চাঁপাইনবাবগঞ্জে শীতকালে ভাপা পিঠা বিক্রি করে দেড় লাখ টাকা আয় করেন মিলন আলি

আপডেট: ডিসেম্বর ৬, ২০২৪, ৫:২২ অপরাহ্ণ


চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:


মো. মিলন আলী (৫৩) বালুবাগান চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার স্থায়ী বাসিন্দা। শীত নামলেই গ্রাহকগণ খোঁজ করেন বালুবাগাানে কখন ভাপা পিঠা তৈরি করবে। নভেম্বরের মধ্যভাগে ভাপা পিঠা তৈরি শুরু করেন তিনি। প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা পর্যন্ত ঘণ্টাকাল অপেক্ষা করে পিঠা খান। বিশেষ করে অনেক নারী পিঠা নেয়ার জন্য অপেক্ষা করেন, চলে রাত ১২ টা পর্যন্ত। এ সিজনে তিনি দেড় লাখ টাকা আয় করে থাকেন।

প্রতিদিন তিনি পাঁচশত পিঠা বিক্রি করে থাকেন। পিঠা তৈরির উপকরণ সমুহ চাল আটা ২৫ কেজি গুড় ৮ কেজি নারিকেল ১৫ টা লকড়ি, ২৫ কেজি ঠোস প্রায় পাঁচশত। চিনেনা চাঁপাইনবাবগঞ্জ এমন কেউ নেই। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধক্ষ্য ড. মাযহারুল ইসলাম বলেন, তাঁর স্ত্রী ও ছেলে মেয়েরা মিলন আলীর ভাপা পিঠা পছন্দ করে।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে এগারো টায় দেখা হোল সালমা আক্তারকে স্বামীসহ দুই ছেলে মেয়ের সাথে। আধাঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন। ওই সময় আরও ২০/ ২৫ জন অপেক্ষা করছেন। একটা ভাপা পিঠার দাম ১৫ টাকা। হেলাল জানান শীত নামলেই তাঁর আয় বেশি হয়। তিনি অন্য সময় আম ও সবজির ব্যাবসা করে থাকেন।

এদিকে শীতকাল মানেই হল পিঠার সময়। পিঠা বাঙালি সংস্কৃতির এক অন্যতম উপাদান। গ্রামীণ সংস্কৃতির এক অনবদ্য অংশ। বাড়িতে বাড়িতে চলে পিঠা=উৎসব। যদিও এখন শুধু গ্রাম নয়, শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে পিঠা উৎসব। শীত এলেই রাস্তার পাশে নারী-পুরুষসহ সব বয়সীদের ভাপা পিঠাসহ নানান পিঠা খাওয়ার ধূম পড়ে।

দেখা যায়, সকাল আর বিকেল শহরের বিভিন্ন স্থানে স্থানে ছোট ছোট পিঠার দোকান সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। অনেকে আবার বাড়তি আয় হিসেবে বসে পিঠা বিক্রির দোকান নিয়ে। বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বেচা-বিক্রি বেশ ভালোই। অনেকেই শীত মৌসুমে পিঠা বিক্রিকে বেছে নিয়েছেন পেশা হিসেবে। সকাল আর সন্ধ্যার পরপরই ভাপা পিঠা বিক্রির দোকানগুলোতে পিঠার স্বাদ নিতে ভিড় করেন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ।

জেলা শহরের বিভিন্ন মোড়ে এবং মহল্লায় ভ্রাম্যমাণ দোকানে গ্যাসের চুলা ও মাটির চুলায় তৈরি হচ্ছে নানান ধরনের পিঠা। এরমধ্যে রয়েছে ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা ও ডিম চিতই। একেক ধরনের পিঠার দাম একেক রকম। ভাপা পিঠা ১৫ টাকায়, নরমাল চিতই পিঠা ১০ টাকা, ডিম-চিতই ২৫ টাকায় বিক্রি করছে। এর সাথে ভোজনবিলাসীদের স্বাদ বাড়াতে বিভিন্ন ভর্তা ও মুরগির লটপটি রয়েছে, সেগুলোর দাম ৫ টাকা ও ২০ টাকা।

আর এসব রসনায় অনেকেই ভিড় করেন দোকানগুলোতে। ক্রেতারা সেখানেই দাঁড়িয়ে বা বসে খাচ্ছেন। আবার অনেকেই প্যাকেটে করে বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। ভাপা পিঠা তৈরির উপকরণ বিষয়ে হুজরাপুর মোড়ের বেদানা বেগম বলেন, চালের গুড়া, কোরানো নারকেল, গুড় ও কুলি পিঠাতে লাগে প্রায় একই উপকরণ। ভাপা পিঠা তৈরির চালের গুড়া মানসম্মত ও সব কিছুতে পরিমাণমত না হলে পিঠার স্বাদ লাগবে না।

এদিকে গ্রামাঞ্চলের বাড়িতে বাড়িতে ধুম পড়ে যায় হরেক রকমের পিঠা বানানোর। সকাল বা সন্ধ্যায় নারীরা চুলোর পাশে বসে দুধ-পুলি, তেলপুয়া পিঠাসহ নানান পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এসময় আত্মীয় স্বজনরা বেড়াতে আসলে তাদের পিঠা-পুলি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। এছাড়া শহরের পিঠা কেনাবেচা হয় পুরো শীতকাল জুড়েই।

জেলা শহরের পুরাতন বাজার, স্কুল-কলেজ রোড, ওয়ালটন রোড, শিবতলা মোড়, হুজরাপুর মোড়, বাতেন খাঁ মোড়, বিশ্বরোড মোড়সহ বিভিন্ন মহল্লার অলিগলিতে চোখে পড়ে অস্থায়ী পিঠার দোকান। শীত আসলেই এসব দোকান বসে তারা বাড়তি রোজগার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।

জুস বাড়ি নামে পিঠা বিক্রেতা সজল জানান, প্রতিদিন বিকেলে ভ্যানে করে রাস্তার পাশে গরম গরম নরমাল চিতই পিঠা-ডিম-চিতই পিঠা বানিয়ে বিক্রি করা হয়। ক্রেতাদের আগমনও ঘটে অনেক, ফলে চাহিদানুযায়ী বানানো হয়ে থাকে। ক্রেতারা আবার প্যাকেটে করে নিয়ে যায়।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ