মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১১ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
চাঁপইনবাবগঞ্জ অফিস
চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের আসন্ন নির্বাচনের জন্য প্রকাশিত খসড়া তালিকায় ‘ভুয়া’ ভোটারের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আপত্তি আনায় আপিল বোর্ডের তিন সদস্য পদত্যাগ করেছেন।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় চেম্বারের নির্বাচন কমিশনের আপিল বোর্ড জানায়, ১৩ জন ভোটারদের বিষয়ে আপত্তির তদন্তে ১০ জনই ‘অবৈধ’ বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে চেম্বারের সাধারণ সদস্যদের অভিযোগ, প্রকাশিত খসড়া তালিকার চার শতাধিক সদস্যই ভুয়া ভোটার। একটি মহল নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে অবৈধভাবে এসব ভুয়া ভোটারকে তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করছে। এদিকে ভোটার তালিকা নিয়ে আপত্তির নিষ্পত্তি না করেই পদত্যাগ করেছেন আপিল বোর্ডের তিন সদস্য। এর ফলে অনিশ্চিয়তায় পড়েছে চেম্বারের নির্বাচন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগামী ১৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন। এরই মধ্যে নির্বাচনের জন্য খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত তালিকা মোট ভোটার রয়েছে ৮৯১ জন। খসড়া তালিকা প্রকাশের পরই চেম্বারের সদস্য ও রাবেয়া জুট মিলের সত্ত্বাধিকারী রেজাউল করিম ১৩ জন সদস্যকে ‘ভুয়া’ আখ্যায়িত করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কাছে লিখিত আপত্তি জানান। এছাড়া সোনামসজিদ ট্রোডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী সৈবুর রহমান আরো ১১ সদস্যের ব্যাপারে আপত্তি জানান। পরবর্তীতে চেম্বারের সদস্য ও এসআর এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম খসড়া ভোটার তালিকায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলে পুরো ভোটার তালিকা যাচাইয়ের জন্য লিখিত আবেদন করেন। কিন্তু রেজাউল করীমের আপত্তি আমলে নিয়ে বুধবার বিকেলে শুনানি করে আপিল বিভাগ বোর্ড। শুনানিতে ১৩ জনের মধ্যে ১০ জনই ‘অবৈধ’ বলে প্রমাণিত হয়। বাকীদের আপত্তি নিয়ে শুনানি হওয়ার আগেই আপিল বোর্ডের তিন সদস্য অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা, অ্যাডভোকেট শাহজাহান হোসেন, শেখ শামসুল ইসলাম টিপু পদত্যাগ করেন।
এ ব্যাপারে আপীল বোর্ডের প্রধান অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা জানান, সব সদস্যের ব্যাপারে যে আপত্তি তোলা হয়েছে তা যাচাই-বাছাই করা করা সম্ভব নয়। উদ্ভুত পরিস্থিতি এড়াতেই তারা পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগের কপি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব এর কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে চেম্বারের সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, ৮৯১ জন ভোটারের মধ্যে চার শতাধিক অবৈধ ভোটার রয়েছে খসড়া তালিকায়। এদের বেশিরভাগকেই খসড়া তালিকায় দেখানো হয়েছে ধান-চাল ব্যবসায়ী হিসেবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এদের কেউ কাপড় ব্যবসায়ী, কেউ টেইলারের মালিক আবার কেউ জুতার ব্যবসায়ী। ঝিলিম ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স ‘ম্যানেজ’ করে এদের সদস্য করা হয়েছে। কিন্তু তাদের বৈধ টিন নম্বর বা চেম্বারের সদস্য হওয়ার অন্য যোগ্যতা নেই। এমনকি ভোটার তালিকায় তাদের যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে সেটাও ভুয়া। তাদের কারো বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় নয়। ক্ষমতা কুিক্ষগত করে রাখতে চেম্বারের বর্তমান সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ অবৈধ পন্থায় এবং নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগসাজস করে এসব ভুয়া ভোটারকে খসড়া তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছেন।
চেম্বার সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সদস্যদের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। নির্বাচন বানচাল করতেই কতিপয় সদস্য এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট সোলায়মান বিশু কুয়েতে অবস্থান করায় এ ব্যাপারে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয় নি। তবে সহকারী কমিশনার অ্যাডভোকেট আবদুল ওদুদ জানান, নির্বাচনের তফশীল অনুযায়ী ১২ নভেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করার নির্ধারিত দিন। যদি ভোটার তালিকা নিয়ে কারো কোনো ওজর-আপত্তি থাকে তবে তার আগেই তালিকা সংশোধন করা হবে। তালিকা নিয়ে ভোটারদের আপত্তি, হঠাৎ করেই আপিল বোর্ডের পদত্যাগ সব মিলিয়ে চেম্বারের নির্বাচন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ল কি-না এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। নির্বাচন কমিশনার এরইমধ্যে বিষয়টি জেনেছেন। আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে কমিশন’।