছিল আমাকে। এইবার ৬৬ শতক মাটিতে চাষ করছি। তবে গতবার বর্ষার সময় অল্প করে ১.৫ শতক জমিতে চাষ করেছিলাম এবং ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় তরমুজ বিক্রি করেছিলাম। এবারও যদি সেইরকম দাম পায় তাহলে ৬৬ শতক জমিতে তরমুজ চাষ করে প্রায় ৩ লাখ টাকার মতো আশা করছি। খালি যদি কাঙ্ক্ষিত দাম পাই তাহলে আমার আশা পূরণ হবে।
নূরনবী নামে একজন বলেন, আমি একজন সাধারণ কৃষক। প্রায় আমি এক বছর থেকে তরমুজ চাষ করছি। আজকে শাহীন মামার তরমুজের ক্ষেত দেখতে এসেছি। এখানে আসার পর দেখলাম তরমুজের ভেতর লাল ওপরে হলুদ এবং তরমুজ কেটে খেয়ে দেখলাম অনেক স্বাদ, সুস্বাদ ও মিষ্টি। তাই আমি চিন্তা ভাবনা করেছি আগামীতে এই তরমুজ চাষ করব। এছাড়া অন্যান্য তরমুজের চেয়ে এই তরমুজের দামটা বেশি। ইনশাআল্লাহ সামনে আমি এই তরমুজ চাষ করব।
তরমুজ চাষির ছেলে মেহেদী হাসান বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই দেখছি আমার আব্বা সবুজ তরমুজটাই চাষ করে। কিন্ত এইবার আমি প্রথম দেখলাম আমার আব্বা হলুদ তরমুজ চাষ করছে। এই তরমুজ চাষে কৃষি অফিস থেকে আমার আব্বাকে সহযোগিতা করা হয়েছে। সবুজ তরমুজের চাইতে হলুদ তরমুজের বাজার মূল্য অনেক বেশি এবং ফলনও অনেক বেশি। তাই আশা করি হলুদ জাতের তরমুজ চাষ করে আমার বাবা অনেকটাই লাভবান হবে।
গোমস্তাপুর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গাণিউল ইসলাম বলেন, আমরা এসএসসিপি রেঞ্জ প্রকল্প থেকে আমাদের রেঞ্জভুক্ত চাষি শাহীন আলমকে হলুদ জাতের উচ্চ মূল্য ফসল প্রদর্শনী দিয়েছি। এই প্রকল্প থেকে সার, বীজ ও মালচিং পেপার সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি সার, পানি ও বালাই ব্যবস্থাপনার বিষয়টি আমরা সরাসরি মনিটরিং করি। উনার দেখাদেখি আশপাশের অন্য কৃষক এই ফসল করতে উৎসাহী হবেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. ইয়াসিন আলী বলেন, আমাদের দেশে যে তরমুজগুলো চাষ হয় তার মধ্যে গোল্ডেন ক্রাউন্ট একটি নতুন জাতের তরমুজ। এটি সাধারণত মৌসুম ছাড়া চাষ করা হয়। এটি আকারে একটু ছোট হয় এবং বাইরে থেকে এটি হলুদ রঙের হলেও এর ভেতরটা গোলাপি রংয়ের হয়। এটি খেতেও সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এছাড়া এটি প্রচুর পরিমাণে ধরে এবং অমৌসুমে হয় বলে এর বাজারমূল্য বেশ ভালো পাওয়া যায়। তাই আমাদের যে সমস্ত উদ্যোগী ও ভালো কৃষক আছে তারা প্রদর্শনীর মাধ্যমে ও ব্যক্তিগতভাবেও চাষ শুরু করেছে। আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি এবং পরামর্শ দিচ্ছি। এটার আবাদ ভবিষ্যৎতে যেন সম্প্রসারিত হয়।