চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারে বিশৃঙ্খলা অবস্থা

আপডেট: জুন ১, ২০২৪, ৮:৩৯ অপরাহ্ণ


চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:


চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের দু’বছর মেয়াদি বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব নিয়েছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। নির্বাচিত কমিটির দায়িত্ব গ্রহণের দেড় বছর পর অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে নতুন করে আলোচনায় ব্যবসায়ী সংগঠনটি। তবে এই সংগঠনটিতে বিতর্ক-বিশৃঙ্খলা নতুন ঘটনা নয়। বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে সহযোগী সদস্যদের পদ নবায়ন না করা, নতুন সদস্য নেয়ায় স্বজনপ্রীতি, আয়-ব্যয়ের হিসাব উপস্থাপন না করার অভিযোগ তোলা হয়েছে। গত নির্বাচনে বর্তমান পরিষদের সঙ্গে প্রতিদন্ধিতাকারী পরাজিত প্যানেলের আট জন পরিচালক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসককে অভিযোগটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

অপরদিকে, আগের কমিটির বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে ৬৫ জনকে সহযোগী সদস্য পদে অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। সংগঠনটির তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে তার প্রমাণ মিলেছে। পরে তাদের সহযোগী নয়, ‘সাধারণ সদস্য’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়। সম্প্রতি চেম্বার ভবনের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ। সংবাদ সম্মেলনে চেম্বার সভাপতির দাবিÑ নির্বাচনে পরাজিত প্যানেলের সদস্যরা চেম্বার অব কমার্সকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। এ বিষয়ে চেম্বারের প্রভাবশালী সদস্য ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রাইয়ানুল হক লুনা জানান, বর্তমান সভাপতি ভুল বাখ্যা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, গঠনতন্ত্র মেনে বোড মিটিং ও রেজুলেশন এর মাধ্যমে ৬৫ জনকে একসাথে সহযোগী সদস্য বৈধভাবে করা হয়েছে। তাদের প্রশ্ন তোলা অযৌক্তিক। তিনি আরও বলেন বর্তমান সভাপতি নিজেদের মাত্র ২৮ জন কে সহযোগী সদস্য করে, নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের সহ-সভাপতি আখতারুল ইসলাম রিমন বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ক্ষুদ্র, কুটির শিল্প ও খুচরা ব্যবসায়ীরা সহযোগী সদস্য হবেন। কিন্তু সেই বিধি উপেক্ষা করে আগের কমিটি বড় বড় ব্যবসায়ীদের সহযোগী সদস্য অর্ন্তভূক্ত করে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে তাদের সাধারণ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করা হয়। কিন্তু এটা নিয়ে গত নির্বাচনে পরাজিত ব্যবসায়ী নেতারা অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি আরও বলেনÑ আমাদের পরিচয়, আমরা ব্যবসায়ী। বেসরকারি খাতের সুরক্ষা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জকে সমৃদ্ধ করতে আমরা একসঙ্গে কাজ করার কথা। কিন্তু এ সংগঠনটির নেতৃত্বে আসতে একটি পক্ষ যে বিতর্কিত পথ অনুসরণ করছে তা মোটেও প্রত্যাশিত নয়।

জানা গেছে, ২০১৬-১৮ মেয়াদে বর্তমান কমিটির সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদের সমর্থন নিয়ে প্রথমবারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন শিল্পপতি মো. এরফান আলী। দুই বছরের জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর নানা কৌশলে ৫ বছর ৯ মাস নেতৃত্ব আঁকড়ে রাখার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নানা অভিযোগে ওই বছরের ৩ জানুয়ারি এরফান আলীর নেতৃত্বাধীন কার্যনির্বাহী পরিষদকে বাতিল করে এফবিসিসিআই’র ট্রাইব্যুনাল। পরে বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়াই। ব্যবসায়ীদের ‘মিনি পার্লামেন্ট’ খ্যাত এই সংগঠনটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। উচ্চ আদালতের আদেশের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে সংগঠনটির প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়। প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এই সংগঠনটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে জয়লাভ করে সম্মিলিত ব্যবসায়ী স্বার্থ উন্নয়ন ফোরাম। ১০ম বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন আব্দুল ওয়াহেদ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের পরিচালক ও এফবিসিসিআইয়ের স্ট্যাডিং কমিটির চেয়ারম্যান মো. মাহবুব আলম সিআইপি বলেন, চেম্বারের বর্তমান সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কাজ করছেন। তার ভবিষ্যৎ অভিপ্রায় চেম্বারে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। এ জন্য গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা না করে নিজের পছন্দের ব্যবসায়ীদের সদস্য করছেন। আবার ঘনিষ্ঠ না হওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্বনামধন্য ব্যবসায়ীদের নানা অজুহাতে সদস্য করছেন না। ব্যবসায়ীদের অসংখ্য আবেদন চেম্বারে পড়ে আছে। এগুলো নিয়ে আমরা ৮ জন পরিচালক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছি। মন্ত্রণালয় জেলা প্রশাসককে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

সহযোগী সদস্যদের নিয়ে জটিলতার বিষয়ে মাহবুব আলম বলেন, আগের পরিচালনা পর্ষদ যথাযথ নিয়ম মেনে বোর্ড রেজুলেশনের মাধ্যমে তাদের সহযোগী সদস্য পদে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এখন প্রশ্ন তোলা অযৌক্তিক। আব্দুল ওয়াহেদের অভিপ্রায় আমাদের যারা ভোট দিয়েছে তাদের সদস্যপদ বাতিল করা। যাতে তিনি (আব্দুল ওয়াহেদ) ছাড়া ভবিষ্যতে আর কেউ চেম্বারের নেতৃত্বে আসতে না পারেন।

চেম্বার সভাপতি মো. আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, গত নির্বাচনে পরাজিতরা চেম্বারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে নানান অপপ্রচার চালাচ্ছেন। প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন। চেম্বারের তৎকালীন সভাপতি মো. এরফান আলী চেম্বারকে তার দখলে রাখার জন্য গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা না করে ৬৫ জনকে অবৈধভাবে সহযোগী সদস্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করেন। এ ঘটনায় বর্তমান পরিষদ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাদের চেম্বারের সাধারণ সদস্য হিসেবে রাখার সুপারিশ করা হয়। অন্য অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, সবই অপপ্রচার। এদিকে গত ২৯ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অ্যান্ড কমার্স এর সভাপতি আব্দুল ওয়ায়েদ এর অনিয়ম ও স্বেচ্ছাতারিতার বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীরা গণমিছিল ও মানববন্ধন করেছে। বক্তারা সুষ্ঠু তদন্তের দাবী জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন ব্যবসায়ী জানান, দীর্ঘদিন ধরে এ প্রতিষ্ঠানটি কে আব্দুল ওয়াহেদ পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন।

এমন কী তার বড় ভাই কে সভাপতি পর্যন্ত করেছিলেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তাঁরা বলেন ইদের আগে ব্যবসায়ীদের নিয়ে সকল পণ্যের সঠিক দাম নেয়া হবে। এতে কাজের কাজ কিছুই হয় না, বরং ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধি করে। পরবর্তীতে প্রশাসনের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ মোবাইল কোট পরিচালনা করলে মূল্য সহনশীল পর্যায়ে আসে। এ প্রতিঠান থাকা না থাকা সমান। প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সদস্য করে এ প্রতিষ্ঠান চালানো উচিত।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ